ছবি: সংগৃহীত।
বড়দিনের মহানগর। তার উপর শীতের কনকনানি একটু কম। ফলে সাত সকালেই ঘুমের মায়া কাটিয়ে সেলিব্রেশনের মুডে নগরবাসী। কফি-কেকে কামড় দিতে দিতেই ট্রেন-বাস-ট্যাক্সি-মেট্রো কিংবা প্রাইভেট গাড়ি বোঝাই। তার পর হুড়মুড়িয়ে শাল-সোয়েটার-কোট-জ্যাকেটের নেমে পড়া প্রিয় এবং পছন্দের গন্তব্যে। সেই ভিড়ে বড়দের পায়ে পায়ে জড়িয়ে থাকা ছোট ছোট পা। দু’শো মজার দেড়শো ভাগ তাদেরই। কেউ চিড়িয়াখানার হাতি-বাঘ-সিংহ দেখে উৎফুল্ল তো কারও পছন্দ নিকোপার্কের রাইড। কলকাতাও প্রস্তুত ছিল তার শীতের গন্তব্যের ডালি নিয়ে। ইকো পার্ক থেকে শুরু করে সায়েন্স সিটি, জাদুঘর, মাদার ওয়াক্স মিউজিয়ামের সঙ্গে সঙ্গে আলিপুর জেল চত্বরে তৈরি হওয়া মিউজিয়ামও। তবে কার দর কত বেশি, তার বিচার হয় ভিড়ে (সে রাজনৈতিক নেতার সভা হোক বা মনোরঞ্জন ক্ষেত্র)। ভিড় মিটারে কে কাকে টেক্কা দিল, কেই বা আগের বারের হারের বদলা নিল তার মার্কশিট বানাল আনন্দবাজার অনলাইন।
গত বারের সঙ্গে তুলনা করলে অবশ্য এ বারের বড়দিনে একটা জিনিস স্পষ্ট এ বারের শীতে সার্বিক ভিড়ই কিছুটা কম। ২০২২ সালের বড় দিনে যেখানে চিড়িয়াখানা, ইকো পার্কে লাখ ছুঁই ছুঁই জনজোয়ার, এ বছর সেখানে সর্বোচ্চ ভিড়ের মাত্রা কোনও মতে ৬০ হাজার পার করেই থমকেছে। তাতে অবশ্য কলকাতার শীত-গন্তব্যের রথী-মহারথীদের ভিড়-যুদ্ধে টান পড়েনি। লোক টানার ক্ষেত্রে কারও জোর আগের থেকে কমেছে তো কেউ গত বারের চ্যাম্পিয়নকে মাত দিয়েছে!
ভিড় গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কমেছে ভারতীয় জাদুঘর এবং আলিপুর মিউজিয়ামে। গত বড়দিনে জাদুঘরে ১১ হাজার এবং আলিপুর জেল মিউজিয়ামে ১৪ হাজার মানুষের ভিড় হয়েছিল। এ বার তা কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে সাত হাজার এবং সাত হাজার ৮৭৯তে। অন্য দিকে সায়েন্স সিটিতে বেড়েছে শীতকালীন পর্যটকদের ভিড়। গত বারের ২২ হাজার ৫০০ থেকে বেড়ে এ বছর বড়দিনে সায়েন্স সিটির ভিড়মিটার ঊর্ধ্বমুখী। সোমবার সায়েন্স সিটিতে ২৫ হাজার ৪০০ মানুষের ভিড় হয়েছে।
তবে ভিড় যুদ্ধের ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফি’ নিয়ে এ বার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে গত বারের জয়ী এবং দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর মধ্যে।
গত বার সেরার মুকুট উঠেছিল ইকো পার্কের মাথায়। ২০২২-এর ২৫ ডিসেম্বর ইকো পার্কে এসেছিলেন ৯১ হাজার ১৩৬ জন দর্শনার্থী। শীতের রোদ গায়ে মেখে একই গন্তব্যে পৌঁছে সপ্তম আশ্চর্য ভ্রমণের আমেজ যদি পাওয়া যায়, তবে সেই সুযোগ ছাড়ে কে! কিন্তু এ বছর দেখা গেল সেই আকর্ষণ কিছুটা ফিকে। বড়দিনে ইকো পার্কে ভিড় জমেছে ৫৭,৬০৩ মানুষের। যা গত বারের অর্ধেকের কিছু বেশি।
অন্য দিকে, শীতের বেড়ানোর অমোঘ আকর্ষণ চিড়িয়াখানা গত বছর মাত খেয়েছিল ইকো পার্কের কাছে। গত বড়দিনে ৮৭,৩৭৩ মানুষের ভিড় হয়েছিল আলিপুরের পশু উদ্যানে। এ বছর সেই ভিড় কিছুটা কমলেও দেখা যাচ্ছে আলিপুরের হারানো গৌরব ফিরেছে। ভিড় যুদ্ধে ইকো পার্ককে টেক্কা দিয়ে গত বারের বদলা নিয়েছে চিড়িয়াখানা। এ বারের বড়দিনে সে-ই ভিড়ের রাজা।