Aparajita Bill 2024

‘টেকনিক্যাল রিপোর্ট’ কী? তাতে কী থাকে? রাজ্যের ‘অপরাজিতা বিল’ নিয়ে রাজভবনে জটিলতা কেন?

নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হওয়ার পর যে কোনও বিল রাজভবনে পাঠানো হয়। সেই বিলে রাজ্যপাল স্বাক্ষর করলে তা আইনে পরিণত হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে বিলটি নিয়ে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৪০
‘অপরাজিতা বিল’ নিয়ে রাজ্যের আচরণে সন্তুষ্ট নন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

‘অপরাজিতা বিল’ নিয়ে রাজ্যের আচরণে সন্তুষ্ট নন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —প্রতীকী চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণ-বিরোধী বিল নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে রাজভবনে। ঘনিষ্ঠ মহলে ওই বিল নিয়ে রাজ্য সরকারের আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজভবনের এক আধিকারিক সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, বিধানসভায় পাশ হওয়ার পর ধর্ষণ-বিরোধী বিল বা ‘অপরাজিতা বিল’ নিয়ম অনুযায়ী রাজভবনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ওই বিলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ‘টেকনিক্যাল রিপোর্ট’ পাঠায়নি রাজ্য। যা না পেলে কোনও বিলে রাজ্যপাল সম্মতি দিতে পারেন না।

Advertisement

কী এই ‘টেকনিক্যাল রিপোর্ট’? কেন তা না পেলে বিলে রাজ্যপালের সম্মতি আটকে যায়?

নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হওয়ার পর যে কোনও বিল রাজভবনে পাঠানো হয়। সেই বিলে রাজ্যপাল স্বাক্ষর করলে তা আইনে পরিণত হয়। বিল নিয়ে রাজ্যপাল যদি কোনও সিদ্ধান্তে আসতে না পারেন বা তাঁর যদি কোনও পরামর্শের প্রয়োজন হয়, তবে তা তিনি পাঠিয়ে দেন রাষ্ট্রপতির কাছে। সেই বিলের ক্ষেত্রে তখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন রাষ্ট্রপতিই। গত ৩ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ‘অপরাজিতা বিল’ পাশ হওয়ার পর তা রাজভবনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, এই বিলের ‘টেকনিক্যাল রিপোর্ট’ এখনও হাতে পাননি রাজ্যপাল। বস্তুত, রাজ্যের যে কোনও বিল নিয়েই প্রশ্ন তুলতে পারেন রাজ্যপাল। কোনও বিল কেন আনা হয়েছে, কী ভাবে আনা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত একটি রিপোর্ট বিলের সঙ্গেই জমা দিতে হয়। তাকে বলে ‘টেকনিক্যাল রিপোর্ট’। ওই বিল কার্যকর করতে রাজ্যের উপর কতটা আর্থিক দায় বর্তাবে, রাজ্যের তহবিল থেকে কত খরচ হতে পারে, তা-ও রিপোর্টে উল্লেখ করা থাকে। এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় আইন ব্যবস্থার সঙ্গে রাজ্যের আনা ওই বিলের সাযুজ্য কতটা, তা বিস্তারিত জানাতে হয়। ‘অপরাজিতা বিল’ নিয়েও এই সংক্রান্ত তথ্যগুলিই রাজ্যপাল জানতে চান বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে কোনও বিলের ক্ষেত্রেই রাজ্য এবং রাজ্যপাল সংঘাতের অন্যতম কারণ এই ‘টেকনিক্যাল রিপোর্ট’। কোনও ক্ষেত্রেই এই রিপোর্ট রাজ্য পাঠায় না বলে অভিযোগ। তাই বিলে সম্মতি দিতে পারেন না রাজ্যপাল। অথচ, রাজ্যের তরফে বার বার অভিযোগ করা হয়, রাজ্যপাল বিল আটকে রাখেন। ঘনিষ্ঠ মহলে এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। ‘অপরাজিতা বিল’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও একই ঘটনা কী করে ঘটল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজভবন এখনও এ বিষয়ে বিধানসভার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। যদি বিধানসভার সঙ্গে আলোচনা করা হয়, তবেই আমি এ বিষয়ে আমার মতামত জানাব।’’ অন্য দিকে, এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বক্তব্য, ‘অপরাজিতা বিল’ স্পিকার রাজভবনে পাঠিয়েছেন। তাই বিষয়টিও তিনিই বুঝে নেবেন।

উল্লেখ্য, ধর্ষণ-বিরোধী বিল পাশের পর তা নিয়ে বৃহস্পতিবার নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। বিলটি বিধানসভায় পাশ করার সময়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, তাঁরা এই বিল সমর্থন করছেন। কিন্তু বিল কার্যকর করার দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য সরকারকেই। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এই বিল কার্যকর করার বিষয়ে এখন থেকেই অনুশীলন শুরু করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে রাজ্য সরকার। তবে তার আগে রাজভবনের সম্মতি ঘিরে তৈরি হয়েছে জটিলতা।

আরও পড়ুন
Advertisement