—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
রাজ্যে ধর্ষণের বিচার হবে আরও দ্রুত। সাজা হবে আরও কঠিন। ‘অপরাজিতা মহিলা এবং শিশু (পশ্চিমবঙ্গ অপরাধ আইন সংশোধনী) বিল ২০২৪’-এ এই প্রস্তাবই দিয়েছে রাজ্য সরকার। খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় এ রাজ্যে আরও কঠিন সাজার বন্দোবস্ত করার জন্য মঙ্গলবার বিধানসভায় নতুন সংশোধনী বিল আনতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সেই বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হলে ধর্ষণের সাজা হবে জরিমানা-সহ যাবজ্জীবন কারাবাস, নয়তো মৃত্যু।
আরজি কর-কাণ্ডের আবহে বেশ কিছু দিন ধরেই বিভিন্ন মহল থেকে ধর্ষণ, মহিলা নির্যাতন রুখতে কড়া আইন আনার দাবি উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা কেন্দ্রের কাছে এই বিষয়ে কড়া আইন আনার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও দিয়েছিলেন। এ বার রাজ্য বিধানসভায় সংশোধনী বিল আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। কী রয়েছে সেই বিলে? ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারায় ধর্ষণের সাজা অন্তত ১০ বছর কারাদণ্ড, যা যাবজ্জীবনও হতে পারে। সঙ্গে জরিমানার বিধান রয়েছে। রাজ্যের সংশোধনী বিলে ধর্ষণের সাজা আমৃত্যু কারাদণ্ড। সঙ্গে জরিমানা। এমনকি, মৃত্যুদণ্ডও। বিলে আরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, জরিমানার টাকায় নির্যাতিতার চিকিৎসা, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ আদালতের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেই জরিমানার টাকা দিতে হবে, যেমনটা ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর ৪৬১ ধারায় উল্লেখ করা রয়েছে।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৫ ধারা মুছে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে ‘অপরাজিতা মহিলা এবং শিশু (পশ্চিমবঙ্গ অপরাধ আইন সংশোধনী) বিল ২০২৪’-এ। ওই ধারায় ধর্ষণের কিছু মামলায় সাজার উল্লেখ রয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৬, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ১২৪ ধারাতেও বদল আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বিলে।
ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর আইনে নতুন ধারা যোগের প্রস্তাবও আনা হয়েছে বিলে। ৪৬ নম্বর ধারার ৩এ উপধারায় নতুন ধারা যোগ করে ‘বিশেষ আদালত’ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। প্রতি জেলায় তৈরি করতে হবে এই আদালত, যেখানে ধর্ষণের মামলার বিচার হবে। বিচার করবেন রাজ্যের দায়রা বিচারক বা অতিরিক্ত দায়রা বিচারক। কলকাতা হাই কোর্টের সম্মতি নিয়েই চলবে বিচার। সরকার নির্যাতিতার হয়ে মামলা লড়ার বিশেষ কৌঁসুলি (স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর) নিয়োগ করবে। সেই কৌঁসুলির কম পক্ষে সাত বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
৪৬ নম্বর ধারার ৩বি উপধারায় নতুন ধারা যোগ করে জেলা স্তরে ‘বিশেষ টাস্ক ফোর্স’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। সরকারের গঠন করা সেই বাহিনীর নাম হবে ‘অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স’। মাথায় থাকবেন ডেপুটি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনও আধিকারিক। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ধর্ষণের মামলার যতটা সম্ভব তদন্ত করবেন মহিলা অফিসারেরা। তদন্তে কোনও সরকারি আধিকারিক বা কারও সাহায্য চাওয়া হলে, তাঁকে দ্রুত তা করতে হবে। তদন্তে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরি করাতে চাইলে তাঁরও ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার পর্যন্ত সাজা হবে।
ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর ১৯৩ ধারা সংশোধনেরও প্রস্তাব রয়েছে বিলে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, থানার ওসি (অফিসার ইন চার্জ)-কে এফআইআর দায়েরের দু’মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। রাজ্য সরকার সেই তদন্ত এফআইআর দায়েরের ২১ দিনের মধ্যে শেষ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তার মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে আরও ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। তবে তার বেশি নয়। যদি না পারে সে ক্ষেত্রে এসপি পদমর্যাদার অফিসারের নেতৃত্বে অতিরিক্ত ১৫ দিনের সময় দেওয়া হবে তদন্তের জন্য। বিলে আরও প্রস্তাব, চার্জশিট জমা দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে বিচার।