Reclaim the night

মেয়েদের রাত দখল: পথে থাকবে বাড়তি পুলিশ, তবে আন্দোলন প্রতিহত করতে নয়, বরং মহিলাদের সুরক্ষায়

বুধ-রাতে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মূলত মহিলারা পথে নামছেন। আরজি কর-কাণ্ডের জেরে এই কর্মসূচি নিয়ে প্রস্তুত পুলিশও। বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি বাহিনী মোতায়েন করছে পুলিশ-প্রশাসন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৪ ১৯:২১
West Bengal Police planning for security to women who will join in reclaim the night programme

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বুধবার মধ্যরাতে জমায়েত। শুধু কলকাতা নয়, আন্দোলনের ঝাঁজ দেখা যাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। অন্তত শহর, শহরতলি এবং জেলায় জেলায় প্রস্তুতি তেমনই। সেই কারণে কলকাতা এবং রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি বাহিনী মোতায়েন করছে পুলিশ-প্রশাসন। তবে তা আন্দোলন ‘দমন’ করতে বা ‘প্রতিহত’ করতে নয়। উল্টে মহিলাদের ‘সুরক্ষা’ দিতে। জমায়েত যাতে ‘শান্তিপূর্ণ হয়, ‘রাত দখল’ কর্মসূচির রাত যাতে নিরাপদ হয়, তা নিশ্চিত করতে। যোগদানকারীদের নিরাপত্তাকেই প্রাধান্য দিতে চায় পুলিশ।

Advertisement

ওই আন্দোলনের জন্য কোথায় কত বাহিনী মোতায়েন করা হবে, তা নিয়ে কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্যপুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠকও হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ওই বৈঠকের পরে নির্দেশ দিয়েছেন, সর্বত্র যথেষ্ট পরিমাণে মহিলা পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। কোন রকম অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সেটা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ডিজি নির্দেশ দিয়েছেন, পুলিশ যেন জমায়েতকারীদের সঙ্গে সযোগিতার পরিবেশ বজায় রাখে।

রাজ্যপুলিশের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, ‘‘রাতে যাঁরা রাস্তায় থাকবেন, তাঁদের কোথাও আটকে দেওয়া পরিকল্পনা নেই। তবে জমায়েত বেশি হলে পুলিশ যেমন নজর রাখে বা কোথাও কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা না-ঘটে, সেটাই নজরে রাখবে পুলিশ।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতা শহরের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি ডিভিশনে ডিসি পদমর্যাদার এক জন এবং এসি পদমর্যাদার এক জন অফিসার থাকেন। বুধবার, ১৫ অগস্টের আগের রাতের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা রাখা হবে। টহলদারিও চলবে। বিভিন্ন থানার সিনিয়র অফিসারেরাও থাকবেন।

মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্ট আরজি কর-কান্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই অবস্থায় বুধবার রাতে মহিলাদের কর্মসূচি ‘নিরাপদ’ করাও পুলিশের কাছে চ্যালেঞ্জ। কোথাও কোনও বিশৃঙ্খলা হলে তার দায় আসতে পারে পুলিশের উপরেই। সে কারণেও ‘সতর্ক’ পুলিশ।

আরজি কর-কান্ডের প্রতিবাদে স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে ১১টা ৫৫ থেকে ‘মেয়েদের রাত দখল’ নামে ওই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। ফেসবুকে রিমঝিম সিংহ নামে প্রেসিডেন্সির এক প্রাক্তন ছাত্রী এবং অধুনা গবেষকের একটি পোস্ট থেকে যার সূত্রপাত। ক্রমে ক্রমে তা বড় আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। কলকাতার প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেই জমায়েত হবে। প্রাথমিক ভাবে কলেজ স্ট্রিট, যাদবপুর এইটবি বাস স্ট্যান্ড এবং অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস চত্বরে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল। তার পরে তা ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার বিভিন্ন এলাকা এবং বৃহত্তর কলকাতায়। সে সব জায়গায় অতিরিক্ত বাহিনী রাখার পাশাপাশি পুলিশ শহরের বাকি এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তুতিও রাখছে। রাজারহাটের বিশ্ব বাংলা গেট, সল্টলেকের বিভিন্ন এলাকাতেও বাড়তি বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি টহল চালাবে পুলিশ।

প্রথমে কলকাতা কেন্দ্রিক ‘প্রতীকী’ জমায়েতের আহ্বান থাকলেও এখন সেই ডাক উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই। তাতে সাড়া দিয়ে অনেক জায়গাতেই বড় জমায়েত হতে পারে বলে পুলিশের অনুমান। যে হেতু কোনও নির্দিষ্ট সংগঠনের ডাকে এই কর্মসূচি নয় এবং রাজনৈতিক ঝান্ডা-রহিত এই জমায়েত, তাই জমায়েতের স্থান ও আকার নিয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ। এখনও পর্যন্ত সমাজমাধ্যমে পাওয়া তথ্য এবং থানা স্তরে পুলিশের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

কোনও ক্ষেত্রে যাতে কোনও ‘বিরূপ বা অপ্রাীতিকর’ পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে জন্য কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের সব থানাকে পুলিশের শীর্ষমহল থেকে সতর্ক করা হয়েছে বলেও খবর। ঘোষণা অনুযায়ী ‘অরাজনৈতিক’ কর্মসূচি হলেও অনেক রাজনৈতিক দলের কর্মী পথে নামতে পারেন। রাজনৈতিক মতবিরোধ থেকেও কোথাও কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সে দিকেও পুলিশকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement