(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়এবং সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।
‘ইন্ডিয়া’র জোড়া বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে সীতারাম ইয়েচুরির উপস্থিতি যে রাজ্যের নিচুতলার কর্মীরা ভাল ভাবে নেননি, তা কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে স্পষ্ট করে দিলেন বাংলার সিপিএম নেতারা। শুক্রবার থেকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে দিল্লিতে। শনিবার বাংলার চার নেতা সুজন চক্রবর্তী, অমিয় পাত্র, আভাস রায়চৌধুরী এবং রবীন দেব তাঁদের বক্তব্য জানান। সূত্রের খবর, চার নেতাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নিচুতলার কর্মী-সমর্থকেরা এ নিয়ে সমালোচনায় সরব।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলার নেতারা বলেছেন, সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে ইন্ডিয়ার বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি না-গেলে দলের ব্যাপারে সার্বিক ভাবে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হত। অনেকে মনে করতেন, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইকে গুরুত্ব না দিয়ে সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রাজ্যের প্রেক্ষাপট দেখা হচ্ছে। কিন্তু ইয়েচুরি ওই বৈঠকে যাওয়ায় রাজ্যের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তা ওই বৈঠকে খোলাখুলি বলেছেন বাংলার নেতারা।
বৈঠকে যোগ দেওয়া বাংলার এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বলেন, “সমর্থকদের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা প্রশমন করতে আমাদেরই ভূমিকা নিতে হবে। কিন্তু পার্টি যে বিড়ম্বনায় পড়েছে তাতে সন্দেহ নেই৷” সূত্রের খবর, কংগ্রেসের সঙ্গে ‘সখ্য’ নিয়ে সিপিএমের কেরল রাজ্য কমিটিও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, আনন্দবাজার অনলাইনে আগেই লেখা হয়েছিল, ‘ইন্ডিয়া’ কী এবং কেন, তা বোঝানোর জন্য আলিমুদ্দিন স্ট্রিট বিশেষ কর্মসূচি নেবে। বাস্তবেও সেটিই হয়েছে। আগামী ১৩ অগস্ট রাজ্য জুড়ে ‘পাঠচক্র’ করবে সিপিএম। সেখানে ১৩ পাতার নোট পড়িয়ে দলীয় সদস্যদের বোঝানো হবে, গত পার্টি কংগ্রেসের লাইন অনুযায়ীই চলবে দল। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, বাংলায় লড়াই বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়ের বিরুদ্ধেই।
ঘটনাচক্রে, শনিবার ছিল ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ার অন্যতম কারিগর মুজ্ফফর আহমেদ (কাকাবাবু)-এর ১৩৫তম জন্মদিন। এই উপলক্ষে প্রতি বছরই একাধিক কর্মসূচি পালন করে সিপিএম। শনিবার সেই কর্মসূচির জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দেননি একাধিক সদস্য। মহাজাতি সদনের কর্মসূচিতে সূর্যকান্ত মিশ্র এবং রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও স্পষ্ট করে দেন, এ রাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে সমান লড়াই চালাবে দল। সিপিএমের এক নেতার কথায়, “এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা দলের সদস্য নন। কিন্তু অনেক বেশি সক্রিয় (মোর দ্যান পার্টি মেম্বার)। তাঁরাও যে ক্ষুব্ধ, তা বলা হয়েছে বৈঠকে। শনিবার মহাজাতি সদনের অনুষ্ঠানে তৃণমূল ও বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ শানিয়েছেন সেলিম।”
উল্লেখ্য, সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটি শনিবার একটি মাসিক উর্দু পত্রিকার সূচনা করেছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আওয়ামি তেহরিক’ (গণআন্দোলন)।