মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
প্রত্যেকে তাঁর তাঁর ধর্মপালন করুন, কিন্তু ধর্মের নামে হিংসা বা গুজব ছড়াতে চাইলে সরকার তা বরদাস্ত করবে না। রামনবমীকে সামনে রেখে আরও এক বার সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে মানুষকে সতর্ক করলেন ধর্মীয় গোঁড়ামি নিয়েও। বাঙালির কাছে রামচন্দ্রের অকালবোধনই যে ‘অরিজিনাল দুর্গাপুজো’ হয়ে উঠল, সেই ইতিহাস স্মরণ করিয়ে মমতার কথা, “সেই দিনটা কি আপনাদের মনে পড়ে না? সেটা কি রামনবমী নয়? ১০৭টা ফুল দিয়ে যখন একটা বাকি ছিল, রামচন্দ্র নিজের চোখ দিতে গিয়েছিলেন। ইতিহাসটা জানুন।”
আগামী রবিবার রামনবমী। শান্তিপূর্ণ ভাবে উৎসব পালন করার জন্য রাজ্যবাসীকে অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, অতীতে অন্য জায়গার (বাংলাদেশ, গুজরাত এবং রাজস্থানের) অশান্তির ছবি বাংলার বলে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। ছড়ানো হয়েছিল অশান্তি তৈরির জন্যই। এ বারও সেই একই পরিকল্পনা চলছে বলে সন্দেহ মমতার। মিছিলের নামে অস্ত্র নিয়ে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা যাতে না-হয়, সে বিষয়েও বুধবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে সতর্ক করে দেন তিনি। মমতা বুঝিয়ে দেন, রামনবমীর মিছিলে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। তবে তা শান্তিপূর্ণ ভাবে হতে হবে এবং অস্ত্র রাখার ক্ষেত্রে পুলিশি বিধিনিষেধ মানতে হবে। গত সপ্তাহে কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছিল, ইদ এবং রামনবমীকে কেন্দ্র করে অশান্তি বাধানোর ষড়যন্ত্র চলার সুনির্দিষ্ট তথ্য তাদের হাতে এসেছে।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দেন তিনি। আগামী ৯ এপ্রিল জৈন সম্প্রদায়ের মানুষদের একটি অনুষ্ঠানে থাকার কথা মমতার। সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি যদি সবাইকে নিয়ে চলতে পারি, আপনারা কেন পারেন না!” বস্তুত, গত কয়েক বছরে রাজ্য রামনবমী উৎসব আড়ে-বহরে বৃদ্ধি পেয়েছে। রামনবমীর মিছিল ঘিরে বিতর্কের জল অতীতে আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। বুধবার মমতা বলেন, “আমাদেরও অনেকে করেন। আমার কোনও আপত্তি নেই। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ ভাবে হোক।”
মমতার অভিযোগ, গোলমাল পাকানোর উদ্দেশ্যে অসত্য কথা ছড়ানো হচ্ছে এবং ভুয়ো ভিডিয়ো তৈরি করা হচ্ছে। রামনবমীতে শান্তি বজায় রাখার বার্তায় মমতা বুঝিয়ে দেন, পুলিশি বিধিনিষেধ মেনে ধর্মাচরণের জন্য অস্ত্র রাখা যেতে পারে। উদাহরণ হিসাবে পঞ্জাবিদের সঙ্গে কৃপাণ রাখার কথাও বলেন তিনি। তবে এর জন্য পুলিশি বিধিনিষেধ অবশ্যই মানতে হবে, তা-ও মনে করিয়ে দেন মমতা। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অন্য এলাকায় গিয়ে হামলা করা আপনার কাজ নয়।” রাজ্যবাসীর কাছে তাঁর বার্তা, “শান্তি বজায় রাখুন। দাঙ্গা করে কেউ কোনও দিন কিছু করতে পারেনি, পারবেও না।”
রামনবমী প্রসঙ্গে মন্তব্যের সময়ে বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁতের অভিযোগে বামেদের একাংশকেও দুষলেন মমতা। তাঁদের সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী বলেন, “গৈরিকীকরণ এবং রক্তিমকরণকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেবেন না। আপনারাও বড় বড় সাম্প্রদায়িক হয়ে গিয়েছেন। নির্বাচন থেকে শুরু করে সব ব্যাপারেই রাম-বাম এক হয়ে গিয়েছে। যত এ সব করবেন, মহাশূন্য থেকে আরও শূন্যে বিলীন হয়ে যাবেন।”