শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদার। — ফাইল চিত্র।
গত বিধানসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল না-হলেও ৭৭টি আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। কয়েকটি জেলায় আধিপত্যও দেখাতে পেরেছিল। সেই ফলের ছায়া যদি পঞ্চায়েত ভোটেও পড়ে, তবে পাঁচটি জেলায় ভাল ফল করতে পারে দল, এমনই হিসাব রাজ্য বিজেপির। অঙ্ক বলছে, ওই পাঁচটি জেলার গ্রামাঞ্চলে বিধানসভার ভোট ধরে রাখতে পারলে, জেলা পরিষদ দখলের কাছাকাছি চলে যেতে পারে বিজেপি। তবে বিধানসভা আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের মধ্যে যে আকাশ-পাতাল ফারাক, সেটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে দলের রাজ্য নেতৃত্ব এবং সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জেতা ৭৭টি আসনের মধ্যে ৩৬টি কেন্দ্রের গোটা এলাকাই গ্রামাঞ্চল। রাজ্যে এই রকম আসন ১৬৩টি। আবার শহর ও গ্রাম মিশে রয়েছে এমন ৯২টি আসনের মধ্যেও ৩৬টিতে জয় পায় বিজেপি। পুরোপুরি শহরকেন্দ্রিক বিধানসভাগুলির মধ্যে বিজেপি মাত্র ৫টিতে জয়ী হয়। এই ৫টির মধ্যে আবার দিনহাটা ও রানাঘাটে পরে উপনির্বাচনে হেরে যায় গেরুয়া শিবির। শেষ পর্যন্ত বিজেপির হাতে থাকা ৭৫টি আসনের মধ্যে বেশিটাই উত্তরবঙ্গের। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে বিজেপি আধিপত্য দেখাতে পেরেছিল। অন্য দিকে দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া জেলায় বিজেপি বেশি আসনে জয় পেয়েছিল।
কোচবিহারে ৯টি আসনের মধ্যে ৭টিতে জয় পায় বিজেপি। আলিপুরদুয়ারের বিধানসভা আসন ৫টি। সব ক’টিই বিজেপির দখলে। আবার জলপাইগুড়ি জেলায় ৭টি আসনের মধ্যে বিজেপি জয় পায় ৪টিতে। এই তিন জেলায় বিজেপির যে মোট প্রাপ্ত ভোট, তার থেকে শহরাঞ্চলের ভোট বাদ দিলে তৃণমূলের থেকে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে বলেই গেরুয়া শিবিরের হিসাব। আবার দক্ষিণবঙ্গের বাঁকুড়ায় মোট ১২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি জেতে ৮টিতে। পুরুলিয়ায় ৯টির মধ্যে ৬টিতে। এই দুই জেলারও গ্রামাঞ্চলে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট তৃণমূলের থেকে বেশি। এই অঙ্কের উপরে নির্ভর করেই বিজেপি পাঁচ জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।
এই পাঁচটি ছাড়া আরও দু’টি জেলায় তুলনামূলক ভাল ফলের আশা রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। নদিয়া এবং পূর্ব মেদিনীপুর। সেটাও বিধানসভা নির্বাচনের ফলের হিসাবে। মতুয়া প্রধান নদিয়ায় মোট ১৭টি আসনের মধ্যে ৯টিতে জয় পায় বিজেপি। আর পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬টির মধ্যে ৭টিতে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে ১০০ শতাংশ আসনে প্রার্থী দেবে দল। সাংগঠনিক বৈঠকেও তিনি সেই লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন। তবে পুরোটা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে সুকান্তের দলেই। গেরুয়া শিবির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অন্য কোথাও কিছু যদি বাদ যায়ও, যে পাঁচটি জেলায় বিধানসভা নির্বাচনে গ্রামীণ ভোট প্রাপ্তিতে দল এগিয়ে সেখানে ১০০ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতেই হবে।
কোচবিহারে ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত (মোট আসন ২,৫০৭) এবং ১২টি পঞ্চায়েত সমিতি (মোট আসন ৩৮৩)। জেলা পরিষদে মোট আসন ৩৪টি। সব মিলিয়ে আসন সংখ্যা ২,৯২৪। আলিপুরদুয়ারে ৬৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত (মোট আসন ১,২৫২) এবং ৬টি পঞ্চায়েত সমিতি (মোট আসন ১৮৯)। জেলা পরিষদে আসন ১৮টি। সব মিলিয়ে আসন সংখ্যা ১,৪৫৯। জলপাইগুড়িতে ৮০টি গ্রাম পঞ্চায়েত (মোট আসন ১,৭০১) এবং ৯টি পঞ্চায়েত সমিতি (মোট আসন ২৩৮)। জেলা পরিষদে আসন ২৪টি। সব মিলিয়ে আসন সংখ্যা ১,৯৬৩। বাঁকুড়ায় মোট পঞ্চায়েত ১৯০টি (মোট আসন ৩,১২৯)। পঞ্চায়েত সমিতি ২২টি (মোট আসন ৫৬১)। জেলা পরিষদের ৫৬ আসন মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা ৩,৭৪৬। পুরুলিয়ার গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি যথাক্রমে ১৭০ (মোট আসন ২,৪৭৬) এবং ২০ (মোট আসন ৪৯৬)। জেলা পরিষদের ৪৫টি মিলিয়ে মোট আসন ৩,০১৭টি।
এই পাঁচটি জেলার মধ্যে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি নিয়ে বিজেপির আশাবাদী হওয়ার পিছনে অন্য একটি কারণও রয়েছে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১০০ শতাংশ আসনে প্রার্থী দিতে না পারলেও দুই জেলায় বিজেপির ভোটপ্রাপ্তির হার ছিল যথাক্রমে ৩৬.১৬ এবং ৩০.৮৫ শতাংশ। যেখানে গোটা রাজ্যে বিজেপির ভোটপ্রাপ্তির গড় ছিল ২০ শতাংশের নীচে। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় বিজেপির ভোটপ্রাপ্তির হার ছিল ২৫.৮৪ এবং ৩২.৪৫ শতাংশ। পুরুলিয়ায় জেলা পরিষদের ৯টি আসনে জিতেওছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভাল ফল না করতে পারলেও, ২০১৮ সালে বিজেপির ভোটপ্রাপ্তির হার সবচেয়ে বেশি ছিল ঝাড়গ্রাম জেলায়। ৪০.১১ শতাংশ। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে জেলার একটি আসনেও জয় পায়নি গেরুয়া শিবির।