ছবি: পিটিআই।
ঘূর্ণিঝড় গুলাব বিদায় নিয়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশের পথ ধরে। বাংলার সীমানা পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ চলে গেল ঝাড়খণ্ডে। তাই আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের বেশির ভাগ জেলায় আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। তবে নিম্নচাপটি ঝাড়খণ্ডের উপরে থাকায় পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমানের কিছু এলাকায় আজ ভারী বৃষ্টি হতে পারে। মঙ্গল-বুধবারের জোরালো বর্ষণে রাজ্যের অনেক জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট হাজার বাড়ি। ১৫০টি ত্রাণ শিবিরে ২৬ হাজার মানুষকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে।
মৌসম ভবন এ দিন জানায়, আরব সাগরে ফের একটি ঘূর্ণিঝড় জন্ম নিতে চলেছে। তবে তার থেকে ভারতের কোনও অনিষ্টের আশঙ্কা নেই। কারণ, ওই ঘূর্ণিঝড় পাকিস্তানের উপকূলের দিকে বয়ে যাবে। আবহবিদেরা জানান, বঙ্গোপসাগরের সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় গুলাবের অবশিষ্টাংশ থেকেই জন্ম নেবে এই ঘূর্ণিঝড়। ক্রমতালিকা অনুযায়ী এর নাম হবে ‘শাহিন’। নামটি ওমানের দেওয়া। আবহবিদদের ব্যাখ্যা, গুলাবের অবশিষ্টাংশ নিম্নচাপ হিসেবে সৌরাষ্ট্র হয়ে আরব সাগরে গিয়ে জলীয় বাষ্প শুষে ফের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। সাধারণত এমনটা দেখা যায় না। তবে বর্ষাকাল বলেই বাতাসে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প রয়েছে। তাই গুলাবের অবশিষ্টাংশ স্থলভূমিতে ঢুকেও পুরোপুরি বিলীন হয়নি।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বার বঙ্গোপসাগরে অনেক বেশি নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। তাদের দাপটে উদ্বৃত্ত বর্ষণ হয়েছে গাঙ্গেয় বঙ্গে। মৌসম ভবনের হিসেব, ১ জুন থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাঙ্গেয় বঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে ২৬% বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এই অতিবর্ষণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক জায়গায়। মঙ্গল-বুধবারের নিম্নচাপের জেরেও সেই ধাক্কা অব্যাহত।
দুর্যোগে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। কিছু অঞ্চলে আগাম সতর্কতা হিসেবে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। বিদ্যুৎ দফতরের কন্ট্রোল রুমে এ দিন বিভিন্ন জেলার প্রশাসন ও নিজের দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। পরে তিনি জানান, কোনও কোনও জেলায় ২০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বহু জায়গায় জল জমেছে। কোথাও কোথাও সাবস্টেশন, ট্রান্সফর্মার, মিটার জলের তলায় ডুবেছে। সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি, বিধাননগরে গাছ পড়ে তার ছিঁড়েছে। বিদ্যুতের ৪৮২টি খুঁটি ভেঙে গিয়েছে। রাতের মধ্যেই মেরামতির যাবতীয় কাজ শেষ করে ফেলার আশ্বাস দিয়েছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী।