Bangla Awas Yojana

অর্থ ফেরত নিতে পৃথক অ্যাকাউন্ট

বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, আবাসের অর্থ বেহাত হওয়া ঠেকাতে শুরু থেকেই সতর্ক থাকার বার্তা দিচ্ছে নবান্ন। এ নিয়ে দফায় দফায় মৌখিক নির্দেশও দেওয়া হয়েছে জেলা-কর্তাদের।

Advertisement
চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪০

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আবাস প্রকল্পে ফিরিয়ে নেওয়া অর্থের জন্য পৃথক অ্যাকাউন্ট (ডিডাক্ট রিকভারিজ় হেড অব অ্যাকাউন্ট) খোলার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। এই বার্তা সম্প্রতি প্রত্যেক জেলা প্রশাসনকে পাঠিয়েছে নবান্ন। প্রশাসনের অন্দরের একাংশের দাবি, এমন পদক্ষেপ পৃথক ভাবে এ বারই করা হল। আবাস প্রকল্পে কোনও বরাদ্দ ‘ভুল’ উপভোক্তার হাতে চলে গেলে, তা ফেরানোর মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিলই জেলা-কর্তাদের। এ বার টাকা ফেরাতে নতুন অ্যাকাউন্টের তথ্য পাঠিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিষয়টা বাধ্যতামূলক।

Advertisement

বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, আবাসের অর্থ বেহাত হওয়া ঠেকাতে শুরু থেকেই সতর্ক থাকার বার্তা দিচ্ছে নবান্ন। এ নিয়ে দফায় দফায় মৌখিক নির্দেশও দেওয়া হয়েছে জেলা-কর্তাদের। নবান্নের সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ‘ভুয়ো’ উপভোক্তার হাতে টাকা যাওয়ার শঙ্কা এখনও রয়েছে! যদিও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের দাবি, যাচাই প্রক্রিয়া নিরন্তর। আবাস-প্রক্রিয়ার শুরু থেকে কড়া নজরদারিতে যাচাই হচ্ছে। প্রতি স্তরে রয়েছে সেই নজর। সঠিক হাতে বরাদ্দ যাচ্ছে কি না, টাকা ছাড়ার আগে-পরে খেয়াল রাখা হচ্ছে। টাকার অপচয় রুখতেই এই পদক্ষেপ। সরকারি পদ্ধতি মেনে ‘হাউজ়িং’, ‘রুরাল হাউজ়িং’, ‘বাংলার বাড়ি (গ্রামীণ)’, ‘ডিডাক্ট রিকভারি’, ‘অন্যান্য’ ইত্যাদি তহবিলে অযোগ্যদের থেকে টাকা ফিরিয়ে নিতে পারবেন জেলা-কর্তারা। এক কর্তার কথায়, “পদক্ষেপটি কড়া। এর থেকে বোঝা যাবে, কোন ক্ষেত্রে কত জন অন্যায্য উপভোক্তার কাছে অর্থ পৌঁছেছিল। ভবিষ্যতে যাচাই পদ্ধতি আরও আঁটোসাঁটো করা যাবে।”

২০২২ সালের নভেম্বরে আবাস প্রকল্পে ১১ লক্ষ উপভোক্তার তালিকা অনুমোদন করেছিল কেন্দ্র। তাদের বরাদ্দ না আসায় সেই তালিকা ধরেই বাড়ি তৈরির টাকা দিচ্ছে রাজ্য। অতিরিক্ত এক লক্ষ উপভোক্তাকে সেই অর্থ দেওয়া হচ্ছে, যাঁদের বাড়ির ক্ষতি হয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে। ফলে দু’টি কিস্তিতে সরকারকে পুরোপুরি নিজস্ব তহবিল থেকে (শেষপর্যন্ত কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না এলে) প্রায় ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। বিভিন্ন দফতর সূত্রের খবর, এই আর্থিক বোঝা ছাড়াও সামাজিক অনুদান প্রকল্পগুলি মিলিয়ে বিপুল অর্থ খরচ করতে হচ্ছে রাজ্যকে। সব মিলিয়ে রাজ্যের মোট আয়ের তুলনায় খরচের বহর (২০২৪-২৫ বাজেট তথ্য অনুযায়ী) কিছুটা হলেও বেশি। তাই অতি প্রয়োজনীয় ছাড়া অন্যান্য খরচে রাশ টানতে চাইছে অর্থ দফতর। এই অবস্থায় নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট তৈরি করে টাকা ফেরানোর সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় যখন ভুয়ো উপভোক্তাদের থেকে টাকা ফেরানোর সুপারিশ করেছিল কেন্দ্র, তখন জেলাভিত্তিক কয়েক জনের থেকে তা কোষাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সবটা করা সম্ভব হয়নি। এ বার আলাদা করে এমন আদেশের অর্থ, যত জন ভুয়ো উপভোক্তার কাছে সরকারি অর্থ পৌঁছবে, প্রত্যেকের থেকে তা ফেরাতেই হবে।”

জেলা-কর্তারা জানান, রাজ্যের টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্তের পরে সেই ১১ লক্ষ উপভোক্তার তালিকা যাচাই নতুন করে শুরু হয়। পুনর্যাচাইও হয় পরে। তাতে ‘যোগ্য’ নয় বলে কিছু উপভোক্তাকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলে বিক্ষোভ হয় নানা জেলায়। অবস্থান কিছুটা নরম করে রাজ্য। কিন্তু টাকা ছাড়ার আগের মুহূর্তে ফের এক বার যোগ্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ হয়। তাতে সন্দেহজনক কিছু দেখলে টাকা পাঠানো বন্ধ করা হচ্ছে। এর পরেও ভুল কারও অ্যাকাউন্টে টাকা গেলে নিশ্চিত করা হচ্ছে ফেরানোর বিষয়টি।

Advertisement
আরও পড়ুন