CPM TMC INDIA

কর্মীদের ‘ইন্ডিয়া’ বোঝাতে বিশেষ কর্মসূচি নিল রাজ্য সিপিএম, যেমন লিখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে সীতারাম ইয়েচুরির উপস্থিতি বাংলায় বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ‘‘যাঁদের হাতে মার খাচ্ছি, তাঁদের সঙ্গে কিসের সখ্য?’’

Advertisement
শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৩ ১৬:০১
WB CPM’s Study Circle to be held on August 13 to explain Sitaram Yechury\\\'s presence alongside Mamata Banerjee in opposition INDIA alliance meeting.

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পটনা, বেঙ্গালুরুতে বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে সীতারাম ইয়েচুরির উপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে সিপিএমের নিচুতলায়। গত ২৩ জুলাই আনন্দবাজার অনলাইনের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, নিচুতলার ক্ষোভের আগুন নেভাতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট বিশেষ কর্মসূচি নেওয়ার কথা ভাবছে। দেখা গেল, সেটাই সত্যি হতে চলেছে। আগামী ১৩ অগস্ট রাজ্য জুড়ে ‘পাঠচক্র’ কর্মসূচি নিয়েছে সিপিএম। মূল উদ্দেশ্য, ‘ইন্ডিয়া’কে ঘিরে যে অস্বস্তি আর ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা প্রশমন করা।

Advertisement

সিপিএম অবশ্য সরাসরি বলেনি যে, কী কারণে মমতার পাশে ইয়েচুরি ছিলেন তার ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। ‘পাঠচক্র’-এর আনুষ্ঠানিক বিষয় হিসাবে বলা হয়েছে: গত পার্টি কংগ্রেসে যে ‘রাজনৈতিক-রণকৌশলগত লাইন’ গৃহীত হয়েছিল তা দলের সদস্যদের কাছে ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। ২০২২ সালের এপ্রিলে কেরলের কন্নুর শহরে সিপিএমের মহাসম্মেলন বা পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তার পর দলের রীতি অনুযায়ী পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত ‘লাইন’ শাখাস্তর পর্যন্ত ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। তা হলে আবার কেন? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘‘ও ভাবে তো ঘোষণা করা যায় না যে ‘ইন্ডিয়া’র ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। তাই পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক-রণকৌশলগত লাইনের কথা বলা হয়েছে। যেখানে তৃণমূল সম্পর্কে দলের অবস্থান আরও এক বার স্পষ্ট করা হবে। এবং এ-ও বোঝানো হবে, তৃণমূলের সঙ্গে কোনও জোট হবে না। বাংলায় আমাদের লড়াই তৃণমূল-বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধে।’’

১৩ অগস্ট অনুষ্ঠিতব্য ‘পাঠচক্র’-এর জন্য ১৩ পাতার একটি নোট তৈরি করেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তা পিডিএফ আকারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলায় জেলায়। সিপিএম সূত্রে খবর, এই ১৩ পাতার নোটটিকে ধরেই দলীয় নেতৃত্ব প্রথমে তাদের ব্যাখ্যা দেবেন। তার পর দলের সদস্যরা প্রশ্ন করতে পারবেন। প্রতিটি শাখায় এই কর্মসূচি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সিপিএম রাজ্য কমিটি।

‘পাঠচক্র’-এর ওই ১৩ পাতার নোটে তৃণমূল সম্পর্কে ‘কড়া’ কথাই লিখেছে সিপিএম। ১০ নম্বর পাতায় লেখা হয়েছে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এবং ত্রিপুরায় বিজেপি যে ভাবে ফ্যাসিস্ট ধাঁচে পার্টির উপরে আক্রমণ সংগঠিত করছে তার বিরুদ্ধে পার্টিকে অবশ্যই প্রতিবাদ শক্তিশালী করতে হবে।’’ একই সঙ্গে সর্বভারতীয় প্রেক্ষিতে কেন বিরোধী জোটের বৈঠক এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তারও ব্যাখ্যা দেওয়া হবে পাঠচক্রে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যের কথায়, ‘‘বিজেপি বিরোধী ওই মঞ্চে না-গেলে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে আমাদের অবস্থান যে বড় প্রশ্নের মুখে পড়ত তাতেও সন্দেহ নেই। কিন্তু রাজ্যের পরিস্থিতি আলাদা। এই দুই পরিস্থিতির কথাই আমরা কর্মীদের বোঝাব। তাঁরাও যাতে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে এর জবাব দিতে পারেন।’’

এ রাজ্যে তৃণমূল বিরোধী লড়াইয়ে যে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না, এই পাঠচক্রের মাধ্যমে শাখায় শাখায় তা স্পষ্ট করে দেবেন সিপিএম নেতৃত্ব। রাজ্য স্তরের রাজনীতিতে ত্রিপুরার বিজেপিকে এবং বাংলার তৃণমূলকে যে কার্যত এক বন্ধনীতে রাখছে সিপিএম, তা পাঠচক্রের নোটেও স্পষ্ট। ‘ইন্ডিয়া’র শরিক সিপিএমের করা এই তুলনা অবশ্যই ভাল ভাবে নিচ্ছে না আর এক শরিক তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এই নির্জলা মিথ্যাচারটা সিপিএমের জিন ঘটিত সমস্যা।’’ কুণাল আরও বলেন, ‘‘প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু প্রয়াত হয়েছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অসুস্থ, আমি তাঁর আরোগ্য কামনা করি। কিন্তু সিপিএম এখন সাধু সাজার চেষ্টা করছে। তাই আমি মনে করি, রোজ জ্যোতি-বুদ্ধর জমানাকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত।’’

লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে কংগ্রসের সঙ্গে তৃণমূলের কী সমীকরণ হবে তা নিয়েও সিপিএমের নানা স্তরেই সংশয়ের একটা চোরা স্রোত রয়েছে। গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে কংগ্রেস-সিপিএম জোট হয়েছে রাজ্যে। আবার অতীতে তৃণমূলের সঙ্গেও কংগ্রেসের জোট হয়েছে বার বার। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য বার বারই বলছেন, রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের বোঝাপড়া হওয়ার সম্ভাবনা নেই৷ কিন্তু সনিয়া-রাহুল-খড়্গেরা কী চাইবেন শেষ পর্যন্ত, সেটাই সব কিছু ঠিক করে দেবে। সেটা পুরোপুরি স্পষ্ট না-হওয়া পর্যন্ত সিপিএমের মনে জোট নিয়ে সংশয় থেকে যাবেই।

আরও পড়ুন
Advertisement