শেখ শাহজাহান। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে হইচইয়ের মধ্যে হঠাৎই একটি অডিয়োবার্তা ঘিরে তুঙ্গে জল্পনা। জল্পনা এই যে, ফোনের ও পারে থাকা কণ্ঠ সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের! যে কণ্ঠ বলছে, “আমি শেখ শাহজাহান বলছি। দোষ করলে মাথা কেটে ফেলুন!” ইডি-সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই অডিয়োবার্তায়। ওই অডিয়োয় যে কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে, আনন্দবাজার অনলাইন অবশ্য তার সত্যতা যাচাই করেনি। সেটি কবে রেকর্ড করা হয়েছে, তার কোনও উল্লেখও নেই অডিয়োবার্তায়।
তবে অডিয়োবার্তায় যে ব্যক্তির কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে, তিনি নিজেই নিজেকে ‘শেখ শাহজাহান’ বলে পরিচয় দিয়েছেন। গ্রামবাসী এবং দলের সমস্ত পদাধিকারীর উদ্দেশে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, “এই সব ইডি-সিবিআইকে নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বুঝতে পারছ, পুরোটাই চক্রান্ত।” এরই সঙ্গে তাঁর অডিয়োবার্তায় নিজেকে শেখ শাহজাহান বলে পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তির দাবি, তাঁকে দমানোর চেষ্টা করলেও তিনি থামবেন না।
ওই কণ্ঠে শোনা যায়, ‘‘আমার অঞ্চলের সভাপতি যাঁরা আছেন, যুব সভাপতি যাঁরা আছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিক যাঁরা আছেন, সবার কাছে আমার অনুরোধ— এই সব সিবিআই, ইডিকে নিয়ে কোনও ভয় নেই। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তোমরা বুঝতে পারছ, এটা একটা ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।’’ এ-ও বলতে শোনা যায়, ‘‘ওরা আমাকে দমাতে পারলে মনে করছে সন্দেশখালিতে তৃণমূলকে দুমড়ে দিতে পারবে।’’
অডিয়োর ব্যক্তি বলেন, ‘‘অতএব ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার মতো হাজার হাজার শেখ শাহজাহান আছে। আর তোমরা তৃণমূলের সৈনিক। যে ভাবে মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার, আপনার পরিবারের জন্য করেছেন, তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই।’’ এর পরেই তাঁর বার্তা, ‘‘আমরা সবাই মানুষ। মৃত্যু যে সত্য, একে অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। সবাইকে করজোড়ে অনুরোধ করছি, মনুষ্যত্ব বিসর্জন দেবেন না। মৃত্যু হবেই। কেউ আগে আর কেউ পরে (মারা যাবেন)। ইডি-সিবিআই যেটা করছে, সেটা যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, সবাই বুঝতে পারছেন।’’
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি কোনও অন্যায়, কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নই। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে যে আমি কোনও রকম অপরাধে যুক্ত, তা হলে আমি আমার নিজের মুন্ডুটা নিজে কেটে দেব।’’
শুক্রবার সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল ইডি। সেখানে হামলার মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। যা নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। ওই ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ তিনি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, তাঁর খোঁজে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে। সূত্রের দাবি, জারি হয়েছে লুকআউট নোটিস। সে সব নিয়ে নানাবিধ জল্পনার আবহেই আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এসেছে ওই অডিয়োটি।
ইডি সূত্রে খবর, রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু সেই অভিযানে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে ইডি সূত্রের দাবি, তৃণমূল নেতার বাড়িতে নিশ্চয়ই কিছু ছিল! তা সরানোর সময় পেতেই পরিকল্পনা করে ইডি আধিকারিকদের উপর হামলা চালানো হয়েছে।
অডিয়োবার্তায় অবশ্য কণ্ঠের দাবি, ‘‘কোনও দিন কোনও মানুষের সামনে মুখ দেখাব না। সবার কাছে আমার আহ্বান, আপনারা আস্থা-বিশ্বাস রাখুন, আমি কোনও অন্যায়, অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নই। যত দিন বেঁচে থাকব অন্যায়ের সঙ্গে আপস করব না। তাই ওরা যে ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারী, ওরা যে চক্রান্ত করছে— এটা মিথ্যা এবং ভাঁওতাবাজি সেটা প্রমাণ হবে।’’
শেষে ‘অনুগামী’দের উদ্দেশে বার্তা, ‘‘আপনারা আস্থা হারাবেন না। আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পাশে থাকবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য কাজ করছেন, সেই মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার কী হবে, আমার কোথায় যাব, সে চিন্তা আপনাদের করার দরকার নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সমস্ত অঞ্চল সভাপতি, যুব কমিটি এবং মহিলা কমিটির সভানেত্রী, বুথ সভাপতি এবং সঙ্গীদের কাছেও আবেদন রাখছি, আপনারা সংগঠন চালিয়ে যান। ভয় পাবেন না। মৃত্যু এক দিন হবেই। তবে এই ষড়যন্ত্রকারীরা এক দিন নিপাত যাবে। সেই আস্থা-ভরসা রাখুন। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। সবাইকে আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে শুভেচ্ছা জানালাম।’’