SSC Recruitment Case Verdict

শুক্রবার থেকে পরীক্ষা, সুপ্রিম-রায়ে ভগবানগোলায় চার হাজার ছাত্রীর স্কুলে চাকরি গেল ২১ শিক্ষিকার!

মুর্শিদাবাদ জেলায় রানিনগর-১ ব্লকের লোচনপুর এন কে হাইস্কুলের ১৮ জন এবং ফরাক্কা অর্জুনপুর হাইস্কুলের ৩৩ জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৩৫
মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শোকের আবহ। উদ্বিগ্ন প্রধান শিক্ষিকা দীপন্বিতা রায়।

মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শোকের আবহ। উদ্বিগ্ন প্রধান শিক্ষিকা দীপন্বিতা রায়। — নিজস্ব চিত্র।

অন্য দিনের মতোই বৃহস্পতিবার সকালে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে এসেছিলেন ২১ জন শিক্ষিকা। শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে শ্রেণিস্তরের মূল্যায়ন। তার প্রস্তুতির মাঝেই বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁরা শুনলেন সু্প্রিম কোর্টের রায়! চাকরি হারিয়েছেন ওই ২১ জন। কারণ তাঁরা সকলেই ২০১৬ সালের নিয়োগ প্র্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছিলেন। রায় শুনে ভেঙে পড়েছেন সকলে। মাথায় হাত স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার। প্রায় চার হাজার ছাত্রী রয়েছে স্কুলে। ২১ জন শিক্ষিকা চলে গেলে পঠনপাঠন চলবে কী করে!

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্যের ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে সেই চাকরি বাতিল হয়েছে। প্রায় ২৬ হাজার ওই চাকরিহারাদের মধ্যে রয়েছেন ভগবানগোলা উচ্চ বালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন শিক্ষিকা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে চাকরি হারানো শিক্ষিকা পৃথা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দুর্নীতির তালিকায় আমাদের ২১ জনের নাম নেই। আমরা যোগ্য না অযোগ্য, সেটা আমরা জানি। যোগ্য হয়েও অযোগ্যদের মতো ব্যবহার মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের আশা ছিল, এ রকম রায় আসতে পারে না। এ বার সে রকম রায় যখন এসেছে, আমরা সত্যিই আশাহত।’’ এই রায়ের পরে কী করবেন, কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা। পৃথার কথায়, ‘‘এখন মাথায় আসছে না কী করব। আমরা দিশাহারা!’’ চাকরি হারানোর রায় শোনার পরে আর এক শিক্ষিকা পারমিতা মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। ভেবে উঠতে পারছি না, কী করব?’’ যোগ্য-অযোগ্যের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘অযোগ্য যদি হতাম, স্কুলে কি দাঁড়িয়ে থাকতাম?’’

স্কুলে শিক্ষিকার সংখ্যা সব মিলিয়ে ৬২ জন। এর মধ্যে ২১ জনের চাকরি চলে গেলে স্কুল কী ভাবে চলবে, সেই প্রশ্নই ঘুরছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা রায়ের মনে। তার মধ্যে আবার শুক্রবার থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। দীপান্বিতার কথায়, ‘‘পর্ষদের লিখিত নির্দেশ এখনও পাইনি। শুক্রবার থেকে পরীক্ষা। স্কুল যে বিপর্যস্ত, এ বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই। যে ২১ জনের চাকরি গিয়েছে, তাঁরা এত দিন পারদর্শিতার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন।’’ একই প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কটাক্ষ, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি আঙুল তুলেছেন বিজেপির দিকে।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মী চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলায় রয়েছেন ৩,২০০ জন। মুর্শিদাবাদ জেলায় রানিনগর-১ ব্লকের লোচনপুর এন কে হাইস্কুলের ১৮ জন এবং ফরাক্কা অর্জুনপুর হাইস্কুলের ৩৩ জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে।

চাকরি বাতিলের খবর পেয়ে যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ মুর্শিদাবাদ জেলা শাখার সদস্যেরা জড়ো হন বহরমপুরে ব্যারাক স্কোয়্যার ময়দানে। চাকরি বাতিলের খবর পেয়েই তাঁরা জড়ো হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি কেউ যাতে মানসিক ভাবে ভেঙে না পড়েন, সে ব্যাপারেও পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়।

Advertisement
আরও পড়ুন