পশ্চিমবঙ্গের গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে পরিবহণ দফতর। —ফাইল চিত্র।
এ বার রাজ্যের সমস্ত রিজিয়োনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (আরটিএ)-র বোর্ড ভেঙে নতুন করে তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন বোর্ড গঠনের সরকারি আদেশনামা জারি করেছেন পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহন। নতুন সেই নির্দেশ অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে পরিবহণ দফতর। নতুন যানবাহন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নামাতে নতুন এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় যে লকডাউনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে বেসরকারি পরিবহণের কোমর ভেঙে গিয়েছে। তাই নতুন করে উদ্যোগী হয়ে বেসরকারি পরিবহণ পরিষেবাকে চাঙ্গা করতে চাইছে রাজ্য। সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে নতুন রুট যেমন তৈরি হবে, তেমনই পরিবহণ দফতরের আয় বৃদ্ধি পাবে।
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, পারমিট দেওয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা রয়েছে আরটিএ বোর্ডের হাতে। প্রত্যেক জেলাতেই এই বোর্ড রয়েছে। যার চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক। রিজিয়োনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসার (আরটিও) এই বোর্ডের সদস্য সচিব। বোর্ডের আর এক সদস্য হিসাবে থাকেন শাসকদলের বিধায়ক-নেতা কিংবা তাঁর কোনও প্রতিনিধি। কিন্তু প্রায় সব জেলাতেই আরটিএ-র বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে জেলাভিত্তিক বোর্ড মিটিং হয় না। পারমিট ইস্যু থেকে শুরু করে সরাসরি যাত্রীস্বার্থের সঙ্গে জড়িত একাধিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঝুলে রয়েছে। পাশাপাশি, আরটিএ বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব। এ ছাড়াও রাজ্য জুড়ে প্রায় ৪০ হাজার বিভিন্ন আবেদন জমা পড়ে রয়েছে। সেই সব জট ছাড়াতেই এ বার রাজ্যের সমস্ত আরটিএ বোর্ড ভেঙে তা নতুন করে তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলাভিত্তিক পরিবহণ দফতরের অন্দরে তৈরি হওয়া ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙতেও এই প্রয়াস অনেকাংশে সফল হবে বলেই মনে করছে পরিবহণ দফতরের শীর্ষ আধিকারিকেরা।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পরবর্তী সময়ে জেলায় জেলায় বাস, মিনিবাস, অটো-সহ যাত্রী পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমে গিয়েছে। পাশাপাশি, বাংলার সড়ক মানচিত্রে বাণিজ্যিক গাড়ির নতুন রুটও তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক গাড়ি নামানোর ক্ষেত্রে পারমিট পেতে চূড়ান্ত জটিলতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বেসরকারি পরিবহণ পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের। এর ফলে এক দিকে যেমন নতুন পরিবহণ পরিষেবা শুরু করা যাচ্ছে না, তেমন পরিবহণ থেকে রাজস্ব বৃদ্ধিও সম্ভব হচ্ছে না। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “আমজনতাকে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়াই পরিবহণ দফতরের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। তাই দফতর নতুন করে আরটিএ বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।” তিনি আরও বলেন, “নবগঠিত বোর্ড নিয়মিত বৈঠক করে যাবতীয় আবেদনপত্র খতিয়ে দেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। পারমিট কিংবা রাস্তায় আরও বেশি গাড়ি নামানোর যাবতীয় প্রক্রিয়া সরল করে গোটা ব্যবস্থাকে যাত্রীবান্ধব করতেই এই উদ্যোগ।”