অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ট্রেন না পেয়ে সড়কপথেই দিল্লি অভিযানে যেতে চলেছে তৃণমূল। শনিবার সকালেই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সামনে একের পর এক দূরপাল্লার স্লিপার ক্লাসের বাস এসে থামতে শুরু করে। তৃণমূল সূত্রে খবর, মোট ৫০টি বাসে করে দলের জনপ্রতিনিধি এবং একশো দিনের কাজের জব কার্ড হোল্ডাররা দিল্লি পৌঁছবেন। তবে প্রয়োজনে আরও বাস আনা হতে পারে বলে জানিয়েছে ওই সূত্রটি। পরিস্থিতি অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলতে পারে এই বাস ছাড়ার প্রক্রিয়া।
ট্রেনে অপেক্ষাকৃত তাড়াতাড়ি দিল্লি পৌঁছনোর সম্ভাবনা থাকলেও, সড়কপথে তা যে সম্ভব নয়, তা অজানা নয় তৃণমূল নেতৃত্বের। তবে মনে করা হচ্ছে, রবিবার রাতের মধ্যেই দিল্লি পৌঁছে যাবে বাসগুলি। সে ক্ষেত্রে সোমবার সকালে দলের কর্মসূচিতে যোগ দিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বাসের যাত্রীদের। প্রথমে জানা গিয়েছিল শনিবার সকাল ১১টার মধ্যেই ছাড়তে শুরু করবে একের পর এক বাস। অবশ্য প্রথম বাসটি ছাড়ে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, আসানসোল, ধানবাদ, বারাণসী, আগরা হয়ে দিল্লি পৌঁছবে বাসগুলি। প্রতিটি বাসেই ৭০ থেকে ৭২টি আসন থাকছে। সূত্রের খবর, আসনের অতিরিক্ত যাত্রী কোনও বাসেই নেওয়া হচ্ছে না।
ঘটনাচক্রে, বাসগুলি বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশ পেরিয়েই দিল্লি পৌঁছবে। সেখানে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, এমন আশঙ্কার প্রেক্ষিতে শুক্রবারই হুঁশিয়ারির সুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যে যদি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের গায়ে হাত পড়ে, তা হলে আমরাও ছেড়ে কথা বলব না।”
তৃণমূল সূত্রে খবর, দিল্লির পাহাড়গঞ্জ রোড, চিত্তরঞ্জন পার্ক, দিল্লি কালীবাড়ি সংলগ্ন এলাকার অতিথিশালা এবং পান্থনিবাসগুলিতে বাসযাত্রীদের থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। দলের কিছু শীর্ষ পদাধিকারী রবিবার সকালেই দিল্লি পৌঁছে যাচ্ছেন। সব বাস পৌঁছে গেলে দলের কর্মীসমর্থক এবং জব কার্ড হোল্ডারদের নিয়ে আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা সারবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
এর আগে দিল্লি যাত্রার জন্য গোটা ট্রেন ভাড়া করতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল তৃণমূল। জমা দেওয়া হয়েছিল রেলের ঠিক করে দেওয়া ভাড়া এবং সিকিউরিটি ডিপোজ়িটও। কিন্তু সেই আবেদন নাকচ হয়ে যায়। রেলের তরফে দাবি করা হয়, তৃণমূল ট্রেন চেয়েছিল আইআরসিটিসির কাছে। সেই আবেদনের কথা জানার পরে চেষ্টা করেও ট্রেনের ব্যবস্থা করা যায়নি। শুক্রবারই অবশ্য বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক। তাঁর এই ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই দলের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, শনিবার সকাল ৯টায় ধর্মতলা থেকে একে একে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেবে তৃণমূলের বাস।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা ও অন্যান্য আর্থিক দাবি আদায়ে গত জুলাইয়ে দিল্লির কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। সেই মতোই আগামী ২ ও ৩ অক্টোবর দু’দিনের এই কর্মসূচি। দলীয় সূত্রে খবর, দলের নেতা-কর্মীর পাশাপাশি কাজ করেও টাকা পাননি, এমন মানুষদের নিয়েই দিল্লিতে এই কর্মসূচি পালন করবে তৃণমূল। যে সব জেলার বাসিন্দারা কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন তাঁদের জন্য নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মতো কয়েকটি জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী ২ তারিখ গান্ধীজি’র জন্মদিনে রাজঘাটে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই কর্মসূচি শুরু করবে তৃণমূল। ৩ তারিখ যন্তর মন্তর থেকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের দফতর পর্যন্ত মিছিল করারও কথা রয়েছে।