অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। —ফাইল চিত্র।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীকে শোকজ় করতে চলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবারই তাঁকে শোকজ়ের চিঠি ধরাতে চলেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ শীর্ষনেতা বলেন, ‘‘নারায়ণ যে কাজ করেছেন, তা দল কোনও ভাবেই সমর্থন করে না। তাই তাঁকে শোকজ় করা হবে। আমরা চেষ্টা করছি বৃহস্পতিবারের মধ্যেই যেন তাঁকে শোকজ়ের চিঠি ধরানো যায়।’’
দিন কয়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের একটি অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠে গান গেয়েছিলেন এই তৃণমূল নেতা। বলেছিলেন বেশ কিছু অসংলগ্ন কথাও। অনুষ্ঠানমঞ্চের ভিডিয়ো দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে (যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। জেলা পরিষদের সভাধিপতির সঙ্গীত পরিবেশনা ঘিরে সমালোচনাও শুরু হয়। অনেকেই দাবি করছেন, বিধায়ক সেই সময় অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় ছিলেন। ওই ঘটনা নজরে আসে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের।
বুধবার সকালে তড়িঘড়ি তৃণমূল ভবনে আসেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। সেখানেই তিনি দলের রাজ্য সংগঠনের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারকে নারায়ণের ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে বিবৃতি দিতে নির্দেশ দেন। এর পরেই জয়প্রকাশ বিবৃতি দিয়ে বলেন, “কয়েক দিন আগে অশোকনগরের বিধায়ক এবং উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে যে অসৌজন্যমূলক কথা এবং আচরণ করেছেন, তা দল কোনও ভাবেই অনুমোদন করে না। জেলা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। কারণ, তাঁর আচরণ দলের ভাবমূর্তির সঙ্গে খাপ খায় না।” তিনি বলেন, “এ বিষয়টি দলের জেলা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি দেখছে এবং এটি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। কোনও রকম অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দলের কারও কাছ থেকে তৃণমূল আশা করে না, অনুমোদনও করে না।” রাজ্য সভাপতির নির্দেশে জয়প্রকাশের এমন বক্তব্যের পরেই জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব যে নারায়ণের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবেন, সেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
দলের কড়া বিবৃতির পর থেকেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন অভিযুক্ত বিধায়ক। তাঁকে যে দলের শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে, সেই বিষয়টিও বুঝেছেন তিনি। নারায়ণ কেবল রাজনীতির মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি মঞ্চে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। গত বছর ‘নমস্তস্যৈ’ নাটকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল নারায়ণকে। নিজেকে বরাবরই সংস্কৃতিবান মানুষ হিসেবেই তুলে ধরেছেন অশোকনগরের বিধায়ক। তাই ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় তার অপ্রকৃতিস্থ আচরণকে মেনে নিতে পারছেন না তাঁর ঘনিষ্ঠেরা। নভেম্বর মাসে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়ে তাঁর রাজনৈতিক আচরণের জন্য ধমক দিয়েছিলেন নারায়ণকে। আর এ বার নিজের অপ্রকৃতিস্থ আচরণের জন্য দলের রোষানলে পড়তে চলেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বছর লোকসভা ভোটের পর কালীঘাটের বাসভবনে যে জাতীয় কর্ম সমিতির বৈঠক করেছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী, তাতে তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, পর পর তিন বার শোকজ়ের মুখে পড়লে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে সংশ্লিষ্ট নেতাকে। যদিও চলতি মাসে কোন রকম শোকজ় ছাড়াই সাসপেন্ড করা হয়েছে রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন ও প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে। তাই শান্তনু আরাবুলের মতো নারায়ণকেও সাসপেন্ড করা হবে কি না, সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরমহলে। নারায়ণ যে হেতু জেলা পরিষদের সভাধিপতি হওয়ার পাশাপাশি অশোকনগরের বিধায়ক, তাই প্রথমেই তাঁকে শোকজ় নোটিস ধরিয়ে সতর্ক করে দেওয়ার পক্ষপাতী উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। তবে তৃণমূলের এক নেতা জানাচ্ছেন, নারায়ণের উপর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নজর রয়েছে অনেক দিন ধরেই। তাই নারায়ণকে এখন থেকে সতর্ক হয়ে চলতে হবে।