অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েতের তিন স্তরেই দলীয় পদাধিকারীদের মেয়াদ ‘নবীকরণের’ ব্যবস্থা করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রাথমিক আলোচনায় ঠিক হয়েছে, শুরু থেকেই প্রতি ছ’মাস অন্তর মূল্যায়ন করে দলই ঠিক করবে নির্বাচিত প্রতিনিধি পদে থাকবেন কি না। কাজ পছন্দ না হলে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে দলের লক্ষ্য স্পষ্ট করে দিতে চাইছেন দলীয় নেতৃত্ব।
ভোট প্রক্রিয়া মিটে যেতেই বোর্ড গঠন নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে শাসক শিবিরে। প্রার্থী বাছাইয়ের মতো এ ক্ষেত্রেও পদাধিকারী বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ভাবে নিয়ন্ত্রণ চান দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তা-ই নয়, নতুন পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের কাজকর্মে নিয়মিত নজরদারি রাখার ব্যবস্থাও রাখছেন তাঁরা। এবং দলের সেই নজরদারিতে কোথাও খামতি, অনিয়ম বা নিষ্ক্রিয়তা ধরা পড়লে নিয়মিত রদবদলের ব্যবস্থাও করা হবে। প্রাথমিক ভাবে প্রতি ছ’মাসে এক বার এই মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকছে। দলীয় স্তরে তা যাচাই-বাছাইয়ের ব্যবস্থা থাকলেও এই গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জুড়ে থাকবে দলের সঙ্গে থাকা পেশাদার পরামর্শদাতা সংস্থা। প্রধানদের রদবদলের ক্ষেত্রে অবশ্য তাঁদের দলের নির্দেশ মেনে সরে যেতে হবে। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী আড়াই বছরের আগে তাঁদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা যাবে না।
নির্বাচনী প্রচারে একাধিক সভায় পঞ্চায়েতের কাজকর্মে এই নজরদারির আশ্বাস দিয়েছিলেন অভিষেক। মুখ্যমন্ত্রীও প্রচারে ঘোষণা করেছিলেন, এ বার পঞ্চায়েত পরিচালনার কাজ দেখা হবে উপর থেকে। তার সূত্র ধরে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের কাজ নিয়ে অভিযোগ জানাতে সাধারণ মানুষের জন্য একটি ফোন নম্বর দেওয়ার কথাও ভাবা হয়েছে। ‘এক ডাকে অভিষেক’ কর্মসূচির মতো ওই ফোন নম্বরে স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি এলাকার নির্দিষ্ট প্রয়োজনের কথাও জানানো যাবে। স্থানীয় মানুষের প্রস্তাব মতো এলাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্প ঠিক করতেও এই ব্যবস্থা কাজে লাগানোর কথা ভাবা হয়েছে। বিরোধীরা অবশ্য মনে করছে, পঞ্চায়েতের কাজে নজরদারির জন্য আইনেই গ্রামসভার কথা আছে। যেখানে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ থাকে। গ্রামসভাকে অকোজো করে দিয়ে তৃণমূল সব ক্ষেত্রেই দলের নিয়ন্ত্রণ চাপাতে চাইছে বলে বিরোধীদের মত।
জেলা ঘুরে নাম সংগ্রহ করলেও এ বার পঞ্চায়েতের তিন স্তরের প্রার্থী বাছাইয়ে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রেখেছিলেন অভিষেক। স্থানীয় স্তরের নেতাদের মত আর পরামর্শদাতা সংস্থার মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রার্থী ঠিক করার সূত্র দিয়েছিলেন। এ বার প্রায় সেই সূত্রেই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপ-প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহকারী সভাপতি ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও কর্মাধ্যক্ষ বাছাই করার কথা ভাবা হয়। দলীয় সূত্রে খবর, তিন স্তরেই প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ে সম্ভাব্য পদাধিকারীদের চিহ্নিত করে রাখা হয়েছিল। এখন ফল দেখে তা নির্দিষ্ট করতে জেলা থেকে মত নেওয়া চলছে।
দলীয় সূত্রে খবর, তিন স্তরেই প্রধান বা সভাপতির দাবিদার অনেক। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বা কর্মাধ্যক্ষ বাছাই করে দেবেন দলীয় নেতৃত্বই। তবে একাধিক দাবিদার নিয়ে সমস্যা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে। এই দুই ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরে বাছাইয়ের দায়িত্ব ছাড়া হলে দল বদলে পদে বসার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সেই সমস্যা এড়াতে অনেক জেলার নেতারাই চাইছেন নীচের তলার পদাধিকারী বাছাইয়ের কাজও উপর থেকে করে দেওয়া হোক।