Mamata Banerjee

বাইরনের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে কিছু জানেন না তিনি, কাগজে দেখেছেন, বললেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা

সোমবার ঘাটালে অভিষেকের ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচির ক্যাম্পে গিয়ে পুরনো দলে ফেরেন বাইরন। মাত্র তিন মাস আগেই তিনি তৃণমূলের প্রার্থীকে প্রায় ২৩ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৩ ১৭:২৫
Bayron Biswas and Mamata Banerjee

সোমবার ঘাটালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচির ক্যাম্পে এসে পুরনো দলে ফেরেন বাইরন বিশ্বাস। মঙ্গলবার মমতার গলায় শোনা গেল বিষয়টি ‘না জানা’র কথা। — ফাইল চিত্র।

সাগরদিঘির কংগ্রেস বিধায়ক বাইরন বিশ্বাসের দলবদল নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপের ২৪ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরে মুখ খুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। কাগজে দেখেছেন! কোনও বিধায়ক অন্য দল থেকে তৃণমূলে যোগ দেবেন, কিন্তু মমতা তা জানবেন না বা তাঁর বিনা অনুমোদনে তা হবে, এটা তৃণমূলের দস্তুর নয়। তা হলে এ বার ব্যতিক্রম হল কেন? দলের একাংশের বক্তব্য, আসলে মমতা এই ভাবে বিষয়টিকে ‘লঘু’ করে দেখাতে চেয়েছেন। কারণ, তিনি সম্যক জানেন, তাঁর আহ্বানে যখন বিরোধী জোটের সলতে পাকানো শুরু হয়েছে, তখন বাইরনের দলবদল তাতে ‘নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলতে পারে। বস্তুত, ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা জয়রাম রমেশ।

বাইরনের যোগদানের ফলে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট গঠন কি ধাক্কা খাবে? কারণ, মমতাও সম্প্রতি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ায় ‘রাজি’ বলে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার এই প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘‘আমি মনে করি জাতীয় স্তরে আমরা সবাই এক। কিন্তু রাজ্য স্তরে যে প্রতিটি দলের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে, সেটা সবাইকে বুঝতে হবে। আমরা তো শুধু মেঘালয় আর গোয়া বিধানসভায় লড়েছি। কিন্তু কংগ্রেস হিমাচল প্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, গুজরাতে লড়েছে। আমরা তো কোনও অসুবিধা সৃষ্টি করিনি। বরং আমরা সাহায্য করেছি।’’

Advertisement

ঘটনাচক্রে, আগামী ১২ জুন মমতার আহ্বানেই পটনায় লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী জোটের প্রথম বৈঠক হতে চলেছে। তার আগে মমতা কংগ্রেস থেকে বাইরনের তৃণমূলে যোগদান জলঘোলা করবে। তৃণমূলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, সেই কারণেই মমতা বিষয়টিকে ‘স্থানীয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা রাজ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু ঘোষণা করেন। এর পরেই বাইরনের যোগদান প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘‘এটা স্থানীয় নেতৃত্বের বিষয়। তাঁরাই উত্তর দিতে পারবেন। আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানি না, কাগজে দেখেছি।’’ এর পরেও প্রশ্ন ওঠায় মমতা বলেন, ‘‘আমি এগুলো করি না। দলের যে পদ্ধতি, তাতে ব্লক লেভেলে এগুলো হয়। সুতরাং ব্লক লেভেলে জিজ্ঞেস করুন।’’ যা থেকে স্পষ্ট যে, মমতা বোঝাতে চেয়েছেন, এটা স্থানীয় রাজনীতির বিষয়, জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

সোমবার ঘাটালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচির ক্যাম্পে এসে পুরনো দলে ফেরেন বাইরন বিশ্বাস। মাত্র তিন মাস আগেই সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তিনি তৃণমূলের প্রার্থীকে প্রায় ২৩ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পাশে বসে সোমবার সাংবাদিক বৈঠকও করেন বাইরন। এর পরেই রাজ্য রাজনীতিতে হইচই পড়ে যায়। জাতীয় রাজনীতিতেও এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার তথা বিজেপির বিরুদ্ধে যখন বিভিন্ন দলকে সঙ্গে নিয়ে জোট বাঁধার কথা বলছে তৃণমূল, যেখানে কংগ্রেসের থাকার সম্ভাবনা নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে, সেই সময়ে রাজ্যে কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়কের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ মঙ্গলবার সকালেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে টুইট করেন। আর তার পরেই জোটের অন্যতম প্রবক্তা মমতার গলায় শোনা গেল বিষয়টি ‘না জানা’র কথা।

এর পরে বাংলায় জোট রাজনীতি নিয়েও আক্রমণ শানান মমতা। প্রশ্ন ওঠে, বাংলায় বাম এবং কংগ্রেস মিলে যে জোট তৈরি হয়েছে, তা কি বাইরনের দলবদলে মুখ থুবড়ে পড়ল? মমতা বলেন, ‘‘বাম-রাম-শ্যাম কখনও বিরত হয় নিজেদের অকাজ-কুকাজ করার জন্য? ওদের এক থাকতে দিন। ওরা চিরকাল এক থাকবে। ওরা একই মালার তিনটে ফুল।’’ এর পরেই আবার সংশোধন করে বলেন, ‘‘ফুল তো নয়, বাবলাগাছের কাঁটা। কুলগাছের কাঁটা। ওরা ভাল চিন্তা করে না। তাই ওদের নিয়ে চিন্তা করার সময় আমার নেই।’’

আরও পড়ুন
Advertisement