সুখেন্দুশেখর রায়। — ফাইল চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে কয়েক দিনের বিরতির পর আবার তৃণমূলের ‘অস্বস্তি’ বৃদ্ধি করলেন সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে স্মরণ করালেন বাস্তিল দুর্গের পতনের কথা। ওই পোস্টে লিখলেন, ১৭৮৯ সালের জুলাই মাসে বিভোক্ষকারীরা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিলেন বাস্তিল দুর্গ। জন্ম হয়েছিল ফরাসি বিপ্লবের। ঘটনাচক্রে, রবিবার কলকাতায় আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে মিছিল করছেন খ্যাতনামী-সহ বহু মানুষ। সেই মিছিল শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে সুখেন্দুশেখরের এই পোস্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, আরজি কর-কাণ্ডে আবার তৃণমূলের দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি।
রবিবার সুখেন্দু বলেছেন, ‘‘১৭৮৯ সালের জুলাই...। বিক্ষোভকারীরা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিলেন বাস্তিল দুর্গ। জন্ম হয়েছিল ঐতিহাসিক ফরাসি বিপ্লবের।’’ প্রসঙ্গত, ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই উন্মত্ত ফরাসি জনতা ভেঙে দেয় প্যারিসের বাস্তিল দুর্গ। তার পরেই শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব। এই বাস্তিল দুর্গ ছিল রাজতন্ত্র, ইউরোপে মধ্যযুগীয় শোষণের প্রতীক। প্রশ্ন উঠেছে, ইউরোপের সেই শোষণের যুগের সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা টানতে চাইছেন সুখেন্দু?
এর আগেও আরজি কর-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলেছিলেন সুখেন্দু। ১৪ অগস্ট ‘রাত দখল’-এর কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন তিনি। রাজ্যসভার সাংসদ জানিয়েছিলেন, তিনি মেয়ের বাবা, নাতনির দাদু। তাই তিনি মনে করেন, এই সময়ে প্রতিবাদে শামিল হওয়াটা জরুরি। ১৪ তারিখ দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্কে নেতাজি মূর্তির সামনে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ধর্নায় বসেছিলেন সুখেন্দু। নিজের মতো করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সেখানেই থামেননি তিনি। রাজ্যের শাসকদলের ‘অস্বস্তি’ বৃদ্ধি করে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার দাবি জানিয়েছিলেন সিবিআইয়ের কাছে। ওই পোস্টেই কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াড নিয়েও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, আরজি করের ঘটনার তিন দিন পর ডগ স্কোয়াড গিয়েছিল হাসপাতালে। কেন এই বিলম্ব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সুখেন্দু।
আরজি কর-কাণ্ড এবং তার তদন্ত সংক্রান্ত ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে সুখেন্দুকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল লালবাজারে। যদিও তিনি হাজির হননি। পরে কলকাতা হাই কোর্টে সুখেন্দু স্বীকার করে নেন, আরজি কর-কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে ভুল তথ্য ছিল। উচ্চ আদালতে নিজের ভুল স্বীকার করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট মুছে দেওয়ার কথা জানান সুখেন্দু। হাই কোর্টে তিনি জানান, তথ্যগত কিছু বিভ্রান্তির কারণে ওই পোস্ট করা হয়েছিল। সেটি মুছে ফেলা হবে। তবে সুখেন্দুর এক্স হ্যান্ডলে পরে ওই পোস্টের দেখা মেলেনি। মনে করা হয়, রাজ্যসভার সাংসদ পোস্টটি ডিলিট করে দিয়েছেন। সেখানেই শেষ হয়নি। পরে সমাজমাধ্যমে আবার একটি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ পোস্ট করেছিলেন সুখেন্দু। ভারত-চিন যুদ্ধের সময়ে প্রকাশিত একটি কার্টুন শেয়ার করেন তিনি। কার্টুনটি ১৯৬২ সালের ২৬ ডিসেম্বরের। শিল্পী আরকে লক্ষ্মণ। সেখানে দেখা যায় পুলিশ এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তলায় লেখা, ‘‘এটা ঠিক যে, আপনি গুজব ছড়াচ্ছিলেন না। আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি ঠিক তথ্য ছড়াচ্ছিলেন।’’ পুরনো সেই কার্টুনটি নিজের এক্স হ্যান্ডলে শেয়ার করেন সুখেন্দুশেখর। সঙ্গে একটি অট্টহাসির ইমোজি। রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মতে, তৃণমূলের মুখপত্রের সম্পাদক সুখেন্দুশেখর এই কার্টুন পোস্ট করে আবারও দলকে ‘অস্বস্তি’তে ফেলছিলেন। ‘কটাক্ষ’ করেছেন পুলিশকেও। এর পর রবিবার আবারও তিনি নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট দিয়ে মনে করালেন বাস্তিল দুর্গের পতনের কথা।