(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অধীর চৌধুরী (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
গত সাত মাসে জোট নিয়ে একটা কথাও বলেনি কংগ্রেস। কে কোথায় লড়বে, তা নিয়েও মুখ খোলেনি। পাল্টা আক্রমণ করেছে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সোমবার এই অভিযোগই তুললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে আক্রমণ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে। ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ জানালেন, বার বার রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। এই করে কার সুবিধা করে দিচ্ছেন তিনি, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
সোমবার আমতলায় ছিল অভিষেকের নিজের লোকসভা কেন্দ্রের প্রশাসনিক বৈঠক। বৈঠক শেষে কংগ্রেসের দিকেই আঙুল তোলেন তিনি। জানান, ‘ইন্ডিয়া’র প্রথম বৈঠকের পর সাত মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু জোট নিয়ে এখনও কোনও কথা বলেনি কংগ্রেস। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা বার বার বলেছি, কে কোথায় লড়বে বলুন। আপনারা কি দেখেছেন, গত সাত মাসের মধ্যে কোনও কংগ্রেস নেতৃত্ব এক বারও বলতে পেরেছেন যে, আমরা তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলেছি!’’
লোকসভা ভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে বিজেপি-বিরোধী দলগুলি জোট করার পর থেকেই তৃণমূলের তরফে বার বার এ রাজ্যে আসন সমঝোতা সেরে ফেলার দাবি তোলা হয়েছে। মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েও তৃণমূলের তরফে আসন সমঝোতার কথা বলা হয়। যদিও তাতে তখন সায় দেয়নি কংগ্রেস। পরে ডিসেম্বরে দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে কংগ্রেসকে রাজ্যে আসন ছাড়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন খোদ মমতা। তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর দরজা খোলা। তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘‘বিড়ালের গলায় কাউকে না কাউকে তো ঘণ্টা বাঁধতে হবে!’’ যদিও তার পরেও কংগ্রেসের তরফে সক্রিয়তা দেখানো হয়নি বলেই অভিযোগ।
সোমবার অভিষেক ফের সেই অভিযোগই করেন। তিনি জানালেন, গত ২১০ দিনে কংগ্রেসের তরফে কোনও সক্রিয়তা দেখা যায়নি। উল্টে রাজ্যের শাসকদলকে আক্রমণ করেছে প্রদেশ কংগ্রেস। তাঁর কথায়, ‘‘গত সাত মাসে দেখুন, কংগ্রেস কত বার মমতা, তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে আর কত বার বিজেপিকে করেছে!’’ তিনি এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, গত ২১০ দিনে তিনি বা তৃণমূলের কোনও মুখপাত্র কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটা কথাও প্রকাশ্যে বলেননি। অথচ কংগ্রেসের তরফে বার বার মন্তব্য করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি আঙুল তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের দিকে। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব বলছে, বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করুন। কেন্দ্রের হাতে সব কিছু চলে গেলে কার লাভ? বিজেপির লাভ।’’ এর পরেই অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, কেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বিজেপির লাভের কথা বলছেন? এ নিয়ে অধীরকে কটাক্ষও করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি যখন বিজেপির লাভের কথা বলছেন তখন বিজেপির ট্রোজ়েন হর্স কে?’’ গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী, এই ‘ট্রোজেন’ ঘোড়ার মাধ্যমে ট্রয় শহর দখল করেছিল গ্রিকেরা। জিতেছিল ‘ট্রোজ়েন’ যুদ্ধ। অধীরকে সেই ‘ট্রোজ়েন’ ঘোড়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন অভিষেক।
সন্দেশখালিতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে ইডি আধিকারিকেরা আক্রান্ত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি করেছিলেন অধীর। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল জানান, এটা প্রদেশ কংগ্রেসের মত হতে পারে। জাতীয় কংগ্রেসের নয়। অধীর যদিও তাতে থামেননি। তার পরেও আক্রমণ করেছেন তৃণমূলনেত্রী এবং রাজ্যের শাসকদলকে। লোকসভা ভোটে তৃণমূলনেত্রী বাংলায় কংগ্রেসকে দুটো আসন (বহরমপুর এবং মালদহ দক্ষিণ) ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে সাংবাদিক বৈঠকে জানান অধীর। সেখানেই বহরমপুরে তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে মমতাকে চ্যালেঞ্জ ছোড়েন। তিনি বলেন, ‘‘আমি আপনাকে বলছি, আপনি আসুন এখানে আমার বিরুদ্ধে লড়তে। কত ক্ষমতা আছে দেখছি আপনার।’’
এ নিয়ে সোমবার সরব হয়েছে অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আপনি প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি, আপনি বলছেন মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা থাকলে আমার বিরুদ্ধে লড়ুন! যে মহিলা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছেন, আপনি তাঁকে বলছেন আমার বিরুদ্ধে লড়ুন!’’ তবে অভিষেক এ-ও জানিয়েছেন, ইন্ডিয়া জোটেই থাকছে তৃণমূল। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ছ’মাস আগেও বলেছি ইন্ডিয়ার সঙ্গে রয়েছি। আজও একই অবস্থান। সে জোটে কে থাকল না থাকল, আমাদের কোনও ইগো নেই।’’