অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি তুললেও কংগ্রেস হাই কমান্ড তার সঙ্গে একমত নয়। আজ কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল জানিয়েছেন, এটা প্রদেশ কংগ্রেসের মত হতে পারে। জাতীয় কংগ্রেসের নয়। কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্ব এমন কোনও দাবি তুলছেন না।
আগামী সপ্তাহেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের আলোচনা শুরু হতে চলেছে। তার পরে ‘ইন্ডিয়া’র আহ্বায়ক বা সংযোজক নীতীশ কুমারকে বসানোর প্রস্তাব নিয়ে বিরোধী শিবিরের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা। এর পরে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ শুরু হবে। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছেন, রাহুলের যাত্রা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময়ে তৃণমূল শিবিরের প্রতিনিধি তাতে অংশ নিন। কারণ তৃণমূলের কেউ যাত্রায় যোগ না দিলে সংবাদমাধ্যম রাহুলের কর্মসূচির পরিবর্তে তা নিয়েই হইচই করবে। এই পরিস্থিতিতে আসন সমঝোতা হোক বা না হোক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও রকম তিক্ততা চাইছে না কংগ্রেস হাই কমান্ড।
আসন সমঝোতা নিয়ে আজ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক নেতা ফের বলেছেন, “এই জোট লোকসভা নির্বাচনের জন্য, বিধানসভা ভোটের জন্য নয়। সেটা মাথায় রাখতে হবে। প্রদেশ কংগ্রেসের মত শোনা হবে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কংগ্রেস সভাপতি নেবেন। মতামত স্থানীয় রাজনীতির ভিত্তিতে হতে পারে। সিদ্ধান্ত জাতীয় রাজনীতির ভিত্তিতে হবে। শরিকদের সঙ্গে আলোচনার সময়ে কংগ্রেস জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষিত মাথায় রাখবে।”
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ও রাহুল দু’জনেই বিভিন্ন রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সময়ে বিজেপিকে হারাতে ‘ইন্ডিয়া’র ঐক্যের প্রয়োজনের কথা বলেছেন।
সন্দেশখালির ঘটনার পরে বিজেপি যেমন রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছে, তেমনই অধীরও বলেছেন, “রাষ্ট্রপতি শাসন জরুরি। বিজেপি করে দেখাক। কবে হবে?” কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকলে এখনই রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি তুলতেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল বলেন, “এটা এআইসিসি-র মত নয়। প্রদেশ কংগ্রেসের মত হতে পারে। কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্ব এমন কোনও দাবি তুলছেন না।” তাঁর বক্তব্য, কোনও রাজ্যে সমস্যা তৈরি হলে সেটা রাজ্য স্তরেই আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
শুধু রাজনৈতিক কৌশল নয়। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের যুক্তি, নীতিগত ভাবেও কংগ্রেস কোনও বিজেপি বিরোধী দল শাসিত রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি তুলতে চায় না। কারণ রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির অর্থ বিজেপির হাতে প্রশাসন চালানোর ভার তুলে দেওয়া। তৃণমূল বিজেপিকে হারিয়েই ক্ষমতায় এসেছে। সেখানে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে কেন্দ্রের বিজেপিই কার্যত সরকার চালাবে।
সন্দেশখালিতে ইডি-র অফিসারদের উপরে হামলা নিয়ে মন্তব্য না করলেও মল্লিকার্জুন আজ কংগ্রেস, তৃণমূল, আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডিকে কাজে লাগানো নিয়ে সরব হয়েছেন। খড়্গে বলেন, “বিজেপি সরকার খোলাখুলি ইডি, সিবিআই, আয়কর, অন্য ছোটখাটো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে বিরোধী নেতা, তাঁদের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। নিজের মত চাপানোর চেষ্টা করছে। কখনও কংগ্রেসের কাউকে, কখনও তৃণমূলের কাউকে ধরে, মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। বিজেপিতে যোগ দিলেই তাঁরা পরিচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছেন। শাহ সাহেবের কাছে এত বড় ড্রাইক্লিনিং কারখানা রয়েছে!”
কংগ্রেস জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমারকে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয়কারী বা সংযোজকের ভূমিকায় নিয়ে আসতে চাইছে। এই বিষয়টি আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করে ফেলতে চায় কংগ্রেস। তার জন্য ‘ইন্ডিয়া’র একটি ভার্চুয়াল বৈঠকও ডাকা হতে পারে। নীতীশের বিষয়ে কংগ্রেসের প্রস্তাবে তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথমে সায় জানিয়েও পরে আবার বেঁকে বসেছেন। সেখানেও কারণ ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে অধীরের আক্রমণ। মমতা দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে খড়্গে ‘ইন্ডিয়া’র চেয়ারপার্সন, নীতীশ আহ্বায়ক, এমন কিছু হবে কি না, তা নিয়ে আজ খড়্গে বলেন, “এটা কউন বনেগা ক্রোড়পতির মতো প্রশ্ন। যখন আমাদের বৈঠক হবে, সেখানে কোন পদে কে বসবেন, তা ১০-১৫ দিন পরে ঠিক হয়ে যাবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন। কোথাও কোনও
সমস্যা নেই।”
খড়্গে জানিয়েছেন, ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলিকে নিয়ে গোটা দেশে সাত-আটটি জনসভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানেও রাজ্য স্তরে তিক্ততার কারণে তৃণমূল বা অন্য কোনও দল অনুপস্থিত থাকুক, তা কংগ্রেস নেতারা চান না। খড়্গে বলেন, “একটি করে জনসভার স্থান-কাল ঘোষণা হবে। এতে কোনও দ্বিমত নেই। সবাই জনসভায় অংশ নেবেন।”