উত্তর কলকাতার রাজনীতিতে একই দল করলেও সুদীপ ও তাপস পরস্পর বিরোধী বলেই পরিচিত।
তৃণমূলের অন্দরে তাঁদের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। এ বার প্রকাশ্যেই চলে এল দলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতক তাপস রায়ের ‘দ্বৈরথ’। আপাতত একতরফা ভাবেই, নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে গিয়ে সুদীপের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন তাপস। উত্তর কলকাতার শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতার বাড়িতে কলকাতা উত্তরের তৃণমূল সাংসদ কেন গিয়েছিলেন, তাপস তা নিয়ে শুধু সন্দেহ প্রকাশই করলেন না, দলের প্রতিও প্রকাশ্য বার্তা দিয়ে বললেন, ‘‘দলের উচিত যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে দলের কাছে আনুগত্য দেখিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আস্থা রাখা। ’’
মঙ্গলবার বৌবাজারে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকেছিলেন বরাহনগরের বিধায়ক তাপস। শুরুতেই তিনি বলেন, ‘‘দলে এমন অনেক লোক রয়েছেন যাঁরা দলনেত্রীকে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছেন, সঙ্গে বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন।’’ কোনও বিশেষ নেতাকে উদ্দেশ্য করে কি তিনি এ কথা বলছেন? প্রশ্ন উঠতেই তাপস বলেন, ‘‘উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি হয়েছেন তমোঘ্ন ঘোষ। তাঁর ও তাঁর পিতার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এ কথা সকলেরই জানা।’’ তাপসের দাবি, ‘‘এ বার দুর্গাপুজোয় তমোঘ্ন ঘোষের বাড়িতে আমন্ত্রিত ছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী ও কল্যাণ চৌবে। প্রত্যেকেই পুজোর এক দিন সেখানে গিয়েছিলেন।’’ তবে তমোঘ্নের বাড়িতে সুদীপ-শুভেন্দু-কল্যাণের কোনও বৈঠক হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তাপস।
প্রয়াত সোমেন মিত্রের হাত ধরে এক সময় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তমোঘ্ন। পরে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। তাপসের দাবি, ‘‘তমোঘ্নকে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি করতে চেয়ে তাঁকে দলনেত্রীর কাছে নিয়ে গিয়ে দরবার করেছিলেন সুদীপ। এ কথা দলের সবারই জানা।’’ তমোঘ্নকে উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি করতেও সুদীপের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও আলতো করে তুলে দিয়েছেন তাপস। প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতেই উত্তর কলকাতা বিজেপি সভাপতি পদ থেকে কল্যাণকে সরিয়ে, সেখানে আনা হয়েছে তমোঘ্নকে।
উত্তর কলকাতার রাজনীতিতে একই দল করলেও সুদীপ ও তাপস পরস্পর বিরোধী বলেই পরিচিত। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর সুদীপকে সরিয়ে তাপসকে উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূলের সভাপতি করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর ৮ মার্চ নজরুল মঞ্চে আবারও মমতা উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি দায়িত্ব তুলে দেন সুদীপের হাতে। সঙ্গে জানিয়ে দেন, সুদীপের অনুরোধেই তাপসের থেকে দায়িত্ব নিয়ে আবারও লোকসভার দলনেতার হাতে সভাপতির দায়িত্ব দিচ্ছেন তিনি। তৃণমূল সূত্রে খবর, এই ঘটনার পর থেকে তাপস-সুদীপ সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে।তাপসের অভিযোগ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সুদীপকে তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি বা ধরতে পারেননি।