Lok Sabha Election 2024

এতদিনে বিজেপির বিরুদ্ধে ঠিকঠাক প্রতিশোধ নেওয়া গিয়েছে! তৃণমূলে ‘সু-পবন’ বইয়ে ঘনিষ্ঠমহলে বাবুল

পবন সিংহ বাঙালি মহিলাদের অপমান করেছেন! বিজেপি মেনে নিলেও দেরি হয়ে গিয়েছে। সমাজমাধ্যমে দাবি করলেন তৃণমূল বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়। ‘বাঙালি-বিদ্বেষী’ বলে একহাত নিলেন নিজের প্রাক্তন দলকে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪ ১৬:৪৩
image of babul

পবন সিংহকে (বাঁ দিকে) প্রার্থী করা নিয়ে বিজেপিকে একহাত বাবুল সুপ্রিয়র (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ভোজপুরি ছবির নায়ক-গায়ক পবন সিংহ যে বাঙালি মহিলাদের ‘অপমান’ করেছেন, তা প্রথম সর্বসমক্ষে এনেছিলেন আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ তথা অধুনা রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাঁকে নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠার পরে নাম ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভোটের লড়াই থেকে সরে গিয়েছেন আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী। যার পরে বাবুল তাঁর ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, এতদিনে বিজেপির ‘ঠিকঠাক প্রতিশোধ’ নেওয়া গিয়েছে।

Advertisement

সোমবার মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠেরা দাবি করেছেন, আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি শনিবার পবনের নাম ঘোষণা করতে প্রথম মাঠে নেমেছিলেন বাবুল। তিনিই প্রথম অভিযোগ করেন যে, ভোজপুরি অভিনেতা নিজের ছবিতে-গানে বাঙালি মহিলাদের ‘অপমান’ করেছেন। সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেন বাবুল। তার পরেই বিষয়টি ধরে নেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। পবনের ছবি, গানের ভিডিয়ো তুলে ধরেন।

রবিবার পবন সমাজমাধ্যমেই ঘোষণা করেন, তিনি আসানসোলে লড়ছেন না। এর পরে সোমবার বাবুল আবার নিশানা করেন বিজেপিকে। তিনি জানান, বিজেপি মেনে নিয়েছে যে, পবন মহিলাদের অপমান করেছেন। বাবুল নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘বিজেপির এক বিধায়ক তথা রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক মেনে নিয়েছেন যে, পবন সিংহ বাঙালি মহিলাদের অপমান এবং অসম্মান করেছেন! কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেল! বিজেপির নারীবিদ্বেষী মনোভাব এবং বাঙালি মহিলা ও সংবেদনশীলতার প্রতি তাদের অসম্মান প্রকাশ্যে এসেছে। কী ভাবে তারা পবনজিকে বাঁচিয়ে চলেছে!’’ বাবুলের নিশানায় বিজেপির বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। যিনি ঘটনাচক্রে আবার আসানসোলেরই বিধায়ক। ওই প্রসঙ্গে তিনি অগ্নিমিত্রার একটি মন্তব্যও তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি জানিয়েছেন, প্রাক্তন দল বিজেপির প্রতি এখন তাঁর মনে শুধুই ‘বিদ্বেষ’ রয়েছে। কারণ, দলটি বাঙালিকে ‘ঘৃণা’ করে।

২০১৯ সালে বাবুল আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন। তার পরে তিনি কেন্দ্রে মন্ত্রীও হন। ২০২১ সালে তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। সাংসদপদ থেকেও ইস্তফা দেন। তার পর আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হন শত্রুঘ্ন সিন্‌হা। তিনি হারিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রাকে। পরে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হন অগ্নিমিত্রা।

পবনের ঘোষণার পরে বাবুল সমাজমাধ্যমে যে পোস্ট করেছিলেন, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি অগ্নিমিত্রা। বাবুলকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেও ইঙ্গিত করেন তিনি। তবে পবনের নাম না করে জানিয়ে দেন, কেউ মহিলাদের অসম্মান করলে তিনি অতীতের মতোই তীব্র প্রতিবাদ করবেন। অগ্নিমিত্রার ওই মন্তব্যকেই সমাজমাধ্যমে তুলে ধরেছেন বাবুল। নিশানা করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও। বাবুল লিখেছেন, ‘‘ওই বিধায়কের আমাকে নিয়ে মন্তব্য করার অধিকার নেই। ওদের বিরোধী দলনেতা ‘পাল্টিবাজ’। যে দল ওয়াশিং মেশিন হিসাবে পরিচিত এবং সকল দলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের ঠাঁই দেয়, তাদের দলের নেত্রীকে অন্য কাউকে বিশ্বাসঘাতক বলার আগে দ্বিতীয় বার ভাবা উচিত।’’

এর পরেই বাবুল স্পষ্ট করেন, তিনি অতীতে বিজেপির সদস্য হলেও এখন তাদের ঘৃণা করেন। কারণ, তাদের ‘বাঙালি বিদ্বেষ’। বাবুল লেখেন, ‘‘এটা সত্যি যে, বিজেপি হিসাবে নিজের সেরাটা দিয়েছি। তবু এখন ওদের জন্য শুধুই ঘৃণা রয়েছে মনে।’’ বাবুল আরও লিখেছেন, ‘‘ওরা (বিজেপি) বাঙালিদের ঘৃণা করে, নিজের দলের কর্মীদের সম্মান করে না।’’

শনিবার তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তীও নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) লিখেছিলেন, ‘‘ভোজপুরিতে প্রকাশিত পবনের বিভিন্ন গান এবং ভিডিয়োতে বাংলার মহিলাদের প্রতি অশালীনতা প্রকাশ পেয়েছে।’’ তৃণমূলের আর এক মুখপাত্র ঋজু দত্ত আবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এক ভোজপুরি অভিনেত্রীর কথা উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, ‘‘ভোজপুরি অভিনেত্রী অক্ষরা সিংহ আসানসোলের মানুষকে কিছু বলতে আসবেন। অপেক্ষা করুন।’’ সরব হন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাগরিকা ঘোষও।

আরও পড়ুন
Advertisement