CBI Questions Abhishek Banerjee

সিবিআইয়ের মুখোমুখি অভিষেক, কুন্তলের চিঠি মামলায় তৃণমূল সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদ

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাজিরা ঘিরে নিজাম প্যালেসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অভিষেককে তলবের নেপথ্যে বিজেপির ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৩ ১০:৫৯
photo of abhishek banerjee.

নিজাম প্যালেসে পৌঁছলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।

সিবিআই দফতরে পৌঁছলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সকাল ১১টায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে তলব করা হয়েছিল। সেই মতো সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে কালীঘাটের বাড়ি থেকে রওনা দেন অভিষেক। সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে নিজাম প্যালেসে (কলকাতায় যেখানে সিবিআই দফতর রয়েছে) পৌঁছলেন তৃণমূল সাংসদ। নিজাম প্যালেসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অভিষেককে যে দিন তলব করল সিবিআই, সে দিন সকাল থেকে আর এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করছে ‘কালীঘাটের কাকু’কে (আসল নাম সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র), হানা দিয়েছে তাঁর বাড়ি, অফিস-সহ একাধিক জায়গায়।

ধর্মতলায় শহিদ মিনারের সভা থেকে অভিষেক দাবি করেছিলেন, হেফাজতে থাকার সময় মদন মিত্র, কুণাল ঘোষকে তাঁর নাম নিতে বলেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর পর পরেই রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুব নেতা কুন্তল ঘোষ দাবি করেন যে, অভিষেকের নাম বলার জন্য তাঁকে ‘চাপ’ দিচ্ছে ইডি, সিবিআই। এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানিয়ে নিম্ন আদালতে চিঠি দেন কুন্তল। পুলিশি হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠান হেস্টিংস থানাতেও। তার পরে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, প্রয়োজনে সিবিআই বা ইডি অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।

Advertisement

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণের পরই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক। পরে ওই মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে সরিয়ে বিচারপতি সিন্‌হার এজলাসে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশই বহাল রাখেন বিচারপতি অমৃতা সিন্‌হা। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির জন্য উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছিলেন অভিষেক। শুক্রবার সেই আবেদন জরুরি ভিত্তিতে শুনতে রাজি হয়নি বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের কাছে ফেরত যায় মামলা। কিন্তু প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের বেঞ্চও জরুরি ভিত্তিতে সেই আবেদন শুনতে রাজি হয়নি। অবকাশকালীন বেঞ্চে অভিষেকের আবেদন জমা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন অভিষেক।

আদালতে অভিষেকের আবেদনের মধ্যেই শুক্রবার বিকেলে সিবিআই তলবের নোটিস পান অভিষেক। সেই সময় তৃণমূলের ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে বাঁকুড়ায় ছিলেন সাংসদ। সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে কলকাতায় ফেরার জন্য কর্মসূচি কাটছাঁট করেন অভিষেক। শুক্রবার রাতে কলকাতায় ফেরেন তিনি। কলকাতায় ফেরার আগে শুক্রবার ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে বাঁকুড়ার সোনামুখীতে সভা করেন অভিষেক। ওই সভা থেকে তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন, সম্মান করি। যদি আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মেলে, আমি সেই বিচারপতিকেই বলব ফাঁসির আদেশ দিতে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওদের কাছে আমি মাথা নিচু করিনি। আমি মাথা নিচু করব মানুষের কাছে, বাবা-মায়ের কাছে, দলনেত্রীর কাছে। কিন্তু দিল্লির বহিরাগতদের কাছে মাথা নত করব না। এসএসসিতে যদি আমার বিরুদ্ধে কিছু পাওয়া যায় আমি ফাঁসির মঞ্চে জীবন দেব।’’

বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে শুক্রবার একটি সভা করার কথা ছিল অভিষেকের। সিবিআইয়ের নোটিস পাওয়ার পর কলকাতা ফিরবেন বলে সেই সভা করতে পারেননি সাংসদ। শেষে কলকাতা থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ওই সভা করেন দলনেত্রী মমতা। ওই সভা থেকে বিজেপিকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অভিষেককে বিজেপি ভয় পায়। বিজেপির কাছে মাথা নত করব না। তর্জন-গর্জন করে আমাদের দমানো যাবে না। বিজেপিকে দেশছাড়া না করা পর্যন্ত লড়াই চলবে।’’ একই সঙ্গে মমতা অভিযোগ করেন যে, ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচি বন্ধ করতেই অভিষেককে নোটিস পাঠানো হয়েছে।

অভিষেককে সিবিআই তলব নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শুক্রবার টুইটারে লেখেন, ‘‘বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এ বার ঘুঘু তোমার বধিব পরান।’’ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে সিবিআই তলব করতে বাধ্য হয়েছে। ওঁর উচিত, তদন্তে সহযোগিতা করা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement