মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে আগামী ৬ ডিসেম্বর ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক ডাকার কথা বলেছেন বটে। কিন্তু ওই বৈঠকে জোটের অন্যতম শরিক তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দিচ্ছেন না। রবিবার তৃণমূল সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। বস্তুত, তৃণমূল নেত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকের কথা জানিয়ে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর কাছে খড়্গের ফোনও আসেনি। ঘটনাচক্রে, ৬ তারিখেই মমতার উত্তরবঙ্গ যাওয়ার কথা। তাঁর ফেরার কথা ১২ তারিখে। অর্থাৎ, ৬ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনওদিনই মমতার পক্ষে ‘ইন্ডিয়ার বৈঠকে থাকা সম্ভব হবে না।
এই পরিস্থিতিতে ৬ তারিখের বৈঠক হবে কিনা, হলেও সেখানে মমতা তৃণমূলের তরফে কাউকে পাঠাবেন কি না, তা এখনও জানা যায়নি। জানা যায়নি এ-ও যে, ‘ইন্ডিয়া’র অন্য শরিকদের মধ্যে কারা ওই বৈঠকে যেতে সম্মত হয়েছেন। উল্লেখ্য, ‘ইন্ডিয়া’র একটি সমন্বয় কমিটি তৈরি হয়েছিল। তার অন্যতম সদস্য তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার তিন রাজ্যে কংগ্রেসের ‘ভরাডুবি’র পরে বিরোধী শিবিরে তাদের ‘রোয়াব’ নিঃসন্দেহে কমবে। জোটের অনেক শরিকই মনে করে, জোটের মধ্যে কংগ্রেস বরাবর একটা ‘উচ্চতা’ নিয়ে থেকেছে। এমনকি, এই চার রাজ্যে ভোটের সময়েও আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেস অনেক ক্ষেত্রেই ‘দাদাগিরি’ দেখিয়েছে। যা অবাঞ্ছিত। সে কারণেই ভোট কাটাকাটিতে তিনটি রাজ্যএ বিজেপি অনেক সুবিধা পেয়ে গিয়েছে বলে জোটের অনেক শরিকই মনে করে। তৃণমূলও সেই ধারনার শরিক। বাংলার শাসকদলের এক প্রথমসারির নেতার বক্তব্য, ‘‘আমাদের নেত্রী প্রথম থেকেই ভোট ভাগাভাগি না-হতে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে তাতে আমল দেওয়া হয়নি। তারই ফল এই বিপর্যয়।’’
সূত্রের খবর, তিনটি রাজ্যে পরাজয়ের পরে (তার মধ্যে দু’টি হাতছাড়া হওয়ার পরে) মমতাও কংগ্রেসকে চাপে রাখতে চাইছেন। লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রশ্ন উঠবেই। কংগ্রেস মমতার কাছে অন্তত চারটি আসন চাইবে বলেই সূত্রের খবর। কিন্তু রবিবারের ফলাফলের পর মমতা কংগ্রেসকে দু’টির বেশি আসন ছাড়তে চাইবেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে ‘ইন্ডিয়া’র অন্দরেও মমতা কংগ্রেসের উপর ‘চাপ’ তৈরি করতে চাইছেন। বিজেপি একের পর এক রাজ্য কংগ্রেসের থেকে ছিনিয়ে নিলেও পশ্চিমবঙ্গে মমতাই ‘মোদীঝড়’ সাফল্যের সঙ্গে রুখে দিতে পেরেছেন। ফলে কংগ্রেস যত ব্যর্থ হচ্ছে, বিরোধী শিবিরে মমতার উচ্চতাও তত বাড়ছে। রবিবার কংগ্রেসের নির্বাচনী বিপর্যয়ের পরে রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গেরা আরও খানিকটা ‘ব্যাকফুটে’ গেলেন বলেই অনেকে মনে করছেন। তাঁরা এ-ও মনে করছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে আসন সমঝোতার নিরিখে কংগ্রেসকে ‘বাগে পাওয়ার’ এই সুযোগ মমতা ছাড়বেন না। তিনি চাইবেন, ৪২টি আসনের মধ্যে ৪০টি আসনেই প্রার্থী দিতে। কংগ্রেসের ভরাডুবি তাঁকে সেই পরিসর তৈরি করে দিয়েছে। তৃণমূলের নেতাদের একাংশের মতে, কংগ্রেসকে এই বার্তা দেওয়ার এটাই প্রকৃষ্টতম সময় যে, জোট করতে গেলে ‘দাদাগিরি’ করলে চলবে না!
রবিবার সকালে চার রাজ্যের ভোটগণনা প্রাথমিক রাউন্ডে থাকার সময়েই সংবাদসংস্থা জানায়, কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতাদের ফোন করে বলছেন, ৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে জোটের পরবর্তী বৈঠক হবে। যদিও মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র শেষ বৈঠকের পর জোট নিয়ে বিশেষ কোনও উচ্চবাচ্য দেখা যায়নি কংগ্রেসের তরফে। পাঁচ রাজ্যের ভোটেও কংগ্রেস কারও সঙ্গে বোঝাপড়া করা বা যৌথ সভার পথে যায়নি। তিন রাজ্যে কংগ্রেসের হারের পর তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ‘ইন্ডিয়া’র অনেক শরিক। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ যেমন বলেছেন, ‘‘ওই তিন রাজ্যে বিজেপির জয় হয়নি। এটাকে কংগ্রেসের ব্যর্থতা হিসেবে দেখাই শ্রেয়।’’ কুণালের ওই বক্তব্য থেকেও তৃণমূলের পরবর্তী পদক্ষেপ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল অনেকটাই। এর পরে মমতা যদি ৬ তারিখের বৈঠকে না-যান, তা হলে কংগ্রেসের উপর ‘চাপ’ আরও বাড়বে।