বিধানসভায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পেশের প্রস্তুতি রাখছে তৃণমূল। ফাইল চিত্র।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত ক্রমশ বাড়ছে। শনিবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ দিল্লি এবং নবান্নকে খামবন্দি গোপন চিঠি পাঠিয়ে বাংলার রাজনৈতিক মহলে উৎকণ্ঠার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। তাই অন্দরে অন্দরে বিধানসভায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনার বিষয়েও প্রস্তুতি রাখছে তৃণমূল পরিষদীয় দল। সদ্যসমাপ্ত বাদল অধিবেশনে সেই প্রস্তাব আনার কথা ভাবা হলেও, একেবারে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল করে সেই প্রস্তাব বিধানসভায় পেশ করেনি তৃণমূল পরিষদীয় দল।
গত বৃহস্পতিবার অধিবেশন শেষে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিধানসভার অধিবেশন মুলতুবি রাখা হচ্ছে। তবে বিধানসভার এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, বিশেষ প্রয়োজনে ডিসেম্বর মাসের অনেক আগেই আবার জরুরি ভিত্তিতে অধিবেশন ডাকতে পারেন স্পিকার। সেই অধিকার সংবিধানের ক্ষমতাবলে তাঁর রয়েছে। তাই সরকারপক্ষ নিজের সুযোগ-সুবিধা বুঝে স্পিকারকে ফের অধিবেশন ডাকার অনুরোধ করলে সংক্ষিপ্ত কোনও অধিবেশন হতেই পারে।
নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত শুক্রবার থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে। জি২০ উপলক্ষে দিল্লি যাত্রা থেকে বিদেশে বিনিয়োগ আনতে যাওয়ার কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। তার পরেই রাজ্য জুড়ে উৎসবের মরসুম শুরু হয়ে যাবে। তাই এমতাবস্থায় রাজ্য সরকার আর রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনতে চায়নি। কিন্তু যে ভাবে রাজ্যপাল একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে সংঘাতে যাচ্ছেন, তাতে ক্ষুব্ধ নবান্ন। তাই বিধানসভায় আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।
যদিও, পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকার এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও সিদ্ধান্ত না নিলে মন্ত্রী হিসেবে আমার পক্ষে কোনও বিবৃতি দেওয়া সম্ভব নয়।’’ কিন্তু বিধানসভার একটি সূত্র বলছে, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা ছাড়াও কলকাতা পুরসভার একটি সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার কথা ছিল বাদল অধিবেশনে। কিন্তু দু’টি বিষয় অধিবেশনে পেশ না করে তা স্থগিত করে দিয়েছেন স্পিকার। তাই মনে করা হচ্ছে, যে কোনও দিন জরুরি ভিত্তিতে অধিবেশন ডেকে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব এবং ওই সংশোধনী বিলটি আনা হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা হলে তা হবে নজিরবিহীন ঘটনা। কারণ, এর আগে পশ্চিমবঙ্গে আসা বিভিন্ন রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাত হয়েছে শাসকদলের। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করেনি কোনও শাসকদল।