অয়ন শীল। —ফাইল ছবি।
নিজের সংস্থার কর্মচারীদের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে পুর নিয়োগ দুর্নীতির মূল অভিযুক্ত অয়ন শীল কয়েক কোটি কালো টাকা জমা দিয়ে সাদা করেছিলেন। আদালতে পেশ করা নথিতে এমনই দাবি করল সিবিআই।
সম্প্রতি আলিপুরে সিবিআই বিশেষ আদালতে পুর নিয়োগ দুর্নীতির চার্জশিটের পাশাপাশি বহু নথি জমা দিয়েছেন তদন্তকারীরা। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, অয়নের সংস্থা এবিএস ইনফোজ়োন-এর বেশ কয়েক জন কর্মচারীর নামে সল্টলেকের সেক্টর থ্রি এলাকায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। সিবিআই সূত্রে দাবি, তপন গড়াই নামে অয়নের এক কর্মচারী লিখিত বয়ানে জানিয়েছেন, তাঁর নামে অয়ন সল্টলেকের সেক্টর থ্রি এলাকায় একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। তবে তাঁর নামে খোলা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় নথি, অর্থাৎ পাসবই, চেকবই ও এটিএম কার্ড তাঁর নিজের কাছেই রাখতেন অয়ন। ইচ্ছা মতো চেকে ওই কর্মীকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হত। ওই কর্মচারীর নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালের পর থেকে ১৬-১৭ লক্ষ টাকা জমা হয় এবং তা তুলেও নেওয়া হয় বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর।
তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, অয়নের পরিবারের লোকজন এবং অন্য ঘনিষ্ঠদের নামেও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। ওই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই দুর্নীতির কোটি কোটি কালো টাকার লেনদেন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তদন্তকারীদের দাবি, বাঁকা পথে অযোগ্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন এজেন্ট ও মিডলম্যান (মধ্যস্থতাকারী) মারফত আসা লক্ষ লক্ষ টাকা অয়ন নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা হত। তার পরে ওই টাকা তুলেও নেওয়া হত। অয়নের অফিসের বেশির ভাগ কর্মচারীর মাসিক বেতন ছিল ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু তাঁদের নামে খোলা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন করা হয়েছিল।
অয়নের একাধিক কর্মচারীই তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ইচ্ছা মতো আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে লিখিত বয়ান দিয়েছেন বলে জানাচ্ছে সিবিআই। তাতেই দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করার তথ্য উঠে আসছে।
তদন্তকারীদের দাবি, অয়নের অফিসে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা ২৫টির মতো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পাওয়া গিয়েছিল। ওই সব নথি যাচাই করা হয়েছে। এবিএস ইনফোজ়োন-এর একাধিক ডিরেক্টরের নামেও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। অয়নের স্ত্রী কাকলিও ওই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন।
তদন্তকারীদের দাবি, লিখিত বয়ানে কাকলি জানিয়েছেন, তিনি নিজে ডিরেক্টর থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে অন্ধকারে ছিলেন। তাঁকে কিছুই জানানো হত না। পুর নিয়োগের প্রক্রিয়া অয়ন নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে কাকলি জানান।