Minakshi Mukherjee

আর আভাসে-ইঙ্গিতে নয়, দলে মিনাক্ষীর ‘আবিষ্কর্তা’ থাকছেন রবিবার ব্রিগেড সমাবেশের বক্তাতালিকায়

মিনাক্ষী কোনও দিনই জেলাস্তরে সংগঠনের সভাপতি বা সম্পাদক ছিলেন না। তাই সেই অর্থে তাঁর তেমন পরিচিতিও ছিল না। কিন্তু এখন সেই তিনিই ‘মুখ’। যা মেনে নিচ্ছেন প্রবীণ নেতারাও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:০৪
মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।

মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম স্বীকার করে নিয়েছেন, মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ‘মুখ’। প্রবীণ সিপিএম সিপিএম নেতা তথা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু প্রকাশ্যেই বলেছেন, মিনাক্ষী ‘ক্যাপ্টেন’। কিন্তু মিনাক্ষীকে যুব সংগঠনের সামনের সারিতে নিয়ে আসার নেপথ্যে কে?

Advertisement

তিনি আভাস রায়চৌধুরী। মিনাক্ষীর মতোই একদা দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক ও সভাপতি। যিনি এখন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। আভাসকে রবিবারের ব্রিগেডে বক্তা তালিকায় রাখা হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে।

আভাস মিনাক্ষীকে ডাকেন ‘পলি’ বলে, যুবনেত্রীর বাড়ির নামে। আভাস নিজে বর্ধমান থেকে উঠে আসা নেতা। ছাত্র-যুব রাজনীতি যখন করেছেন, তখনও বর্ধমান জেলা পূর্ব-পশ্চিমে ভাগ হয়নি। ফলে মিনাক্ষীর পরিবারের সঙ্গে পরিচিতি ছিল আভাসের। মিনাক্ষীও এসএফআই করতেন। কুলটির শিল্পাঞ্চলে বড় হওয়ার কারণে তাঁর বাংলা-হিন্দি দু'টি ভাষাতেই বক্তৃতা করার পারদর্শিতা রয়েছে। এ হেন তরুণীকে রাজ্য নেতৃত্বে আনার নেপথ্যে আভাসই আলিমুদ্দিনকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর। তার পর কলেজে শিক্ষাকর্মীর অস্থায়ী চাকরি ছেড়ে মিনাক্ষী সিপিএমের সর্বক্ষণের কর্মী (হোলটাইমা) হন। কিন্তু গোটাটাই হয়েছে গত সাড়ে পাঁচ বছরে। আর প্রায় তার কাছাকাছি সময়েই ‘আবিষ্কার’ এবং ‘আবিষ্কর্তা’ জেল খেটেছেন আন্দোলন করতে গিয়ে। আমতার আনিস খানের মৃত্যু নিয়ে হাওড়ার পাঁচলার মিছিলে ধুন্ধুমার কাণ্ড বেধেছিল। সেই মামলায় মিনাক্ষীকে কয়েক সপ্তাহ জেল খাটতে হয়েছিল। আবার বর্ধমানের মিছিলে ভাঙচুরের ঘটনায় আভাসও জেল খাটেন বেশ কিছু দিন।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্মেলন হয় ডানকুনি কোল কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে সংগঠনের নেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন মিনাক্ষী। সেই সময়ে অনেকেই সংগঠনে মিনাক্ষীর নামও জানতেন না। তবে তার আগে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সম্মেলনে মিনাক্ষীকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছিল। সিপিএম সূত্রের খবর, সেই সময় থেকেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল তাঁকে রাজ্য সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়ার।

প্রথম মেয়াদে সভানেত্রী থাকার পর দ্বিতীয় মেয়াদে সম্পাদক করা হয় মিনাক্ষীকে। পাশাপাশি, দলের রাজ্য কমিটিরও সদস্য তিনি। প্রসঙ্গত, মিনাক্ষী কোনও দিনই জেলাস্তরে সংগঠনের সভাপতি বা সম্পাদক ছিলেন না। তাই সেই অর্থে তাঁর পরিচিতিও ছিল না। কিন্তু এখন সেই তিনিই ‘মুখ’। তবে দলের শীর্ষনেতৃত্বের সম্মতি না থাকলে তা সম্ভব হত না। সিপিএমের এক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় জানাচ্ছেন, মিনাক্ষীর জনপ্রিয়তার রেখচিত্র গোড়া থেকেই ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু ইনসাফ যাত্রার সময়ে তাঁকে ঘিরে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তার নেপথ্যে স্বয়ং রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের ভূমিকাও রয়েছে।

রবিবার সমাবেশ হলেও শনিবার সকাল পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে ব্রিগেডের বক্তাতালিকা প্রকাশ করেনি সিপিএমের যুব সংগঠন। তবে সূত্রের খবর, সভায় ছয় থেকে সাত জন বক্তৃতা করতে পারেন। তাঁরা হলেন যুব সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য, এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, সভাপতি প্রতীক উর রহমান, প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক হিসেবে আভাস এবং সেলিম। মিনাক্ষী তো থাকবেনই। কারণ, সিপিএম নেতারা কার্যত মেনেই নিচ্ছেন, রবিবারের ব্রিগেড হতে চলেছে মিনাক্ষীর নামেই।

Advertisement
আরও পড়ুন