vice chancellor

উপাচার্য নিয়োগ কমিটিতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি কেন? রাজ্যের কাছে জবাব তলব প্রধান বিচারপতির

উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই একটি অধ্যাদেশ জারি করে সেই নিয়োগ সংক্রান্ত সার্চ কমিটিতে বদল আনে রাজ্য। কিন্তু সেই বদল নিয়ে প্রশ্ন তুলে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। 

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৩ ১৭:২৮
(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, (ডান দিকে) কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম।

(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, (ডান দিকে) কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে এ বার রাজ্যের কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানতে চেয়েছে, উপাচার্য নিয়োগে রাজ্যের তৈরি নতুন সার্চ কমিটিতে সরকার পক্ষের সদস্য বেশি কেন? সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধিই বা কেন রয়েছেন? জবাব দেওয়ার জন্য রাজ্যকে তিন সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছে হাই কোর্ট।

সোমবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন করে, ‘‘এই কমিটিতে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও সদস্যকে কেন রাখা হয়েছে? যতদূর জানি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের কমিটিতে মুখ্যমন্ত্রীর মনোনীত কোনও সদস্য থাকার কথা নয়! এই কমিটিতে শিক্ষাবিদদের কি রাখা হয়েছে?’’ এর জবাবে রাজ্য জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নিয়ম মাথায় রেখেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সব সদস্যই শিক্ষাবিদ! এর পাল্টা প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, তিন সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে এ বিষয়ে হলফনামা জমা দিতে হবে। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের গঠিত সার্চ কমিটি এখনই কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ করতে পারবে না। পদক্ষেপ করলে মামলকারীরা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। আগামী ৩১ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

Advertisement

রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই রাজ্যের সঙ্গে সঙ্ঘাত বেধেছে রাজ্যপাল তথা রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সিভি আনন্দ বোসের। রাজ্যের অভিযোগ, শিক্ষা দফতরকে না জানিয়েই তিনি নিজের মতো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করছেন। এতদিন উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা দফতরের গড়া সার্চ কমিটির তালিকাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দস্তুর ছিল, বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি নিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরের গড়া সন্ধান কমিটি বা সার্চ কমিটি সম্ভাব্য উপাচার্যদের নামের তালিকা দেবে এবং আচার্যের (পদাধিকারবলে রাজ্যপাল) অনুমোদনের পর সেই তালিকা থেকে উপাচার্যকে বেছে নেওয়া হবে। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে অশান্তির মধ্যেই একটি অধ্যাদেশ জারি করে সেই সার্চ কমিটিতে বদল আনে রাজ্য। কিন্তু সেই বদলের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাল্টা জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে।

কলকাতা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটির গঠনে বদল এনেছিল রাজ্য। নতুন নিয়মে কমিটিতে তিন জনের পরিবর্তে পাঁচ জন সদস্য থাকবেন। আগের সার্চ কমিটির তিন সদস্যের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য তথা রাজ্যপাল, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি এবং রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি। এখন পাঁচ সদস্যের মধ্যে থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য তথা রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীর এক জন প্রতিনিধি, উচ্চ শিক্ষা দফতরের এক জন প্রতিনিধি, উচ্চ শিক্ষা সংসদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর এক জন করে প্রতিনিধি। বাদ পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি। আর এই নতুন নিয়ম নিয়েই আপত্তি তুলেছেন মামলাকারীরা। তাঁদের যুক্তি, নতুন কমিটিতে রাজ্য সরকারের তিন প্রতিনিধি থাকার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, রাজ্য কোনও সিদ্ধান্ত নিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে তা সহজেই পাশ হয়ে যাবে ওই কমিটিতে। এমনকি, সে ক্ষেত্রে রাজ্যপালের মতামত এড়িয়ে যাওয়ারও সংস্থান রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement