—ফাইল চিত্র।
তাঁর বিরুদ্ধেই সন্দেশখালিতে গ্রামবাসীকে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ এনেছিল ইডি। অবশেষে সন্দেশখালির ঘটনার প্রায় ১০ দিন পর ‘খোঁজ মিলল’ সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের। সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। আইনজীবী মারফত শাহজাহান হাই কোর্টকে জানান, তিনি সন্দেশখালির মামলায় যুক্ত হতে চান। কারণ, তিনি চান এই ঘটনায় তাঁর বক্তব্যও শোনা হোক।
গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে আক্রান্ত হন ইডির আধিকারিকেরা। রেশন দুর্নীতির তদন্তে ওই তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু ইডির আধিকারিকেরা সন্দেশখালির সরবেরিয়া গ্রামে শাহজাহানের বাড়ির সামনে দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও দরজা খোলা হয়নি। যদিও ইডি মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান পরীক্ষা করে দেখতে পায় শাহজাহান তাঁর বাড়ির ভিতরেই আছেন। ইডির আধিকারিকেরা এর পর দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করতেই তাঁদের ঘিরে ধরেন হাজার খানেক গ্রামবাসী। ইট, পাথর, লাঠি নিয়ে তাঁরা চড়াও হন ইডি কর্তাদের উপর। ওই ঘটনায় জখম হন তিন ইডি কর্তা। তাঁদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও ভর্তি করাতে হয়। এর পরই সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে হাই কোর্টে মামলা করে ইডি।
ইডির আইনজীবী এসভি রাজু এবং ধীরাজ ত্রিবেদী সন্দেশখালির ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন। সোমবার সেই মামলাতেই বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শাহজাহানের আইনজীবী। তিনি বলেন, তাঁর মক্কেলও ওই মামলায় যুক্ত হতে চান। যদিও আদালত এই আবেদনে পাল্টা ভর্ৎসনা করেন শাহজাহানের আইনজীবীকেই। কী ভাবে কথোপকথন এগোল তা তুলে দেওয়া হল—
বিচারপতি: সন্দেশখালির ঘটনায় কত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে? সেখানে কত জন ছিলেন?
কিশোর দত্ত (রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল): ওই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তের জন্য একটি ‘সুপারভিশন টিম’ বা তত্ত্বাবধান দল গঠন করা হয়েছে। তদন্তে নজরদারির জন্য ওই দলে রয়েছেন এসডিপিও, ডিএসপি এবং সার্কুলার ইন্সপেক্টর। অভিযোগ মোতাবেক প্রায় ৩ হাজার লোক ছিল।
বিচারপতি: ইডির অভিযোগ বাড়ির ভিতর থেকে শাহজাহান ওই লোকেদের উস্কানি, প্ররোচনা দিয়েছিলেন। তার পরেই হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনার পরে আপনারা কি শাহজাহানের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন?
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল: না।
বিচারপতি: কেন করেননি? আপনাদের কাজ আদালতকে অবাক করছে! এ তো পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল: ঘটনার ১২ ঘণ্টা পরে ইডি এফআইআর দায়ের করেছে। ঘটনার পরের দিন শাহজাহানের বাড়িতে গিয়েছিল পুলিশ। এখনও পর্যন্ত তারা তিন বার সেখানে গিয়েছে। বাড়ি তালাবন্ধ রয়েছে।
শাহজাহানের আইনজীবী: আমার মক্কেল চান তাঁকে এই মামলায় যুক্ত করা হোক। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার বক্তব্যও শোনা হোক।’’
বিচারপতি (ভর্ৎসনার সুরে) : এত ক্ষণ ধরে পাশ থেকে আপনি রাজ্যের এজিকে বিরক্ত করছিলেন। এটা ঠিক নয়। প্রভাব খাটানোর কোনও চেষ্টা করবেন না। আপনার মক্কেল কেন আত্মসমর্পণ করেননি?
শাহজাহানের আইনজীবী: আমার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ইডির অভিযান সঠিক ছিল না।
বিচারপতি: তবুও আপনার ইডির সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত।
সিবিআইয়ের আইনজীবী: মামলায় যুক্ত হতে চাইলে ওকালতনামা জমা দেওয়া হোক।
বিচারপতি: ঠিক আছে। রাজ্যকে এই মামলার কেস ডায়েরি নিয়ে আসতে হবে। আগামিকাল পরবর্তী শুনানি।