— প্রতীকী চিত্র।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ দলের চার বিধায়ককে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করার মতো নানা ঘটনা সামনে রেখে বিধানসভার সদ্যসমাপ্ত বাজেট অধিবেশন বার বার বয়কট করার রাস্তায় হেঁটেছেন বিজেপি বিধায়কেরা। কিন্তু নানা জরুরি বিষয়ে আলোচনায় যোগ না-দেওয়া নিয়ে দলেরই এক বিধায়কের ‘অন্য মত’ সামনে এসেছে। এই আবহে বিজেপি বিধায়কদের একাংশের বক্তব্য, বিধানসভার বাইরের মতো ভিতরে থেকেও সরকার বিরোধিতার স্বর আরও জোরদার করা উচিত। অন্য একটি অংশের অবশ্য মত, অধিবেশন কক্ষের ভিতরে নয়, বরং বয়কট-পথে হেঁটে জনসমক্ষে সরব হওয়া জরুরি।
বাজেট অধিবেশনের শুরুতেই সরস্বতী পুজোয় ‘বাধা’র অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিক্ষোভের জন্য শুভেন্দু, অগ্নিমিত্রা পাল, বঙ্কিম ঘোষ, বিশ্বনাথ কারকদের ৩০ দিনের জন্য নিলম্বিত করা, দুই বিধায়ককে মার্শাল দিয়ে বার করে দেওয়ার মতো বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি বারুইপুরে শুভেন্দুর মিছিলে ‘হামলা’র ঘটনায় গত বৃহস্পতিবারের মতো প্রায়ই অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করে বাইরে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়কেরা।
এই প্রেক্ষিতে চাকদহের বিধায়ক বঙ্কিম বলেছিলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আলোচনায় যোগ না-দেওয়া ঠিক হয়নি। তাঁর মতো এই মত দলের অনেক বিধায়কেরই। এক বিধায়কের বক্তব্য, “বাইরের আন্দোলনের সঙ্গে বিধানসভার ভিতরেও বক্তব্য রাখা দরকার আমাদের।” অন্য এক বিধায়কেরও মত, “মানুষ তাঁদের কথা বিধানসভায় তুলে ধরতে আমাদের নির্বাচিত করেছেন। সেই কাজটা না হলে, আমাদের ভূমিকা নিয়ে জনসাধারণ প্রশ্ন তুলতে পারেন।” বঙ্কিমের নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা, “শাসক কক্ষে কিছু বলতে দেয় না। বিরোধী দলনেতা-সহ বিধায়কদের সাসপেন্ড করে। মুলতুবি প্রস্তাবে আলোচনা হয় না। বিরোধিতা এড়াতে শাসক দল এগুলো করে। আমরা ফাঁদে পা দিই।”
বিজেপির পরিষদীয় দলের সচেতক শঙ্কর ঘোষের বক্তব্য, “বিধানসভা বিরোধীদের, কিন্তু যখন সেটা শাসক মনে করবে। এখানে বিধানসভায় অনুপস্থিত বিধায়ককেও স্পিকার সাসপেন্ড করে দেন।” খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়েরও প্রশ্ন, “মাইক্রোফোন বন্ধ, কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিধানসভার ভিতরে এই সব হলে, বাইরে এসে জরুরি বিষয় জানাতে হবে না?”
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, ২০০৬-এর পরে এমন ভিন্ন মত তৈরি হয় তৎকালীন বিরোধী তৃণমূলের পরিষদীয় দলে। বর্ষীয়ান বিধায়কদের একাংশ বিধানসভার ভিতরে সরকার-বিরোধিতার পথে হাঁটতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে অধিবেশন বয়কট করে বিধানসভার বাইরে এসে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর নির্দেশ ছিল।