Suvendu Adhikari

কনভয় থামিয়ে কুড়মিদের সঙ্গে কথা শুভেন্দুর, দিলীপ-বিতর্কের মধ্যে দিলেন ‘জয় গরাম’ স্লোগানও

বুধবার বাঁকুড়ার সিমলাপালে একটি জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন শুভেন্দু। পথে হরিণটুলি গ্রামে রাস্তার ধারে কুড়মিদের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থেমে যায় তাঁর কনভয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ২১:১৮
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে শোনা গেল কুড়মিদের ‘জয় গরাম’ স্লোগান! নিজস্ব চিত্র।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে শোনা গেল কুড়মিদের ‘জয় গরাম’ স্লোগান! নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কুড়মি নেতৃত্বের বিবাদ চরমে উঠেছে। বুধবার বিজেপি সাংসদের বাড়ির সামনে জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কুড়মি সমাজের প্রতিনিধি। তা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে শোনা গেল কুড়মিদের ‘জয় গরাম’ স্লোগান!

বুধবার বাঁকুড়ার সিমলাপালে একটি জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন শুভেন্দু। পথে হরিণটুলি গ্রামে রাস্তার ধারে কুড়মিদের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থেমে যায় তাঁর কনভয়। এর পর গাড়ি থেকে নেমে মিনিট সাতেক কুড়মি নেতৃত্বের সঙ্গে কথাও বললেন বিরোধী দলনেতা। তার পর ‘জয় গরাম’ স্লোগান দিতে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন।

Advertisement

আদিবাসী হিসাবে স্বীকৃতির দাবীতে কুড়মিরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কুড়মি নেতৃত্ব জানিয়েছেন, তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে তিনি কী ভাবছেন, তা-ই জানতে চাওয়া হয়েছিল বিরোধী দলনেতার কাছে। জবাবে কলকাতায় কুড়মি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। পাশাপাশি, তাঁর বক্তব্য, এ বিষয়ে যা পদক্ষেপ করার, তা রাজ্য সরকার করবে। তবে বিষয়টি বিধানসভায় উত্থাপিত হলে তাঁর যা করণীয়, তিনি তা করবেন।

ঘটনাচক্রে, গত কয়েক দিন ধরে দিলীপ-কুড়মি দ্বন্দ্ব নিয়ে টানাপড়েন চলছে। রবিবার ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড় থানার বামাল গ্রামে দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়ার সময় কুড়মিদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কুড়মিদের জন্য কী করেছেন? পাল্টা দিলীপও দাবি করেন, খেমাশুলিতে আন্দোলনের তিনি কুড়মি নেতাদের নানা ভাবে সাহায্য করেছিলেন। দিলীপের এই মন্তব্যেরও বিরোধিতা করে কুড়মি সমাজ। তার প্রেক্ষিতে সোমবার দিলীপ বলেন, ‘‘ওরা বেশি বাড়াবাড়ি করলে সব ক’টা নেতার কাপড় খুলে দেব। দিলীপ ঘোষের পিছনে যেন লাগতে না আসে।’’ এতেই কুড়মিদের ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে। রানিবাঁধে দিলীপের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। কুড়মিরা হুঁশিয়ারি দেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চেয়ে দিলীপ যদি নিজের মন্তব্য প্রত্যাহার না করেন, তা হলে আগামী ১৭ মে, অর্থাৎ বুধবার ৫০ হাজার কুড়মিকে নিয়ে তাঁর বাড়ি ঘেরাও করা হবে। সেই মতো বুধবার দিলীপের বাড়ির সামনে জমায়েত করেন কুড়মিরা। অভিযোগ, দিলীপের বাংলোর বাইরের লোহার গেটটি লাথি মেরে খুলে ভিতরে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। সেখানে গিয়ে জামা খুলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলে। তার পরেই কুড়মি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা হল শুভেন্দুর।

সিমলাপালের জনসভা শেষেও কুড়মিদের বিক্ষোভ নিয়ে মুখ খোলেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘গত ৮ এপ্রিল রাজ্য কোর কমিটির মিটিংয়ে আমাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বলেছেন, এটি পুরোপুরি একটি জাতির সঙ্গে সরকারের লড়াই। এতে বিরোধী দলের তেমন ভূমিকা নেই। রাজ্য সরকারকেই এর সমাধান করতে হবে। আমাদের দলের কুড়মি নেতারাও এই সমাজের আন্দোলনে আছেন।’’ এই পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করেছেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেছেন, ‘‘এই সমস্যা তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১-এর নির্বাচনের আগে উনি আদিবাসীদের ডেকে তাঁদের মতো করে কথা বলেছেন। আবার কুড়মি নেতাদের ডেকে তাঁদের মতো করে কথা বলেছেন। তাই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই সমস্যা মেটাতে হবে মিথ্যাশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই।’’

শাসক তৃণমূলের অবশ্য দাবি, গোটা ঘটনার জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার। শুভেন্দুকে পাল্টা কটাক্ষ করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এর দায়ভার কেন্দ্রকে নিতে হবে। কেন্দ্র যদি সঠিত নীতিতে চলত, তা হলে এই ধরনের গন্ডগোল সৃষ্টি হত না। আর যে শুভেন্দু অধিকারীর আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি বিরবাহা হাঁসদাকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেন, তাঁর আদিবাসীদের নিয়ে কোনও বলাই উচিত নয়।’’

আরও পড়ুন
Advertisement