জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে তিন জনেই থাকতে পারেন দিল্লিতে। ফাইল চিত্র
সংসদে বাদল অধিবেশন শুরু হল সোমবার। এই অধিবেশনের মধ্যেই কয়েকদিনের জন্য দিল্লি যাবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে খবর,সব ঠিকঠাক থাকলেমমতার সফর শুরু হতে পারে ২৬ জুলাই। আর সেই সময়েই রাজ্যের বিজেপি বিধায়কদের প্রতিনিধি দল নিয়ে দিল্লিতে থাকতে পারেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি সূত্রে খবর, শুভেন্দুরা ২৫ জুলাই দিল্লি যেতে পারেন। মমতা জানিয়েছেন, তিনি দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। একই লক্ষ্য রয়েছে বিজেপি বিধায়ক দলরেও। তৃণমূল সূত্রে খবর, সেই সময়ে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ও দিল্লিতে থাকতে পারেন। তাই সব ঠিকঠাক থাকলেরাজ্য রাজনীতির প্রতিপক্ষদের উপস্থিতিতে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে বঙ্গ রাজনীতির অঙ্গন হয়ে উঠতে পারে দিল্লি।
গত বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘প্রতি বছর সংসদের অধিবেশন শুরু হলে আমি এক বার দিল্লি যাই। কোভিড পরিস্থিতির কারণে এ বার ভোটে জেতার পরে যাওয়া হয়নি। এক বার দিল্লি যাব। তবে, কবে যাব সেটা এখনও ঠিক করিনি।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এ বার গিয়ে সময় পেলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করব।’’ এর পরে তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ২৬ থেকে ৩০ জুলাই দিল্লিতে কাটাতে পারেন মমতা।
শুভেন্দুর দিল্লি সফরের কথা এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। তবে, গত ১০ জুলাই তাঁর পরিকল্পনার কথা দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। বিধানসভায় অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে বিজেপি বিধায়কদের পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতেই ওইবৈঠক করেন শুভেন্দু। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। ওই বৈঠকে হাজির এক বিধায়ক আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, ‘‘দিন-ক্ষণ ঠিক না হলেও শুভেন্দুদা চাইছেন, বিধায়কদের প্রতিনিধি দল বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করবে। বাংলায় কোন কোন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ ব্যবহার করে রাজ্য সরকার নিজেদের প্রকল্প বলে চালাচ্ছে তা নিয়ে অভিযোগ জানানো হবে। একই সঙ্গে রাজ্যে ভোটের পরে যে ভাবে সন্ত্রাস চলছে সে বিষয়েও জানানো হবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে।’’ বিজেপি সূত্রে খবর, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চূড়ান্ত হয়ে গেলেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এক বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি কবে সময় দেবেন তার উপরেই নির্ভর করছে সফর। আপাতত ২৫ জুলাই যাওয়ার কথা ঠিক থাকলেও সেটা আগে-পরেও হতে পারে।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন,শুভেন্দুর সঙ্গে ১০ জন বিধায়ক যাবেন।ওই দলে অবশ্যই থাকবেন সম্প্রতি বিধানসভার বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটি-র চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেওয়া আট বিধায়ক—মনোজ টিগ্গা, মিহির গোস্বামী, নিখিলরঞ্জন দে, কৃষ্ণ কল্যাণী, অশোক কীর্তনীয়া, বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা ও দীপক বর্মা।
মুকুলকে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি(পিএসি)-র চেয়ারম্যান করা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছেই। বিধানসভার অন্য যে আট কমিটির মাথায় বিজেপি বিধায়করা বসেছেন তাঁরা ইস্তফা দিয়েছেন। মুকুলের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকরের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গেরস্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি জানানোর পাশাপাশি আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিজেপি। সেই সঙ্গে বিধানসভায় রীতি ভাঙা হয়েছে বলেও রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ জানাতে চান শুভেন্দুরা। এটাও বিজেপি বিধায়কদের দিল্লি সফরের অন্যতম লক্ষ্য।
বাদল অধিবেশনে যোগ দিতে এখন দিল্লিতেই রয়েছেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্যের চার মন্ত্রী-সহ দলের ১৮ জন সাংসদ। তবে তাঁদের অনেকেই শুক্রবার অধিবেশন শেষে কলকাতায় ফিরে রবিবার ফের রাজধানীতে যেতে পারেন। সোমবার ফের অধিবেশনে যোগ দেবেন তাঁরা। সে দিনই বিকেলে দিল্লি পৌঁছতে পারেন মমতা। রাজধানীতে থাকবেন তৃণমূল সাংসদরাও। থাকতে পারেন মুকুল।সেই সঙ্গে শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়কদের উপস্থিতিতে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ দিল্লি দরবার বঙ্গ রাজনীতি নিয়ে সরগরমহয়ে উঠতে পারে।