Sandeshkhali Incident

সিবিআই তদন্ত চান শুভেন্দু, বাধা কংগ্রেসের দলকে, ‘সাজানো’ অভিযোগ বলছে তৃণমূল

সন্দেশখালির ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে এবং ‘দলদাস’ পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদে কলকাতায় ‘লালবাজার অভিযান’ও করল কংগ্রেস।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৮
suvendu adhikari

শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

সন্দেশখালিতে পুলিশ-প্রশাসন ও শাসক দল তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে এ বার সিবিআই তদন্তের দাবি করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, বসিরহাট এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে বিজেপিই। একই দিনে কংগ্রেসের দুই প্রতিনিধিদলকে আটকে দেওয়া হল সন্দেশখালি যাওয়ার পথে। সন্দেশখালির ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে এবং ‘দলদাস’ পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদে কলকাতায় ‘লালবাজার অভিযান’ও করল কংগ্রেস। আবার বসিরহাটে পুলিশের লাঠি চালানোর অভিযোগ উঠল সিপিআইয়ের মিছিলে।

Advertisement

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু মঙ্গলবার বিধানসভায় এসে বলেছেন, ‘‘আমরা চাই, কলকাতা হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মহিলা আধিকারিকদের দিয়ে দল বানিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করুক। এ ছাড়া, দ্রুত জাতীয় মহিলা কমিশন বা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দিয়ে তথ্য অনুসন্ধান করিয়ে, আদালতের তত্ত্বাবধানে সরাসরি তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়া হোক।’’ বিরোধী দলনেতা আরও অভিযোগ করেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় এবং রাজীব কুমারের (ডিজি) নির্দেশে পুলিশ আধিকারিকদের মাধ্যমে এবং পার্থ ভৌমিক ও নারায়ণ গোস্বামীদের ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করা হচ্ছে। মেয়েদের এলাকা ছাড়া করা হচ্ছে। বাসন্তীর গুন্ডারা মালঞ্চ দিয়ে ওখানে অস্ত্র পাঠাচ্ছে এবং প্রতিবাদী দেবীশক্তিকে ভয় দেখাচ্ছে।’’

শুভেন্দু তৃণমূলের যাঁদের দিকে আঙুল তুলেছেন, সেই মন্ত্রী পার্থ ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাধিপতি নারায়ণ এ দিনই সন্দেশখালি গিয়েছিলেন। পার্থের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বিজেপির মধ্যে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এই পথ নিয়েছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। কে বড় নেতা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তার প্রমাণ দিতে এক জন বাসে চড়ে ভ্রমণে বেরিয়েছেন, আর এক জন পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুড়ছেন! ভুগতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিনই বহরমপুরে মন্তব্য করেছেন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিজে এক বার যান (সন্দেশখালি)। আপনি এক জন মহিলা। মহিলাদের আর্তনাদ কানে ঢুকছে না? সেখানকার মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিন, তাঁদের উপরে আপনার দলের নেতারা কী রকম অত্যাচার করেছেন!’’ সন্দেশখালি যেতে চাইলেই বিরোধীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন তুলে অধীরের আরও বক্তব্য, ‘‘নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। সে দিন শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রশ্ন ছিল। এখন তৃণমূলের নেতাদের সম্পত্তির জন্য গরিব মানুষের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, তাঁদের ঘরের মা-বোনেদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে!’’

সন্দেশখালিতে ওঠা অভিযোগ ‘সাজানো’ বলে দাবি করে সে সব প্রচারের জন্য পাল্টা ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘এই অভিযোগ সাজানো, পরিকল্পিত এবং নেতিবাচক পরিবেশ তৈরির উদ্দেশে করা হচ্ছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘প্রবল আতঙ্কে নাকি এত দিন মুখ খুলতে পারছিলেন না! কেন সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস বা আইএসএফ এই নারী নির্যাতনের কথা বলেনি? তবে কেউ সত্যিই দোষ করে থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’

কংগ্রেসের দু’টি আলাদা প্রতিনিধিদলকে এ দিনই সন্দেশখালির পথে আটকে দিয়েছে পুলিশ। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভাপতি আজ়হার মল্লিক, এআইসিসি সদস্য ইন্দ্রাণী দত্ত চ্যাটার্জী-সহ বেশ কিছু কংগ্রেস কর্মীকে সন্দেশখালির ৭ কিলোমিটার আগে রামপুরে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। অমিতাভেরা রাস্তায় বসে পড়লে ধুন্ধুমার বেধে যায়। পরে অমিতাভ বলেন, “সন্দেশখালিতে যেটা চলছে, সেটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস!” পরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা (গ্রামীণ) কংগ্রেসের সভাপতি অমিত মজুমদার, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুব্রতা দত্তদের নিয়ে কংগ্রেসের অন্য প্রতিনিধিদলটিকে আটকে দেওয়া হয় সরবেড়িয়ার কাছে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের তরফে এক দিনের মধ্যে ‘মুক্ত’ সন্দেশখালিতে যেতে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা অবস্থান তুলে নেন।

মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেসের ডাকে এ দিনই ‘লালবাজার অভিযানে’ মঙ্গলবার ওই অভিযানে ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে জমায়েত করে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট পর্যন্ত যাওয়ার পরে কংগ্রেসের মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। মিছিলে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার, শাহিনা জাভেদ, মধ্য কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি সুমন পাল প্রমুখ। পুলিশের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের ধস্তাধস্তি বাধে। গ্রেফতার করা হয় ৯৪ জনকে। শহরে পথে নেমেছিল এসইউসি-র মহিলা সংগঠন এআইএমএস, যুব সংগঠন ডিওয়াইও এবং ছাত্র সংগঠন ডিএসও।

বসিরহাটে এ দিনই পুলিশ সুপার দফতর অভিযানের উদ্দেশে সিপিআইয়ের মিছিলে লাঠি চলার অভিযোগ উঠেছে। শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা-সহ অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও বাম নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার-সহ নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে ওই কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল সিপিআই। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে সিপিআইয়ের অভিযোগ। কয়েক জন সিপিআই কর্মী আহত হন।

আরও পড়ুন
Advertisement