Bengal SSC Recruitment Case

নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে? ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের মামলায় জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট

নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া কতটা কঠিন, ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানিতে সোমবার তা জানতে চান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সেই প্রশ্নের জবাব দেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৯
সুপ্রিম কোর্টে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি।

সুপ্রিম কোর্টে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

নতুন করে কি পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে? ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানিতে সোমবার সেই প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া কতটা কঠিন, তা-ও জানতে চান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। তাতে মূল মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, অনেকে আবেদন না করেও চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে যাঁরা চাকরির আবেদন করেছিলেন, তাঁদের আবার নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে বলে আদালতে জানান বিকাশ।

Advertisement

সোমবার দুপুর ২টো নাগাদ শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির এজলাসে শুরু হয় মামলার শুনানি। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে চলে এই শুনানি। মূল মামলাকারীদের বক্তব্য শোনেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তাঁদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, ফিরদৌস শামিমেরা। নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিলের জন্য সওয়াল করেন বিকাশরঞ্জন।

ওএমআর শিটে নম্বর নিয়ম মেনেই প্রকাশ করা হয়েছিল কি না, তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। জবাবে বিকাশ জানান, নিয়ম মেনে কাজ হয়নি। তাঁর বক্তব্য, মামলা দায়েরের পর আদালতের নির্দেশ ওএমআর শিট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ফলপ্রকাশ অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিল। বিকাশ বলেন, “পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। গোটা প্রক্রিয়া বিতর্কিত। তাই গোটা প্যানেল বাতিল করা উচিত। রাজ্যের উচিত ছিল স্বচ্ছভাবে কাজ করা। কিন্তু রাজ্য, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রত্যেকে আলাদা আলাদা কথা বলেছে। কারও কথার মিল পাওয়া যাচ্ছে না।”

মূল মামলাকারীদের হয়ে আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানান, প্রাথমিক ভাবে তাঁর মনে হয়েছে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম দু’টি কাউন্সেলিং সঠিক পদ্ধতিতে হয়েছে। এর পরের কাউন্সেলিংগুলি হয়েছে মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে। একই ভাবে নবম-দশম শ্রেণির জন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে তৃতীয় কাউন্সেলিং পর্যন্ত পদ্ধতি মানা হয়েছে। তার পরের কাউন্সেলিংগুলি মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে করা হয়েছে বলে আদালতে জানান ফিরদৌস।

শুনানির একটি পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি খন্না জানতে চান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈধ এবং অবৈধদের বাছাই করা সম্ভব কি না। তাতে মূল মামলাকারীদের অপর এক আইনজীবী জানান, তা সম্ভব নয়। তাঁর বক্তব্য, একটি বাছাই করতে গেলে অন্যটি নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। সেটি বাছাই করতে গেলে আবার আর একটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারা বৈধ, কারা অবৈধ— সেই নির্দিষ্ট সংখ্যা কারও কাছেই নেই বলে প্রধান বিচারপতির এজলাসে জানান ওই আইনজীবী। তিনি বলেন, “এই মামলায় যারা নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়েছে, প্রত্যেকেই দুর্নীতির অংশ। চাকরিপ্রার্থীদের থেকে ৭-১০ লক্ষ টাকা করে নিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এক একটি প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে।”

আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।

এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি মামলাটি শুনানির জন্য উঠেছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। ওই দিন নবম-দশম এবং গ্রুপ ডি চাকরিচ্যুতদের আইনজীবী মুকুল রোহতগী আদালতে জানান, আসল উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট তখনও পাওয়া যায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘আসল ওএমআর শিট এখনও পাওয়া যায়নি। যে ওএমআর শিটগুলি উদ্ধার করা হয়েছিল, তা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু তার রিপোর্ট আসার আগেই রায় ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ওই রিপোর্ট আসেনি।’’ অপর পক্ষে ‘যোগ্য’দের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল পাল্টা প্রশ্ন করেন, আসল ওএমআর শিট যদি না-ই থাকে, তবে কত ওএমআর শিটে কারচুপি করা হয়েছে, তা কী ভাবে ধরা হল?

রোহতগি গত শুনানিতে শীর্ষ আদালতে জানান, হাই কোর্টে কেউ চাকরি বাতিলের আবেদন করেননি। মামলা করা হয়েছিল চাকরি পাওয়ার জন্য। ‘ওয়েটিং প্যানেল’ নিয়ে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর মক্কেলদের কেউ ‘ওয়েটিং প্যানেলে’ ছিলেন না বলেও আদালতে জানান চাকরিচ্যুতদের আইনজীবী। গ্রুপ সি চাকরিচ্যুতদের আইনজীবী দুষ্যন্ত দবে জানিয়েছিলেন, ‘অনুসন্ধান ছাড়াই’ তাঁর মক্কেলদের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে! এই চাকরিচ্যুতদের পরিবারের কী হবে, তা নিয়েও আদালতে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী।

গত ২২ এপ্রিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করে। তার ফলে চাকরি যায় ২৫,৭৫৩ জনের। যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে বলা হয় ওই চাকরিপ্রাপকদের।

হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। পৃথক ভাবে মামলা করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তার পর সুপ্রিম কোর্টে দফায় দফায় মামলা করেন হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারাদের কয়েক জনও। গত ৭ মে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ চাকরি বাতিল মামলায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। এ ক্ষেত্রে সেই সময়কার প্রধান বিচারপতির যুক্তি ছিল, যদি যোগ্য এবং অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তা হলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না।

Advertisement
আরও পড়ুন