অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
পুজোর পরেই রাজ্যের সমস্ত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার কথা ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ধর্মতলার মেয়ো রোডের সভায় এমনই ঘোষণা করেছেন তিনি। এই সভাতেই মমতার আগে বক্তৃতা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তৃতাতেই রাজ্যে যে কলেজ ভোট হতে পারে তার ইঙ্গিত মিলেছিল। অভিষেক জানিয়েছিলেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ৫৫ শতাংশ আসনে মহিলা প্রতিনিধিকে লড়াই করার সুযোগ দেবেন।
উল্লেখ্য, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার আওতায় থাকা কলেজগুলিতে ২০১৭-য় ছাত্র নির্বাচন হয়েছিল। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-এ, যাদবপুরে ২০২০-তে তা হয়। তার পর থেকে কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সাংসদ নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি করে আসছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলি। আর বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি মনে করি ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। এখন তো সিস্টেম চেঞ্জ হয়েছে। আগে ছিল ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার বা ইউনির্ভাসিটির ফিফথ ইয়ার, সিক্সথ ইয়ার। এখন হয়ে গিয়েছে সিমেস্টার। সুতরাং সেই ভাবে তৈরি করে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এখানে আছেন। আমি বলব, একটা টাইম টেবিল তৈরি করে এসবগুলো থেমে যাক, পুজোটা হয়ে যাক। তার পর একটা সময় দেখে ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো আস্তে আস্তে করিয়ে দেব।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘আমি অনুরোধ করব আগামিদিনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন যখন হবে তখন ৫৫ শতাংশ আসনে যাতে মেয়েরা, মানে আমাদের বোনেরা লড়াই করার সুযোগ পান, সেই বিষয়টি যেন সুনিশ্চিত করা হয়। ৫০ শতাংশ নয়, হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমরো। আমরা মেয়েদের, বোনেদের, দিদিদের যাতে এই সুযোগ দিতে পারি, তার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা পঞ্চায়েত ভোটে মহিলাদের সংরক্ষণ কার্যকর করে দেখিয়েছি। লোকসভায় আমরা করে দেখিয়েছি। বিজেপি এনেছিল উইমেন রিজ়ার্ভেশন বিল। কিন্তু ওটা লবডঙ্কা। কিছু করেনি। আমরা কথা দিয়েছি, কথা রেখেছি। ২৯ জন সাংসদের মধ্যে ১২ জন সাংসদ মহিলা প্রতিনিধি রয়েছেন। পঞ্চায়েত স্তরে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করে আমরা দেখিয়েছি। ৪৫-৫০ নয়, ৫৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্য আমি অনুরোধ করব। ভাই তৃণাঙ্কুরকে বলব যাতে ৫৫ শতাংশ মহিলা ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান, সেই সুযোগ তৃণমূল ছাত্র পরিষদকে করে দিতে হবে।’’
বাংলার রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন, আরজি কর হাসাপাতালে মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় নারী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মহিলা প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন অভিষেক। প্রসঙ্গত, জুলাই মাসের প্রথম দিকে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য ছাত্র সংসদের ভোট নিয়ে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি বলেছেন, “নির্বাচন নিয়ে একপ্রস্ত কথা হয়েছে। কিন্তু পুজোর আগে তা করা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমরা যদি বুঝতে পারি, এটা করা যাবে, তখন জানাব।” আর অগস্ট মাসেই সেই নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে কার্যত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন মমতা।
অন্য দিকে, মমতার নির্দেশ, আগামী শুক্রবার কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে আরজি করের ঘটনায় ফাঁসির দাবিতে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করবেন। শনিবার ব্লকে ব্লকে মিছিল-ধর্না হবে। যে হেতু শনিবার বহু ক্ষেত্রে অর্ধদিবস ছুটি থাকে, তাই দুপুর ২টো থেকে ৬টা পর্যন্ত ধর্না দিতে হবে। রবিবার আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের মহিলা নেত্রী এবং কর্মীরা সঙ্গে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের মহিলা সদস্যরা ব্লকে ব্লকে আরজি করের ঘটনায় ফাঁসির দাবি ও নারীদের সুরক্ষা দিতে আইন বদলের দাবিতে ধর্না ও মিছিল করবেন।