গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে মোবাইল অ্যাপ তৈরির বিজ্ঞপ্তি আগেই জারি করেছিল নবান্ন। এ বার সেখানে আসা তথ্য যাচাই করা, পরবর্তী পদক্ষেপের ক্ষেত্রে কী ভূমিকা হবে, সে বিষয়ে তদারকির জন্য আট জন আধিকারিককে নিয়ে একটি সেল গঠন করল রাজ্যের অর্থ দফতর। এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করে বিভিন্ন দফতরকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই আট আধিকারিকের কেউ কোনও দফতরের বিশেষ সচিব, কেউ অতিরিক্ত সচিব পদে রয়েছেন। তবে বেশির ভাগই ওএসডি পদে কর্মরত। ব্লক, মহকুমা এবং জেলা স্তর থেকে সরকারি কাজের অগ্রগতির বিষয়ে যে তথ্য মোবাইল অ্যাপ মারফত নবান্নে আসবে, তা যাচাই করবে এই আট আধিকারিকের সেল।
মোবাইল অ্যাপ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতেই সরকারের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, ‘জিও ট্যাগিং’ ব্যবস্থা থাকবে। অর্থাৎ পরিদর্শনের সময় জিপিএস মারফত আধিকারিকের অবস্থান জানা যাবে। যা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ঘরে বসে আধিকারিকদের রিপোর্ট জমা দেওয়ার দিন শেষ হতে চলেছে। নবান্নের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, ব্লক, মহকুমা এমনকি, জেলার প্রশাসনিক স্তরেও এমন কিছু আধিকারিক রয়েছেন, যাঁরা কাজের অগ্রগতির বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকেন না। ফলে সরকারও জানতে পারে না, যেখানে যে কাজ শুরু হয়েছে, তা কতটা এগোল। ফলে দীর্ঘসূত্রিতা ‘রোগে’ আক্রান্ত হয় পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো কাজ। সরকারের সর্বোচ্চ স্তর মনে করছে, প্রশাসনিক স্তরে ‘যত্নের’ অভাবেই সরকারি কাজ শুরু হলেও তা দেরিতে শেষ হচ্ছে। নবান্ন সেটাই রুখতে চাইছে। ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে সরকারকে গতিশীল রাখতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন প্রকল্প যাতে থমকে না-থাকে, তাই নিশ্চিত করতে চায় রাজ্য সরকার।
অন্য একটি কারণের কথাও বলছেন আধিকারিকদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, শাসকদলের একটি অংশ মনে করে, সরকারি কাজে আমলাদের শ্লথ গতির জন্য ‘ফলো আপ’ প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে হচ্ছে না। ফলে মানুষ সময়ের পরিষেবা সময়ে পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক ভাবে যার ‘নেতিবাচক প্রভাব’ গিয়ে পড়ছে শাসকদলের উপরেই। তৃণমূলের এই অংশ মনে করে, আমলারা ভোট করেন না। ভোট করে দল। কিন্তু তাঁদের কাজের জবাবদিহি করতে হয় দলের নিচুতলার কর্মীদের। প্রশাসনিক মহলের অনেকের বক্তব্য, সেই বিষয়টিকে মান্যতা দিয়েই অ্যাপ তৈরির পথে হাঁটছে রাজ্য সরকার।
অর্থাৎ, সরকার আর আধিকারিকদের কাছে কাজের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট চাইবে না। আধিকারিকদেরই সক্রিয় হয়ে সেই কাজ করতে হবে। গোটাটাই হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। ধরা যাক, একটি রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। আধিকারিকদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর জানাতে হবে কোনও সমস্যা রয়েছে কি না। থাকলে তা কেমন? সাধারণ সমস্যা না জটিল? একই ভাবে বিদ্যুৎ, পরিচ্ছন্নতা, পানীয় জল-সহ জনজীবনের জরুরি পরিষেবার বিষয়গুলিও থাকছে। দফতরভিত্তিক ক্ষেত্র আলাদা করে দেওয়া থাকবে অ্যাপে। সেই অনুযায়ী তথ্য দিতে হবে আধিকারিকদের। সেই তথ্য এসে যাতে নবান্নে পড়ে না-থাকে এবং দ্রুত পদক্ষেপ করা যায়, তা নিশ্চিত করতেই এই আট আধিকারিকের সেল তৈরি করা হয়েছে বলে প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য।