কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল চিত্র।
‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’র ফোন নম্বর লেখা পোস্টার সংশ্লিষ্ট দফতরের ওয়েবসাইট থেকে ১৫ জুন তুলে নিয়েছিল রাজ্য সরকার। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টে এ কথাই জানাল রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ কর্মসূচি-সহ চারটি বিষয়ে আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে মামলা করেছিলেন শুভেন্দু। অভিযোগ পাওয়ার পরেও কেন রাজ্য নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ করেনি, বৃহস্পতিবার সকালে সেই প্রশ্ন তোলে হাই কোর্ট। দুপুরে একে একে সব অভিযোগের জবাব দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তার পরেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে আবার সতর্ক করে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, সুষ্ঠু এবং অবাধ ভোটের পক্ষে ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে।
শুভেন্দুর অভিযোগ ছিল, তৃণমূলের ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে যে নম্বর ব্যবহৃত হয়েছিল, সেই একই ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে সরকারের কর্মসূচি ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’তে। দলীয় কর্মসূচিতে ব্যবহৃত ফোন নম্বর কী ভাবে সরকারি কর্মসূচিতে ব্যবহার করা যেতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক। পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার দিনই এই কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে পঞ্চায়েতের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তার পরের দিন, এই কর্মসূচির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। শুভেন্দুর বক্তব্য, এই কাজে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের বিরুদ্ধে আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। বুধবার সেই মামলা বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে শুনানির জন্য উঠলে, তা প্রধান বিচারপতির এজলাসে পাঠানো হয়। এই বিষয়ে বিচারপতি সিংহের পর্যবেক্ষণ, মামলাটি জনস্বার্থ মামলা হিসাবে গণ্য হওয়া উচিত। তাই এটিকে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের এজলাসে পাঠান তিনি। সেখানে শুভেন্দুর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী সওয়াল করে বলেন, ‘‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী কর্মসূচিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি ‘দিদিকে বলো’র ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। যা এখন চলছে।’’ একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘নির্বাচন ঘোষণার পরে জলপাইগুড়ির জেলা পরিষদের তৃণমূলের এক প্রার্থী টাকার বিনিময়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। এই অবস্থায় ওই জেলায় তিনি কী ভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করবেন। নির্বাচন নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরে রাজ্য পুলিশের আইজি কয়েক জন অফিসারকে বদলি করেছেন।’’
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চ এই বিষয়ে কমিশনের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’র ফোন নম্বর লেখা পোস্টার সংশ্লিষ্ট দফতরের ওয়েবসাইট থেকে ১৫ জুন তুলে নিয়েছে রাজ্য। জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে জলপাইগুড়ির জেলাশাসক জানিয়েছেন, টাকা দিয়ে ভোটারকে প্রভাবিত করার যে অভিযোগ, তা সঠিক নয়। তৃণমূলের ওই প্রার্থী ভিক্ষা দিয়েছিলেন। এর পরেই রসিকতার ছলে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘ও! হতে পারে তাঁর নাতনির জন্মদিন উপলক্ষে ভিক্ষা দিয়েছেন।’’
পূর্ব মেদিনীপুরে পুলিশ সুপারের ভোট পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। সেই প্রসঙ্গে কমিশন জানিয়েছে, পাঁচটি থানাকে ইতিমধ্যে স্পর্শকাতর ঘোষণা করা হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট পরিচালনা নিয়ে পদক্ষেপ করা হয়েছে। তার পরেই হাই কোর্টের নির্দেশ, পূর্ব মেদিনীপুরে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং বিএসএফের আইজিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নির্বাচন নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর রাজ্য পুলিশে কয়েক জন অফিসারকে বদলি নিয়ে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ২৪ জুন বদলির ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।