নবান্ন। ফাইল চিত্র।
নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রোমোটার অয়ন শীলের গ্রেফতারির পরে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে যে তদন্ত করা হয়েছিল, তাতে স্বজনপোষণ-সহ নানা ধরনের দুর্নীতির কথা প্রকাশ্যে এসেছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর। এই অবস্থায় রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার নিয়োগের ক্ষমতা নিজেদের হাতেই তুলে নিল নবান্ন। নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের আবহে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় ওই পদে নিয়োগের প্রশ্নে ‘স্বজনপোষণ’ কিংবা ‘দুর্নীতি’ রুখতেই এই ব্যবস্থা বলে জানা গিয়েছে। নবান্ন সূত্রের খবর, শিক্ষা ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে নিয়োগের অভিযোগে অয়নকে গ্রেফতার করার পরে তদন্তে উঠে আসে যে, রাজ্যের প্রায় ৭০টি পুরসভার বিভিন্ন পদে বেআইনি নিয়োগের ঘটনাতেও জড়িত ছিলেন তিনি।
পুর এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার নিয়োগের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের তত্ত্বাবধানে সেই কমিটি গড়ার কাজও প্রায় শেষ পর্বে। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ওই পদের জন্য ন্যূনতম বিডিও-পদ থেকে অবসর নেওয়া প্রার্থীরাই এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার হিসেবে প্যানেলে নথিভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এত দিন রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা সরাসরি এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার নিয়োগ করত। সম্প্রতি সেই নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের প্রমাণ পেয়ে এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, নিজেদের চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরদের উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণই কি নেই রাজ্য সরকারের? সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে বিজেপির দাবি, নিজেদের দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের তলায় চাপা পড়ে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।এখন বাঁচার জন্য তারা এই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
বিভিন্ন পুরসভায় এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার হিসেবে সাধারণ ভাবে এত দিন নিয়োজিত হতেন অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই তা হচ্ছিল না। বহু পুরসভা সেই বিধি না-মেনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিচ্ছিল।’’
অয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন পুরসভায় বেআইনি নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে দেখা গিয়েছে, বহু জায়গায় পুরসভার বেআইনি কাজকর্মে এগ্জ়িকিউটিভ অফিসারদের দিক থেকে কোনও বাধাই আসছে না। ফলে বার বার মুখ পুড়ছিল রাজ্য সরকারের। সেই সমস্যা দূর করতে এ বার এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার নিয়োগে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই পদে নিয়োগ হবে পাঁচ বছরের চুক্তিতে। মেয়াদ ফুরোলে, চুক্তি পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় পুরপ্রধান এবং জেলাশাসকের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে ওই কমিটি।