R G Kar Hospital Incident

ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের দাঁতের মাপে কি জট খুলবে রহস্যের

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে কী কী নমুনা কত পরিমাণে পাঠানো হয়েছিল বা তা ঠিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ, সংরক্ষণ করা হয়েছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

Advertisement
শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:১৫
Representative Image

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ফরেন্সিকের নমুনা সংগ্রহ এবং ময়না তদন্তের রিপোর্টের ‘ত্রুটিবিচ্যুতি’র জেরে তদন্ত ধাক্কা খাচ্ছে বলে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি। এমনকি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়ার খুন এবং ধর্ষণে কলকাতা পুলিশের হাতে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে পেশ করার জন্য যে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা হচ্ছে, তাতেও ধোঁয়াশা থেকে যাচ্ছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রেই জানা গিয়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে কী করছে সিবিআই? এক কর্তা বলেন, ‘‘নানা প্রতিকূলতাতেও সব রকমের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, যেমন ময়না তদন্তে নির্যাতিতার চোয়ালের পাশে একটি কামড়ের দাগের কথা বলা হয়েছে। ভিডিয়োগ্রাফির ছবিতেও সেই দাগ চোখে পড়ছে। ওই ছবির আলাদা ফ্রেম কেটে প্রযুক্তির সাহায্যে ওই দাঁতের কামড়ের দাগ অনেকটা স্পষ্ট করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। শিয়ালদহ আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে গিয়ে সঞ্জয়ের দাঁতের মাপজোক করেছেন সিবিআইয়ের ফরেন্সিক দলের সদস্যেরা। ভিডিয়োগ্রাফিতে কামড়ের দাগের ছবি এবং সঞ্জয়ের দাঁতের মাপের নমুনা ফরেন্সিকল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। বুধবার সন্ধ্যা এবং বৃহস্পতিবার সকালে সঞ্জয়ের দাঁতের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, সঞ্জয়ের দাঁতের রিপোর্ট ময়না তদন্তের ভিডিয়োগ্রাফির ছবির সঙ্গে না-মিললে খুন, ধর্ষণে অন্য কারও উপস্থিতির আভাস মিলবে। তাতে তদন্তের মোড় ঘুরে যাবে।

এক সিবিআই কর্তা বলেন,“সঞ্জয় জেরায় দোষ স্বীকার করেনি। তা ছাড়া সে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে ওঠা-বসা করত। তদন্তের ধরন বোঝে বলে তদন্তকারীদের সমানে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে সে। এই সব ধোঁয়াশা দূর করতেই সঞ্জয়ের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু অপরাধ প্রমাণ করতে আরও জোরালো তথ্যপ্রমাণ দরকার।” সিবিআইয়ের আর এক কর্তা বলেন, “মনে হচ্ছে, খুন ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্তকে নানা ভাবে গুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পদে পদে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” কলকাতা পুলিশের ‘অনিচ্ছাকৃত ভুলেই’ এই দশা কি না, তা বুঝতে লালবাজারের তৈরি ‘সিট’-এর কর্তাদের বার বার তলব করে কথা বলেছে সিবিআই। ওই কর্তার কথায়, “দেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে উটকো লোককে বার করে দিয়ে সেমিনার হলের দরজা বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল। হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির আধিকারিকদের মোতায়েন করে, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দ্রুত ডেকে এনে ঘটনাস্থল এবং নির্যাতিতার দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করাই নিয়ম। তার পরে ময়না তদন্ত করা উচিত ছিল। এ তো সহজ ব্যাকরণ। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে ছোট ছোট খামতি রাখা হয়েছে। যাতে সব কিছুই জটিল হয়ে উঠেছে।”

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে কী কী নমুনা কত পরিমাণে পাঠানো হয়েছিল বা তা ঠিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ, সংরক্ষণ করা হয়েছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া ইয়ারফোন এবং সিসি ক্যামেরার কয়েক মিনিটের ফুটেজের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশ অভিযুক্ত সঞ্জয়কে গ্রেফতার করে। সিবিআই সূত্রের দাবি, শুধু ইয়ারফোন এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আদালতগ্রাহ্য প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট নয়। বেশির ভাগ ফরেন্সিক রিপোর্টও হাতে আসেনি বলে ওই সূত্রের দাবি।

আরও পড়ুন
Advertisement