(বাঁ দিক থেকে) অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, তনয়া পাঁজা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা এবং পুলস্ত্য আচার্য। —নিজস্ব চিত্র।
১০ দফা দাবি মানার জন্য রাজ্য সরকারকে বেঁধে দেওয়া ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা শেষ। কিন্তু সরকারের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। তাই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ‘আমরণ’ অনশন শুরু ঘোষণা করলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শনিবার ধর্মতলা থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁরা জানান, প্রথম দফায় তাঁদের ছ’জন প্রতিনিধি অনশনে বসছেন। তবে তাঁদের মধ্যে আরজি করের কোনও জুনিয়র ডাক্তার নেই! সাংবাদিক বৈঠকের পরেই আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দেন কোন কোন জুনিয়র ডাক্তার অনশনে বসছেন।
শুক্রবারই ‘আমরণ অনশনে’র হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এসএসকেএম থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করে এসে অবস্থানে বসেন তাঁরা। ঘোষণা করেন, কর্মবিরতি তুলে নিলেও যত দিন পর্যন্ত না তাঁদের দাবি পূরণ হচ্ছে, তত দিন অবস্থান চালিয়ে যাবেন। একই সঙ্গে এ-ও জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকার দাবি না মানলে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করবেন।
সেই মতো শনিবার ঘড়ির কাঁটা মেপে ঠিক রাত সাড়ে ৮টায় অনশনের কথা ঘোষণা করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। যে ছ’জন অনশনে বসছেন, তাঁদের মধ্যে তিন জনই মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত। বাকিদের মধ্যে কেউ এসএসকেএম, কেউ আবার কেপিসি, আবার কেউ নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-পড়ুয়া।
অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের তালিকায় রয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পিডিটি অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, তনয়া পাঁজা এবং ক্যানসার বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট স্নিগ্ধা হাজরা। এ ছাড়াও, এসএসকেএমের পিডিটি অর্ণব মুখোপাধ্যায়, এনআরএসের পিজিটি পুলস্ত্য আচার্য এবং কেপিসি হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা অনশনে বসেছেন। উল্লেখ্য, আরজি করের মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন যে সব জুনিয়র ডাক্তারেরা পথে নেমেছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন দেবাশিস হালদার। মাস কয়েক আগেই দেবাশিসের সঙ্গে বিয়ে হয় স্নিগ্ধার। আরজি কর-কাণ্ডের পর স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই সরব হয়েছেন প্রতিবাদে।
মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই তাঁরা অনশন শুরু করলেন বলে জানান পুলস্ত্য। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম বার অনশন করছি। মানসিক ভাবে প্রস্তুত আছি।’’ সরকারের বিরুদ্ধে সুর সরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দাবি মানা হবে না কেন? নিশ্চয়ই মানবে।’’ শনিবার সাংবাদিক বৈঠক থেকে অর্ণব বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পর পেলাম শুধুই হুমকি। উৎসবে ফিরতে বলা হচ্ছে, তবে আমরা সেই মানসিককতায় নেই। আজ থেকেই আমরণ অনশনে বসছি আমরা। আমরা কাজে ফিরছি কিন্তু খাবার খাব না।’’ অনশন মঞ্চের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলেও জানান জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা অনশনমঞ্চে বই পড়ব, গানবাজনা করব। আমরা কী করছি, তা দেখতে পাবেন সাধারণ মানুষ।’’
প্রথম দফায় যে ছ’জন চিকিৎসক রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে নেই আরজি করের কোনও জুনিয়র ডাক্তার। অনশন শুরুর কিছু ক্ষণ পরেই আরজি কর থেকে অনিকেত মাহাতো, আরিফ আহমেদ এবং আসফাকুল্লা নায়ার এসে দেখা করে, কথা বলেন অনশনকারীদের সঙ্গে।