Waterlogged Situation

নিম্নচাপের বৃষ্টিতে দুর্ভোগ দক্ষিণের জেলায় জেলায়, কোথাও ভাঙল বাঁধ, ডুবল জমি, কোথাও নামল ডিঙি

নিম্নচাপের কারণে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক অঞ্চল। পশ্চিমের জেলাগুলিতে বৃদ্ধি পেয়েছে নদীর জলস্তর। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বিঘার পর বিঘা চাষের জমি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:১৮
নিম্নচাপের বৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জায়গায় জলযন্ত্রণা।

নিম্নচাপের বৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জায়গায় জলযন্ত্রণা। —নিজস্ব চিত্র।

নিম্নচাপের জেরে দক্ষিণের একাধিক জেলায় গত কয়েক দিনে বৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের কম বেশি প্রায় সব জেলাতেই তার প্রভাব পড়়েছে। বিভিন্ন জায়গায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কোথাও জল প্রবেশ করেছে চাষের জমিতে। কোথাও ডুবেছে রাস্তা, নেমেছে ডিঙি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বলছে, এখনও কয়েক দিন চলবে বৃষ্টি। তবে পশ্চিমের কিছু জেলা ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের বাকি এলাকাগুলিতে আপাতত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা ক্ষীণ। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে একাধিক জেলার বাঁধ থেকে জল ছাড়তে হয়েছে। বিভিন্ন নদীতে জলস্তর বেড়েছে। কোথাও কোথাও নদীবাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ইতিমধ্যে দলের নেতা-মন্ত্রীদের এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনা

বৃষ্টির দুর্যোগের কারণে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির অন্তর্গত ভোলাখালিতে ডাসা নদীর ধারে বাঁধের অবস্থা দুর্বল হয়েছে। যে কোনও সময়ে নদীবাঁধ ভেঙে গ্রামাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসীরা। হাসনাবাদের বরুণহাট এলাকাতেও ইছামতী নদীর বাঁধ দুর্বল হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন এলাকাবাসীরা। তাঁদের আশঙ্কা, এ রকম দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া চলতে থাকলে নদীবাঁধ যে কোনও মুহূর্তে ভাঙতে পারে। অতীতেও বসিরহাটের বিভিন্ন নদী সংলগ্ন এলাকাগুলিতে দুর্যোগের সময়ে বা কটালের সময়ে আতঙ্কে প্রহর কাটে এলাকাবাসীদের। এ বারও সেই একই ছবি বসিরহাট মহকুমার একাধিক অঞ্চলে। স্বরূপনগরেও ইছামতীর জল প্রবেশ করেছে দুর্গাপুর ও তারণীপুর গ্রামে। দু’টি এলাকায় বিঘার পর বিঘা চাষের জমি জলের তলায়।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা

গত তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের বিভিন্ন প্রান্তে নদীবাঁধে ধস নেমেছে। গোসাবা ব্লকের বালি, পাখিরালয়, সাতজেলিয়া, লাহিরিপুর, ছোট মোল্লাখালি, কালিদাসপুর, পাঠানখালি এলাকায় নদীবাঁধে ধস নেমেছে। ব্লক প্রশাসন ও সেচ দফতরের তরফে বাঁধ মেরামতির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রবিবার রাতে পাখিরালয়ে নদীবাঁধে ধস নেমেছিল। গ্রামবাসীদের সাহায্য নিয়ে পঞ্চায়েতের তরফে কোনওরকমে নদীবাঁধে মাটি দিয়ে মেরামত করা হয়। বাঁধের উপর পলিথিন বিছিয়ে আপাতত বাঁধ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। গোসাবার সেচ দফতরের আধিকারিক শুভদীপ দালাল বলেন, “বাঁধের অবস্থা অনেক জায়গাতেই খারাপ রয়েছে। আমাদের কর্মীরা গ্রামবাসীদের সাহায্য নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে বাঁধ মেরামতি করেছেন। এখনও পর্যন্ত কোথাও বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল প্রবেশ করতে পারেনি।”

নদিয়া

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদিয়া জেলাতেও বিভিন্ন জায়গায় জল জমে গিয়েছে। জল প্রবেশ করেছে ফুল চাষের জমিতে। শান্তিপুর, রানাঘাটের একাধিক জায়গায় ফুল চাষের জমি জলের তলায়। ক্ষয়ক্ষতির অঙ্কের হিসেব কষতে বসেছেন ফুল চাষিরা। দমকা হাওয়ার কারণে ভাগীরথী ও অন্য নদীগুলিতে ফেরি পরিষেবাও বিঘ্নিত হয়েছে। যাত্রী সুরক্ষার কারণে খেয়া পারাপার সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছিল। একই সঙ্গে ভাগীরথীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে দানা বেঁধেছে ভাঙন আতঙ্ক। শান্তিপুরের গবারচর এলাকায় ভাগীরথীর ধারে নদীবাঁধে ফাটল দেখা গিয়েছে। দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। নদিয়ার জেলাশাসক অরুণ প্রসাদ জানিয়েছেন, প্রতিটি ব্লকে জরুরি ভিত্তিতে নজরদারি চালানো হচ্ছে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যা যা করণীয়, প্রশাসন সে বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

মুর্শিদাবাদ

মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে ঝড়বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রচুর কৃষি জমি। কৃষি দফতর সূত্রে প্রাথমিক ভাবে খবর, প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা। জলঙ্গি ও ডোমকলে কয়েকশো বিঘা কলাবাগান ভেঙে গিয়েছে। বিঘ্নিত হয়েছে ফেরি পারাপারও। নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণে ফরাক্কা ও শমশেরগঞ্জ-সহ একাধিক জায়গায় নদী ভাঙনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। লোহাপুরে গঙ্গার তীরে বেশ কয়েক বিঘা কৃষি জমি তলিয়ে গিয়েছে জলের তলায়। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মৈত্র জানিয়েছেন, গোটা জেলার পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। আবহাওয়ার উন্নতি হলে ক্ষতির পরিমাণ স্পষ্ট হবে।

পশ্চিম বর্ধমান

টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পশ্চিম বর্ধমানের একাধিক প্রান্ত। সোমবার সকাল পর্যন্ত আসানসোলে বৃষ্টি হয়েছে ১৫১.৪০ মিলিমিটার এবং দুর্গাপুরে ৭০ মিলিমিটার। রবিবার ঝাড়খণ্ডেও ভারী বৃষ্টি হয়েছে এবং সেই কারণে দামোদর নদের উপর দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়তে হয়েছে। রবিবার থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৮৪ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের বৃষ্টির কারণে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। সোমবার মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে যথাক্রমে ১০ হাজার কিউসেক ও ৩৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে দুর্গাপুরের চারটি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জল জমে গিয়েছে কাঁকসা ব্লকের পানাগড়ের বিভিন্ন জায়গায়। মলানদিঘি এলাকায় কুনুর নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রাস্তায় হাঁটুজল জমে গিয়েছে। যে কারণে যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে আসানসোলের নুনিয়া ও গাড়ুই নদীতেও। যার জেরে সংলগ্ন বিভিন্ন জায়গায় জল জমে গিয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর

নিম্নচাপের বৃষ্টিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, দাসপুর-সহ একাধিক এলাকা জলমগ্ন। রাস্তা, চাষের জমি চলে গিয়েছে জলের তলায়। ঝুমি নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাটালের একাধিক গ্রাম জলমগ্ন। ঘাটালের মনসুকা ১, মনসুকা ২, ইড়পালা, সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবেছে রাস্তাঘাট। ঘরবাড়িও আংশিক জলের নীচে। দুর্যোগের মধ্যে ডিঙি নৌকাতেই চলাচল করতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের। শিলাবতী, ঝুমি, কাঁসাই, কেঠিয়া নদীও ফুঁসছে। কোথাও জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়েছে, কোথাও বা প্রায় ছুঁইছুঁই। চন্দ্রকোনায় বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে শিলাবতীর জল। ওই এলাকার যুদুপুরে নদীর জল ছাপিয়ে প্রবেশ করেছে গ্রামে। দাসপুর-১ ব্লকের রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েতেরও বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে শিলাবতী ও কাঁসাই নদীর জল। জেলায় ইতিমধ্যে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। যার নম্বর ০৩২২২-২৭৫৮৯৪, ৮৩৪৮৩৩৮৩৯৩। মেদিনীপুর সদর মহকুমার কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০৩২২২-২৭৫৩৩০, খড়্গপুর মহকুমার কন্ট্রোল রুম নম্বর ০৩২২২-২২৫৩৪৫, ঘাটাল মহকুমার কন্ট্রোল রুম নম্বর ০৩২২৫-২৫৫০৪৫,২৫৫১৪৫। এ ছাড়া প্রতি ব্লক অফিসেও একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে প্রশাসনের তরফে।

পূর্ব মেদিনীপুর

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কাঁসাই নদীর রূপ বদলে গিয়েছে। নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে কার্যত ফুঁসছে। সোমবার কাঁসাই নদীর জলের স্রোতে ময়নায় ভেঙে গিয়েছে বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকোটি এলাকাবাসীদের কাছে ময়না এবং পাঁশকুড়ার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। সেই সাঁকো ভেঙে পড়ায় সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই।

পূর্ব বর্ধমান

ভারী বৃষ্টি না হলেও গত কয়েক দিনে যে ভাবে নাগাড়ে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলেছে, তার প্রভাব পড়েছে কাটোয়ায়। বৃষ্টির কারণে মাঝেমধ্যেই ফেরি পারাপার বন্ধ রাখতে হচ্ছে যাত্রীসুরক্ষার কারণে। কালনায় একাধিক এলাকা জলমগ্ন। রাস্তা তো বটেই, এমনকি কোথাও কোথাও বাড়ির ভিতরেও জল প্রবেশ করেছে। এই পরিস্থিতির জন্য নিকাশি ব্যবস্থার অভাবকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসীরা। যদিও কালনা পুরসভার কনজ়ারভেন্সি বিভাগের সভাপতি অনিল বসু বলেন, “প্রতি দিনই আমরা ড্রেন পরিষ্কার করছি। মানুষেরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, অনেকে বাড়ির নোংরা ড্রেনে ফেলছেন, কেউ বাড়ির নারকেল গাছ, কেউ খেজুর গাছ কেটে সেই পাতাও ড্রেনে ফেলে দিচ্ছেন। এমনকি নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার করে সেগুলি ড্রেনে ফেলা হচ্ছে।”

বাঁকুড়া

লাগাতার বৃষ্টিতে বাঁকুড়া জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গন্ধেশ্বরী, দারকেশ্বর, শিলাবতী, কংসাবতী, ভৈরোবাঁকি-সহ প্রায় সব নদীতেই জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। দারকেশ্বর নদের জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় রবিবার থেকেই জলের তলায় বাঁকুড়া ও বাঁশি সংযোগকারী মীনাপুর কজ়ওয়ে। শিলাবতী নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় সিমলাপাল সেতু জলের তলায় চলে গিয়েছে। যে কারণে বিঘ্নিত হয়েছে বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম সংযোগকারী রাজ্য সড়কে যান চলাচল। মুকুটমণিপুরের জলাধার থেকে সোমবার বেলা ১১টায় ১০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। কংসাবতী ও কুমারী নদীতে যে পরিমাণ জল আসছে, তাতে জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বেশ কিছুটা বৃদ্ধি হতে পারে বলে সেচ দফতর সূত্রে খবর। বৃষ্টির মাঝে রবিবার মাটির বাড়ি ধসে প্রাণ হারিয়েছেন একজন।

বীরভূম

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জলের তলায় বীরভূমের বিস্তীর্ণ অংশ। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে কোপাই নদী। পরিস্থিতি এমনই যে, গত কয়েক দিন আগে পর্যন্তও শীর্ণ খাত ধরে বয়ে চলা কোপাই শনিবার থেকে গোয়ালপাড়া সেতুর উপর দিয়ে বইছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কোপাই নদী সংলগ্ন কঙ্কালীতলার শক্তিপীঠ মন্দিরও। কোপাইয়ের জল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হাঁটুসমান জলে ডুবেছে কঙ্কালীতলা মন্দির সংলগ্ন এলাকা। মন্দিরের চাতালেও জল থাকায় আপাতত ভক্তেরা সেখানে পুজো দিতে পারছেন না। অবিরাম বৃষ্টির কারণে কোপাই নদীর জল এতটাই বেড়েছে যে, আশপাশের গ্রামগুলিতে জল ঢুকে পড়েছে। নদী সংলগ্ন ফসলের জমিগুলি প্লাবিত হওয়ায় কৃষিকাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লাভপুরে ভেঙে গিয়েছে পুয়ে নদীর বাঁধ। ইলামবাজারে মাটির দেওয়াল ভেঙে মৃত্যু হয়েছে এক জনের।

হুগলি

তিন দিন ধরে হয়ে চলা বৃষ্টিতে জলবন্দি হয়ে পড়েছে হুগলি চুঁচুড়া পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ড, সুভাষনগর, সারদা পল্লি, লোকোপাড়া, কৈলাসনগর, ক্যান্টিন বাজার, কোদালিয়ার একাংশ। ব্যান্ডেল স্টেশন রোডেও জল জমেছে। বৃষ্টির জেরে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত। জলমগ্ন রাস্তায় চলছে না অটো, টোটোও। জল পেরিয়ে ব্যান্ডেল স্টেশনে পৌঁছতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

আরও পড়ুন
Advertisement