Bangladesh MP Death

চিকিৎসার নামে অর্থ পাচারে সাংসদ-যোগ মিলছে তদন্তে

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্রের দাবি, চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কয়েক জন বাংলাদেশি বিপুল টাকা ভারতে এনে তা বিনিয়োগ করেছেন সোনা পাচারের মতো বেআইনি কারবারে।

Advertisement
সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ০৮:২৩
আনোয়ারুল আজিম আনার।

আনোয়ারুল আজিম আনার। —ফাইল চিত্র।

সীমান্ত পেরিয়ে সোনা পাচারের সঙ্গে নিউ টাউনে খুন হওয়া বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার যুক্ত ছিলেন বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা। প্রতিবেশী দেশে অনেকেই অলক্ষ্যে তাঁকে নাকি সেই কারণে ‘সোনার আনার’ বলেও ডাকেন। কিন্তু তিনি একটি টাকা পাচার চক্রেরও মাথা ছিলেন বলে দাবি তদন্তকারীদের।

Advertisement

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্রের দাবি, চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কয়েক জন বাংলাদেশি বিপুল টাকা ভারতে এনে তা বিনিয়োগ করেছেন সোনা পাচারের মতো বেআইনি কারবারে। এমনকি সেই টাকার একাংশ অপরাধ জগতেও লগ্নি করা হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের দাবি, এই ‘মেডিক্যাল ট্যুরিজ়ম’-কে সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের পিছনেও কাজ করত আজিমের মাথা।

সম্প্রতি কলকাতার নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাটে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন সাংসদ আজিম। যদিও এখনও পর্যন্ত তাঁর দেহ বা খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র পাওয়া যায়নি। শুধু ধৃত জিহাদ হাওলাদার খুনের কথা স্বীকার করেছেন বলে তদন্তকারীদের দাবি। খুনের অভিযোগ উঠেছে আজিমের বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিনের বিরুদ্ধে। তদন্তকারীদের দাবি, শাহিনও সোনা পাচারে যুক্ত ছিল এবং সে আজিমের কাছ থেকে ১৫ কোটি টাকা পেত। সেই টাকা আজিম দিতে গড়িমসি করাতেই তাকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করা হয়ে থাকতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্রের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে ফি বছর কয়েক হাজার মানুষ ভারতে চিকিৎসা করাতে আসেন। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাঁদের জন্য বিশেষ ‘মেডিক্যাল ভিসা’-র বন্দোবস্ত করে দিল্লি। করোনার পরে একটা সময়ে সাধারণ ভিসা দেওয়া বন্ধ থাকলেও ‘মেডিক্যাল ভিসা’ দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের কথায়, বাংলাদেশি রোগীরা কলকাতা ছাড়াও হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি ও মুম্বইয়ের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। বেসরকারি এই হাসপাতালগুলিতে ভারতীয়দের চিকিৎসার পুরো খরচ নগদে দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও, বাংলাদেশিদের সেই সুযোগ দেওয়া হয়। কারণ, সে দেশের অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা ভারতে অচল। অভিযোগ, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাচারকারীরা গত কয়েক বছর ধরে চিকিৎসার ছুতোয় কোটি কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এনেছে।

শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের কোনও কোনও নাগরিক হাসপাতালে এসে কোনও একটি শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ চান। স্বভাবতই চিকিৎসক তাঁকে কিছু শারীরিক পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। সেই ‘প্রেসক্রিপশন’ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিছুটা সময় চেয়ে ফিরে যান বাংলাদেশে। কিছু দিন পরে সঙ্গে প্রচুর নগদ অর্থ নিয়ে তিনি আবার ভারতে ঢোকেন। সীমান্তে তাঁকে আটকালে তিনি ‘প্রেসক্রিপশন’ দেখিয়ে জানান, চিকিৎসার প্রয়োজনেই তিনি ওই টাকা সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন। উল্লেখ্য, ভারতের যে কোনও প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ কত নগদের প্রয়োজন, তা আগে থেকে নির্ধারণ করা যায় না। ফলে, বিনা বাধায় সেই নগদ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চলে আসতে পারেন ভারতে। অভিযোগ, সেই টাকা পরে চলে যায় সোনা পাচার বা অপরাধ জগতে। এই সব কারণে সম্প্রতি মেডিক্যাল ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি করেছে ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশন। করোনা কালে দেওয়া বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদি মেডিক্যাল ভিসা মেয়াদ ফুরোনোর আগেই বাতিল করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সাংসদ আজিমও এ বছরের গোড়ায় কলকাতায় এসে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। তিনি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে তাঁর মালপত্রের মধ্যে থেকে সেই প্রেসক্রিপশন পেয়েছেন সিআইডির তদন্তকারীরা। সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালেও তদন্তকারীরা খোঁজ-খবর করেছেন।

আরও পড়ুন
Advertisement