CPM

বয়সবিধিতে প্রজন্ম বদলে যেতে চলেছে সিপিএমের পলিটব্যুরোয়, একসঙ্গে বাদ পড়বেন ‘সপ্তরথী’?

শুক্রবার থেকেই শুরু হচ্ছে সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠক। চলবে শনিবার পর্যন্ত। রবিবার-সোমবার বসবে কেন্দ্রীয় কমিটি। সেখান থেকেই অন্তর্বর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসাবে এক জনকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

Advertisement
শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০১
Seven leaders may be dropped from CPM politburo due to age

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

দলের গঠনতন্ত্র মেনে বয়সবিধি কার্যকর হলে সিপিএমের পলিটব্যুরোয় ‘প্রজন্মান্তর’ ঘটতে চলেছে। আগামী এপ্রিলে তামিলনাড়ুর মাদুরাই শহরে সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেস বসবে। সেখানে পলিটব্যুরো থ‌েকে বাদ পড়তে পারেন সাত জন নেতা-নেত্রী। তালিকায় রয়েছেন প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, সুহাসিনী আলি, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, তামিলনাড়ুর নেতা জি রামকৃষ্ণন, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের সূর্যকান্ত মিশ্র।

Advertisement

সিপিএম নিয়ম করেছে, ৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের মধ্যে থেকেই সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক পলিটব্যুরো নির্বাচিত হয়। সেই বিধিতে ওই সাত জন বাদ পড়তে চলেছেন বলেই দলের অধিকাংশ নেতার ধারণা। তবে এর মধ্যে একটি ‘কিন্তু’ রয়েছে। অনেক সময় এই ধরনের ক্ষেত্রে সিপিএম বিশেষ অনুমতিক্রমে ‘ব্যতিক্রম’ ঘোষণা করে কাউকে কাউকে ছাড় দেয়। যেমন গত বার কেরলের কুন্নুর পার্টি কংগ্রেসের সময়েই বিজয়নের বয়স ৭৫ পেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিশেষ অনুমতিক্রমে তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোয় রেখে দেওয়া হয়েছিল। এ বার ওই সাত জনের মধ্যে কারও ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয় কি না, তা-ও দেখার বিষয়।

Seven leaders may be dropped from CPM politburo due to age

(বাঁ দিক থেকে) প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, মানিক সরকার, সূর্যকান্ত মিশ্র, পিনারাই বিজয়ন। —ফাইল ছবি।

সিপিএমের অনেক প্রবীণ নেতা স্মৃতি থেকে বলতে পারছেন না, শেষ কবে একসঙ্গে এত জন নেতা-নেত্রীর পলিটব্যুরো থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তা-ও আবার তাঁরা যে-সে নেতা-নেত্রী নন। গত বার পার্টি কংগ্রেস থেকে যেমন পশ্চিমবঙ্গের বিমান বসু, কেরলের এস রামচন্দ্র পিল্লাইরা বাদ পড়েছিলেন। সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটব্যুরোর অন্যতম সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘ওই সিদ্ধান্ত জেনেবুঝেই নেওয়া হয়েছিল। দলে যে প্রজন্মের বদল হবে, সেই পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল এক দশক আগে। এ বার সেটাই বাস্তবায়িত হবে।’’

দলের সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় সীতারাম ইয়েচুরির প্রয়াণে সিপিএম যে ‘ধাক্কা’ খেয়েছে, তা দলের নেতারাও মেনে নেন। পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক খসড়া তৈরির কাজও থমকে গিয়েছে। শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠক। চলবে শনিবার পর্যন্ত। রবিবার এবং সোমবার হবে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। সেখান থেকেই অন্তর্বর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। নতুন কাউকে দায়িত্ব দিলে ধরে নিতে হবে তিনিই হবেন পরবর্তী পার্টি কংগ্রেস থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক। আর যদি প্রকাশ বা বৃন্দার মতো কাউকে অন্তর্বর্তী দায়িত্ব দেওয়া হয়, তা হলে পার্টি কংগ্রেস থেকেই নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবে সিপিএম। সিপিএমের অনেকের বক্তব্য, পুরনোদের মধ্যেই কাউকে অন্তর্বর্তী দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। যাঁর অতীতে পার্টির নথি তৈরি এবং তা পেশ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

সিপিএমের এক প্রবীণ নেতার কথায়, বয়সবিধির মানদণ্ডে কাউকে যদি ‘ব্যতিক্রম’ হিসাবে পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটিতে রেখেও দেওয়া হয়, তবে তা ব্যতিক্রমই হবে। অর্থাৎ একজন বা দু’জনের ক্ষেত্রে তেমন হতে পারে। কিন্তু অধিকাংশকেই চলে যেতে হবে ‘রিজ়ার্ভ বেঞ্চে’। একই সঙ্গে সিপিএমে এ-ও কৌতূহল যে, প্রবীণেরা বিদায় নিলে কারা তাঁদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। যেমন পশ্চিমবঙ্গ থেকে সূর্যকান্ত বাদ পড়লে কে হবেন পলিটব্যুরোর সদস্য? অনেক নাম নিয়েই আলোচনা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম দু’টি হল শ্রীদীপ ভট্টাচার্য এবং সুজন চক্রবর্তী। আবার বিভিন্ন গণসংগঠন থেকে বিজু কৃষ্ণন, অরুণ কুমারদের পলিটব্যুরোয় অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা রয়েছে দলের অন্দরে। মহিলা হিসাবে বৃন্দা এবং সুহাসিনী দু’জনেই বাদ পড়লে তাঁদের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন সিটুর সর্বভারতীয় সভানেত্রী কে হেমলতা এবং মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মরিয়াম ধাওয়ালে। তবে মাদুরাই পার্টি কংগ্রেস থেকে সিপিএমের একঝাঁক নেতা যে ‘মার্গদর্শক’ হয়ে যেতে চলেছেন, তা প্রায় মেনেই নিচ্ছেন দলের অনেক পোড়খাওয়া নেতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement