গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কলকাতা হাই কোর্টে হাজির হলেন আরজি কর হাসপাতালের মৃত মহিলা চিকিৎসকের বাবা। সোজা চলে যান প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের এজলাসে। সেখানে তখন চলছিল আরজি কর-কাণ্ডে দায়ের হওয়া একাধিক জনস্বার্থ মামলার শুনানি। সেখানেই মৃতার বাবা আর্জি জানান, আদালতের হস্তক্ষেপে তাঁর মেয়ের খুনের ঘটনার তদন্ত করা হোক। তার পরই মৃতার পরিবারকে মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।
মঙ্গলবার হাই কোর্টে আরজি কর-কাণ্ডে দায়ের হওয়া একাধিক জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল। এই মামলার তদন্ত নিয়ে অনেক প্রশ্ন ওঠে। মঙ্গলবার মৃতার পরিবারের তরফে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে পরিবারের কাছে কেউ এক জন ফোন করে বলেন, আপনাদের মেয়ে অসুস্থ। তার পরে আবার ফোন করে বলা হয়, আপনাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু ময়নাতদন্ত তা বলছে না। ঘটনাস্থলে ওই মহিলা চিকিৎসককে এমন অবস্থায় দেখা যায়, সাধারণ ভাবে যে কেউ বলবেন এটা কোনও ভাবেই আত্মহত্যা হতে পারে না।’’ যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি জানতে চান, কে বলেছিলেন ওই চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন?
বিকাশ সওয়াল করার সময় আরও বলেন, ‘‘মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবা-মা তৎক্ষণাৎ আরজি করে যান। কিন্তু তাঁদের ৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল।’’ এ ছাড়াও এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার ব্যাপারেও প্রশ্ন ওঠে আদালতে। উল্লেখ্য, সোমবার সকালে নিহত চিকিৎসকের বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা বলেন পরিবারের সঙ্গে। সঙ্গে ছিলেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলও। পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়েও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, পুলিশি তদন্তের সময়সীমার কথা। জানিয়ে দেন, রবিবারের মধ্যে তদন্তের কিনারা না হলে, এই ঘটনার তদন্তভার সিবিআইকে দিয়ে দেওয়া হবে। মঙ্গলবারের শুনানিতে সেই প্রসঙ্গ টেনে বিকাশ বলেন, ‘‘কেন সিবিআইকে দেওয়ার জন্য আরও সময় দেওয়া হবে?’’ তাঁর আশঙ্কা, তথ্য নষ্ট হতে পারে।
প্রসঙ্গত, জনস্বার্থ মামলায় মূলত তিনটি আবেদন করা হয়েছিল হাই কোর্টে। তার মধ্যে প্রধান হল নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে এই ঘটনার তদন্ত করানো। আবেদনকারীদের বক্তব্য, সিবিআই বা অন্য কোনও নিরপেক্ষ সংস্থাকে এই ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হোক। যে সংস্থার উপর রাজ্যের প্রভাব থাকবে না। এ ছাড়াও ওই ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, অবিলম্বে তদন্ত করে তা প্রকাশ্যে আনার আবেদন জানিয়েছেন মামলাকারীরা। তাঁরা চান, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিক আদালত। সমস্ত সরকারি হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর আবেদনও জানানো হয়েছে। মামলাকারীদের বক্তব্য, হাসপাতালের প্রতিটি তলার মূল প্রবেশপথে যাতে সিসিটিভি থাকে, তা নিশ্চিত করা হোক।