Supreme Court of India

খোলাখুলি

গণতন্ত্রের তিন স্তম্ভের প্রথম দু’টিই যখন দুর্নীতি বা নীতিহীনতার জেরে নাগরিকের আস্থা অর্জনে ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে, তখন একমাত্র আশা বিচারব্যবস্থাই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৪৪

ভারতে একমাত্র নির্বাচন এলে তবেই ভোটপ্রার্থী রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়সম্পত্তির হিসাব মেলে। তথ্যের অধিকার আইনবলেও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মী তথা আধিকারিকদের সম্পত্তির হিসাব চাইলে অনেক সময় বলে দেওয়া হয় এই তথ্য নেই বা দেওয়া হবে না। এমনটাই যেখানে দস্তুর, সেখানে বিরল ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপনের মতো কাজ আর কে-ই বা করতে পারে, দেশের শীর্ষ আদালত ছাড়া! সুপ্রিম কোর্টের সকল মহামান্য বিচারপতির উপস্থিতিতে এক বৈঠকে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হল, প্রকাশ্যে আসবে তাঁদের সম্পত্তির হিসাব। শীর্ষ আদালতের মহামান্য প্রধান বিচারপতির কাছে তাঁরা এই হিসাব জমা দিতেনই, এ বার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটেও তা আপলোড করা যাবে, এই মর্মে একটি ঘোষণাপত্র দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মহামান্য বিচারপতিরা।

Advertisement

গণতন্ত্রের তিন স্তম্ভের প্রথম দু’টিই যখন দুর্নীতি বা নীতিহীনতার জেরে নাগরিকের আস্থা অর্জনে ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে, তখন একমাত্র আশা বিচারব্যবস্থাই। স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা, নিরপেক্ষতার মতো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আশায় নাগরিক বিচারব্যবস্থার দিকেই সাগ্রহে তাকিয়ে থাকেন, তাঁদের চোখে মহামান্য বিচারপতিরা এই মূল্যবোধেরই প্রতিমূর্তি। সন্দেহ নেই, সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য বিচারপতিদের সম্পত্তির হিসাব প্রকাশ্যে আনার সিদ্ধান্তে ভারতবাসীর কাছে তাঁদের শ্রদ্ধা-বিশ্বাসের আসনটি আরও দৃঢ় হবে। যে বিচারপতিরা সাধারণ নাগরিকের কাছে সুদূর নক্ষত্রের মতো, যাঁদের সম্পত্তির খতিয়ান নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ প্রকাশও নাগরিকের কল্পনার অতীত, তাঁরাই যখন বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা আরও জোরদার করার কথা বলে এ-হেন সিদ্ধান্ত নেন, সেই পদক্ষেপকে মুক্তকণ্ঠ সাধুবাদ জানাতেই হয়।

যাঁরা আদর্শস্বরূপ, আর্থ-সামাজিক অবস্থানের বিচারে তাঁদের থেকে বহু দূরে থাকলেও তাঁদের জীবনচর্যা নিয়ে নাগরিকের আগ্রহ ও মনোযোগ থাকে। জীবনচর্যার সঙ্গে নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্নটি অঙ্গাঙ্গি— আদালতের চার দেওয়ালের মধ্যে যিনি সর্বজনমান্য, তার বাইরে তাঁর জীবনের যেটুকু প্রকাশ্যে আসে সেখানেও তাঁর স্বচ্ছ নিষ্কলঙ্ক ভাবমূর্তি দেখতে চাওয়ার এক প্রবল প্রত্যাশা তৈরি হয় নাগরিকের মনে। সেই ভাবমূর্তি কোনও কারণে সামান্য টাল খেলেও নাগরিক আশাভঙ্গের যন্ত্রণা পেতে পারেন। সাম্প্রতিক কালে তেমন ঘটনা যে ঘটেনি তা বলা যাবে না— কখনও দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির বাড়িতে গণপতি পূজায় প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, কখনও অবসরের পরেই শীর্ষ আদালতের বিচারপতির তড়িঘড়ি একটি রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগে প্রতিবাদ ঘনিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক মহলে। যে ঘটনার প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালতের মহামান্য বিচারপতিদের সম্পত্তি প্রকাশ্যে আনার সিদ্ধান্ত সেটিও লক্ষণীয়, দিল্লি হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতির বাসভবনে বিপুল ‘নগদ উদ্ধার’ কাণ্ড। এই সবই যে অবৈধ বা অসাংবিধানিক তা বলা যাবে না, তবে প্রতিটিই কোনও না কোনও ভাবে নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্নই তুলে ধরে, নাগরিক যে বিচারব্যবস্থাকে নিঃশর্ত ভাবে নিষ্কলঙ্ক দেখতে চায়, সেই দাবিটি সামনে আনে। শীর্ষ আদালতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপটি ভারতীয় নাগরিকদের আশ্বস্ত করবে। তাঁরা জানবেন, বিচারপতিরা নিজেদের সব সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখার দাবিটির গুরুত্ব বোঝেন।

Advertisement
আরও পড়ুন