সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ হল। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৫ সেপ্টেম্বর হওয়ার সম্ভাবনা।
বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, পড়ুয়াদের পরামর্শ শুনবে ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক, পড়ুয়াদের পরামর্শ শুনবে ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে একটি পোর্টাল খুলতে বলা হয়েছে। সেখানে পরামর্শ জানানো যাবে। গত মঙ্গলবারের শুনানিতে দেশ জুড়ে হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা কাঠোমা ঢেলে সাজানোর নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের নিরাপত্তায় টাস্ক ফোর্স গঠন করার প্রস্তাব দেয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “১৩ দিন ধরে এমসের চিকিৎসকেরা কাজ করছেন না। তাঁদের বলব, দয়া করে কাজে ফিরুন। আপনাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না আমরা তা নিশ্চিত করব।” চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, “ওষুধ আর বিচারব্যবস্থা ধর্মঘট করতে পারে না। আমরা কি কাজ বন্ধ করে সুপ্রিম কোর্টের বাইরে বসে যেতে পারি?”
আরজি কর মামলায় জোড়া নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, সিবিআইকে ফের মুখবন্ধ খামে তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে হবে। রাজ্যকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে তাদের।
রাজ্যের তরফে বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতে জানানো হয় যে, অ্যাসিড বোমা ব্যবহার করার কথা বলছেন শুভেন্দু অধিকারী। প্রধান বিচারপতি বলেন, “আইন নিজের পথে চলবে। আমরা বলে দিয়েছি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা দেওয়া যাবে না।” সব পক্ষের উদ্দেশে তাঁর সংযোজন, “আপনারা যদি এ সব পাবলিসিটি ইন্টারেস্ট লিটিগেশন ফাইল বন্ধ করেন, মিডিয়া ট্রায়ালও বন্ধ হয়ে যাবে।” প্রসঙ্গত, জনস্বার্থ মামলাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন’। প্রচার পাওয়ার জন্য মামলা রুজু করার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পাবলিসিটি ইন্টারেস্ট লিটিগেশন’।
চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে আদালত উদ্বেগপ্রকাশ করার পরেই রাজ্যের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের এক মন্ত্রী বলেছেন, আমাদের নেতার বিরুদ্ধে কোনও কথা বললে আঙুল কেটে দেব।” রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল পাল্টা বলেন, “আপনাদের নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন গুলি চালিয়ে দেব।” দুই পক্ষের বাগ্যুদ্ধ দেখে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, “এই বিষয় নিয়ে রাজনীতি করবেন না। আমরা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।”
আরজি কর মামলার শুনানিতে চিকিৎসকদের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে বলেন, “অনেক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে।” প্রধান বিচারপতি বলেন, “চিকিৎসকরা কাজে যোগ দিন। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না।” চিকিৎসকদের কাছে কাজে ফেরার আবেদন জানান প্রধান বিচারপতি। রাজ্যকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন তিনি।
পলিগ্রাফ পরীক্ষার জন্য যে আবেদন করা হয়েছে, শুক্রবার বিকেল ৫টার মধ্যে সেটি বিবেচনা করতে হবে শিয়ালদহ এসিজেএমকে। বৃহস্পতিবার আরজি কর মামলার শুনানিতে এমনই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। আরজি কর-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তের পলিগ্রাফ পরীক্ষা নিয়ে তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। ধৃতের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করানোর আর্জি জানিয়ে মঙ্গলবার শিয়ালদহ আদালতের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। সূত্রের খবর, নিরাপত্তার কারণে সেখানে হাজির করানো হয়নি তাঁকে। মিথ্যা যাচাইয়ের এই পরীক্ষা করাতে আদালতের ছাড়পত্র লাগে। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের পলিগ্রাফ টেস্ট করানোর জন্য সিবিআই শিয়ালদহ আদালতে আবেদন করে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “সকাল সাড়ে ৯টায় দেহ উদ্ধার হয়। আর রাত সাড়ে ১১টায় এফআইআর দায়ের হয়। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পরে এফআইআর! এটা মানা করা যাচ্ছে না।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “কেন ১৪ ঘণ্টা দেরিতে এফআইআর দায়ের হল? কেন অধ্যক্ষ এফআইআর দায়ের করতে এলেন না? তাঁকে কি কেউ বাধা দিচ্ছিল? কেন তাঁকে বদলি করে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হল? এই সবের কারণ জানতে চায় আদালত।”
বৃহস্পতিবার আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক, সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেয়। আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনায় রিপোর্ট জমা দেয় রাজ্যও। খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় ‘টাইমলাইন’ বা ঘটনার অনুক্রম নিয়ে রাজ্যের উদ্দেশে একাধিক প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য জানায়, সব কিছুর ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছে। অন্য দিকে, আরজি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তোলেন চিকিৎসকদের আইনজীবীরা। ছাত্রদের অভিযোগ শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, “কে এমন করছেন? তাঁর নাম আমাদের দিন।” চিকিৎসকদের কাজে ফিরতেও বলেন প্রধান বিচারপতি। দুপুর ১টা নাগাদ বিরতির জন্য শুনানি বন্ধ হয়। দুপুর ২টো থেকে ফের শুরু হবে শুনানি।