Kuntal Ghosh

অভিষেকের ‘নাম বলাতে কী করছে, কী বলছে ইডি’! আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে কুন্তলের সেই চিঠি

কুন্তলের চিঠির প্রসঙ্গ বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে তুলেছে ইডি। আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, কুন্তলের চিঠির জেরে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। কড়া মন্তব্য করেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৩ ২০:০৮
ইডি, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ কুন্তল ঘোষের। নিজস্ব চিত্র।

ইডি, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ কুন্তল ঘোষের। নিজস্ব চিত্র।

জেলে বসে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষ। চিঠি পাঠানো হয়েছে নিম্ন আদালতের বিচারকের কাছেও। কুন্তলের সেই চিঠিই আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এসেছে। সদ্য বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল সাম্প্রতিক সময়ে আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক বার দাবি করেছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের বড় নেতাদের নাম বলানোর জন্য তাঁকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকেরা। কলকাতা পুলিশ এবং বিচারককে দেওয়া চিঠিতেও একই দাবিই করেছেন কুন্তল। পাশাপাশিই, তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীরা তাঁর উপর অত্যাচারও করেছেন।

কুন্তলের চিঠি নিয়ে ইডি বা সিবিআইয়ের তরফে সরকারি ভাবে কিছু বলা হয়নি। তবে, বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে ইডি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, কুন্তলের চিঠির জেরে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। তদন্ত চলাকালীন চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানানোর এই প্রবণতাকে ‘অতিচালাকি’ বলে মন্তব্য করেছেন উচ্চ আদালতের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

অতীতে একাধিক বার কুন্তল দাবি করেছেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জোর করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক-সহ দলের শীর্ষ নেতাদের নাম বলানোর চেষ্টা করছে। তাঁকে চমকানো-ধমকানো, এমনকি ‘মিথ্যা মামলায়’ ফাঁসানোর ভয়ও দেখানো হচ্ছে। ওই একই কথাই চিঠিতে লিখেছেন কুন্তল। তাঁর দাবি, ‘‘২১ বছর জেল খাটানোর কথা বলা হচ্ছে। আমার স্ত্রীকে গ্রেফতার করবে বলছে। কিন্তু হাজার অত্যাচারের পরেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কোনও মিথ্যা স্টেটমেন্ট (বয়ান) নিতে পারেনি।’’ কুন্তলের অভিযোগ, অভিষেকের নাম বলাতে না পেরে তাঁর উপর শারীরিক অত্যাচার করেছেন তদন্তকারীরা। চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘‘এত চেষ্টা করেও যখন আমার কাছ থেকে মিথ্যা কথা বার করতে পারল না, তখন শুরু হল শারীরিক অত্যাচার। আমার পেটের চামড়া বার বার টেনে ধরা হত। রোজ আমার পেটে যন্ত্রণা হয়। সেটা এসএমও জানেন।’’

যে দিন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়, সেই দিনের ইডির তল্লাশি অভিযানের কথাও কুন্তল চিঠিতে লিখেছেন। কুন্তলের দাবি, ইডির তদন্তকারীরা তাঁর বাড়ি থেকে কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি। শুধু তাঁর নিজের বেসরকারি কলেজে ভর্তির কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। তল্লাশির পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁকে লাথি মারা হয় বলেও অভিযোগ করেন কুন্তল। তাঁর অভিযোগ, সেই সময় থেকেই অভিষেকের নাম বলানোর চেষ্টা চলছিল। চিঠিতে কুন্তল লিখেছেন, ‘‘ইডির অফিসার আমায় বলেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কো কিতনা প্যায়সা দিয়া?’ আমি বললাম, এক টাকাও না। তখন অফিসার বললেন, ‘বল, না হলে তোকে অ্যারেস্ট করব।’ আমি বললাম, মিথ্যা কথা বলতে পারব না। তখন গালাগালি দেওয়া হল। আমার মা-কেও অপমান করা হয়েছে।’’

চিঠিতে কুন্তলের আরও অভিযোগ, নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁকে ১৩ রাত জাগিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, জেরার সময় তিনি যা বয়ান দিতেন, তা না লিখে ইডির এক অফিসার নিজের বক্তব্য লিখে সই করতে বলতেন বলেও অভিযোগ করেছেন কুন্তল। চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, যে ঘরে জেরা করা হত, সেই ঘরে ক্যামেরা চলত বলে ওই ইডি আধিকারিক ‘চোখ পাকিয়ে ভয় দেখাতেন’। কুন্তল লিখেছেন, ‘‘ওই ঘর থেকে বেরোনোর পর আমি জানতাম, আমার কী হবে। তাই নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ভয় পেয়ে, পরিবারের ক্ষতির কথা ভেবে যা বলত, তাতেই সই করতাম।’’

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আর এক ধৃত তাপস মণ্ডলের প্রসঙ্গও টেনেছেন কুন্তল। চিঠিতে তাঁর অভিযোগ, ‘‘তাপস কমিটমেন্ট (কথা দেওয়া) করেছিল (তদন্তকারীদের কাছে), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। তাই, তাপস ছিল ইডির দুলাল।’’

কুন্তলের এই চিঠি নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন মহলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। বুধবার চিঠির বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করে ইডি-ও। তারা জানিয়েছে, প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারের মাধ্যমে হেস্টিংস থানায় অভিযোগ করেছেন কুন্তল। এর ফলে তাদের তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। ইডির বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা মারাত্মক প্রবণতা। তদন্তকারী আধিকারিকদের হুমকি দেওয়া এবং তদন্তের গতি স্তব্ধ করার জন্য এ সব করা হচ্ছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ সব বন্ধ করতে হবে। এই অতিচালাকি বরদাস্ত করা যাবে না।’’ পাশাপাশিই, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, কুন্তলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইডি, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না কলকাতা পুলিশ। কুন্তল যে অভিযোগপত্র দিয়েছেন, তা হাই কোর্টে জমা করতেও বলা হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা আদালতের বিচারক এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে।

আরও পড়ুন
Advertisement