Sagardighi By Election

তৃণমূলের সাগরদিঘি হারানোর ‘অঙ্ক’ বুঝিয়ে মমতার দাবি, কংগ্রেসের ‘নৈতিক হার’ হয়েছে

কংগ্রেস জিতেছে সাগরদিঘিতে। তবে এই জয়কে নৈতিক হার হিসাবেই দেখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন তিনি এ কথা বলছেন, তা-ও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুঝিয়েছেন কংগ্রেসের জয়ের অঙ্কও।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ ১৮:৩৭
ত্রিপুরায় খারাপ ফল হলেও মেঘালয়ে পাঁচটি আসনে জয় পেয়েছে তৃণমূল।

ত্রিপুরায় খারাপ ফল হলেও মেঘালয়ে পাঁচটি আসনে জয় পেয়েছে তৃণমূল। ফাইল চিত্র।

২০২১ সালে বড় জয়ের পরে এই প্রথম হার। বিধানসভা নির্বাচনের পর সব ক’টি উপনির্বাচনেই শাসকদল বড় ব্যবধানে জিতেছে। বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে তাঁর সফর চললেও উপনির্বাচনে কোথাওই প্রচারে যেতে দেখা যায়নি তাঁকে। যাননি সাগরদিঘিতেও। তবে সাগরদিঘিতে হারের পর তার কারণ ব্যাখ্যা করলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তীব্র কটাক্ষ করলেন কংগ্রেসকে। কটাক্ষের সুরেই ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানালেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীকেও। পরিশেষে দাবি করলেন, বিজেপির সাহায্য নিয়েই জিতেছে বাম-কংগ্রেস জোট। বললেন, ‘‘একটা নির্বাচন হয়তো জিতেছে (কংগ্রেস)। কিন্তু ওদের নৈতিক হার হয়েছে।’’ সাগরদিঘিতে জয়ের গন্ধ পেতেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী নিজের মতো করে ফলের বিশ্লেষণ শুরু করে দিয়েছিলেন। তাঁর ব্যাখ্যা ছিল, ‘‘কংগ্রেস প্রার্থী যেমন বামফ্রন্টের ভোট পেয়েছেন। তেমনই বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের বড় অংশের ভোট পেয়েছেন। আর বিজেপির ভোটাররা যাঁরা এই ভোটে তৃণমূলের পরাজয় চেয়েছিলেন, তাঁরাও কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিলেন।’’ অধীরের এমন বক্তব্যকে হাতিয়ার করেই আক্রমণ শানান মমতা।

মমতা বলেন, সাগরদিঘির হার থেকে শিক্ষা নেবে তৃণমূল। কী সেই শিক্ষা? তা-ও জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, যারা বিজেপির সঙ্গে রয়েছে, অর্থাৎ কংগ্রেস, তাদের সঙ্গে কোনও ভাবেই হাত মেলাবে না তৃণমূল। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘‘২০২১ সালে সিপিএম-কংগ্রেস জোট করেনি? জোটের নামে মহাঘোঁট ছিল না?’’ সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সেই সময় তো বিজেপিকে ভোট ট্রান্সফার করেছিল। এ বার বিজেপি ভোট ট্রান্সফার করেছে কংগ্রেসকে। দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক। সুতরাং ও সব করে কোনও লাভ নেই। এটা প্রমাণ হয়ে গেছে, ওরা ভোট পরস্পরকে ট্রান্সফার করে। ’’

Advertisement

রাজ্য অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কী কী ব্যবস্থা করছে, তা নিয়েই বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘সাগরদিঘি উপনির্বাচনে আমরা হেরেছি। কাউকে দোষ দেব না। গণতন্ত্রে হার-জিত লেগেই থাকে। কিন্তু এখানে অনৈতিক একটি জোট হয়েছে। যার তীব্র নিন্দা করছি আমরা।’’ বাংলায় বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমের মধ্যে ‘লেনদেনের সম্পর্ক’ রয়েছে বলেও দাবি করেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির ভোট গুনলে দেখা যাবে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ২২ শতাংশ। এ বার ওরা নিজেদের ১৩ শতাংশ ভোট কংগ্রেসকে হস্তান্তরিত করেছে।’’

বৃহস্পতিবার উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পাশাপাশি বাংলার সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রেও উপনির্বাচনের ভোটগণনা হয়েছে। ত্রিপুরায় খারাপ ফল হলেও মেঘালয়ে পাঁচটি আসনে জয় পেয়েছে তৃণমূল। মমতা মেঘালয়বাসীকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সরব হন সাগরদিঘির ফল নিয়েও।

মমতার বক্তব্য, বিরোধীদের ভোটের সমীকরণ তাঁর কাছে জলের মতো পরিষ্কার। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, ‘‘মজার কথা হল, এত চুপিচুপি করার কী আছে! কংগ্রেস নেতাকে অভিনন্দন যে, উনি ইতিমধ্যেই বিষয়টি স্বীকার করেছেন। মেনেছেন যে বিজেপি, সিপিএম সাহায্য করছে তাঁদের। সত্য বলার জন্য ধন্যবাদ। আমরা তো বলেই আসছি, এটা অনৈতিক জোট। বিজেপির সাহায্য নিয়ে মমতাকে হারালে নিজেদের বিরোধী বলেন কী করে!’’

সাগরদিঘির উপনির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশ তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন অধীর। তিনি বলেছেন, ‘‘সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে তৃণমূল সরকার কেবল রাজনীতিই করে গিয়েছে। আসলে রাজ্যের সংখ্যালঘুদের কোনও উন্নয়নই হয়নি। তাঁদের ভোট নিয়ে ধাপ্পা দেওয়া হয়েছে। তাই সংখ্যালঘু মানুষরা বুঝতে পেরে বিকল্প হিসেবে কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছে।’’ তবে এমন অভিযোগের পাল্টা মমতার জবাব, ‘‘বিজেপি বরাবরের মতোই সাম্প্রদায়িক তাস খেলেছে। কিন্তু সিপিএম এবং কংগ্রেস তার থেকেও বেশি করেছে। বিষয়টা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এ থেকে শিক্ষা নিচ্ছি আমরা। এর পরে আর কংগ্রেস বা সিপিএমের কথা শোনার প্রয়োজন নেই। যারা বিজেপির সঙ্গে রয়েছে, তাদের সঙ্গে কোনও ভাবেই হাত মেলাবে না তৃণমূল!’’ যদিও সাগরদিঘি জয়ের পরেই অধীর ঘোষণা করে দিয়েছেন, ‘‘শুধু পঞ্চায়েত ভোটই নয়, আগামী দিনে সব ভোটেই বামেদের হাত ধরবে লড়াই করবে কংগ্রেস।’’ তৃণমূলকে সরাতে বিরোধীদের ঐক্য ‘প্রয়োজন’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন
Advertisement