মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
দল ও সরকারের ‘মেদ’ ঝরাবে তৃণমূল কংগ্রেস। নতুন বছরে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য সভাপতির সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় এই লক্ষ্যে নিজের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক পথও মোটামুটি চূড়ান্ত করে ফেলেছেন তাঁরা।
ইংরেজি নতুন বছরের শুরুতেই সংগঠন ও প্রশাসন নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক সেরে ফেললেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর সঙ্গে এই বৈঠকে ছিলেন অভিষেক। পরে সেখানে উপস্থিত হন রাজ্য সভাপতিও। সেখানেই সংগঠন ও প্রশাসন নিয়ে দলের অন্দরে উদ্ভূত জটিলতা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। এই জটিলতা কাটাতেই মমতার পরামর্শে একগুচ্ছ সিদ্ধান্তও নিয়েছেন অভিষেক। দলীয় সূত্রে খবর, গত লোকসভা ভোটের ফলের ভিত্তিতে যে সব পদক্ষেপ নিয়ে অভিষেক এগোতে চেয়েছিলেন, সেগুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানেই এই পরিবর্তনের প্রয়োজন ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। এবং ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে দলের সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে সময় নষ্ট না করার কথাও উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। জানা গিয়েছে, তাঁর ভাবনায় সায় দিয়ে গোটা বিষয়টিতে সমন্বয় তৈরির ভার দেওয়া হয়েছে রাজ্য সভাপতিকে।
বছরের প্রথম দিন মমতাকে প্রণাম করতে গিয়েছিলেন অভিষেক। পরদিন তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে শুরু হতে চলা স্বাস্থ্য শিবির সম্পর্কে আলোচনা হয়। তার পরই দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়ে আলোচনা হয় সংগঠন ও সরকার নিয়ে। রদবদলের যে অংশ অমীমাংসিত ছিল, তা নিয়ে খোঁজখবর করেন মমতা। অভিষেকও প্রয়োজন মতো তাঁর প্রস্তাব ব্যাখ্যা করেছেন। দলীয় সূত্রে খবর, প্রায় অধিকাংশ বিষয়েই মীমাংসার সূত্র বেরিয়ে এসেছে। তার ভিত্তিতেই এই রদবদল এখন দিন দশেকের অপেক্ষা। সংগঠনের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও বিশৃঙ্খলা নিয়েও মমতা-অভিষেক মত বিনিময় করেছেন। এ ব্যাপারে তাঁরা দু’জনেই কড়া হওয়ার পক্ষপাতী। মন্ত্রিসভার কাজকর্মও তাঁদের আলোচনায় আসে। পর দিন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পর্যালোচনা বৈঠকে মমতা যা উল্লেখ করেছেন, তাতে বৈঠকের প্রতিফলনই স্পষ্ট। তার পরেই রদবদলের সম্ভাব্য নাম নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয় তৃণমূলের অন্দরে। বৈঠকের পর দিনই ডায়মন্ড হারবারে স্বাস্থ্য শিবির উদ্বোধনে গিয়ে অভিষেক জানিয়ে দেন, রদবদল হবেই। এবং তা হবে কাজের ভিত্তিতেই। দীর্ঘ টানাপোড়েনের প্রেক্ষিতে এই বৈঠক সম্পর্কে দলের এক নেতার মন্তব্য, “আমে-দুধে মিশছে!”
আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যব্যাপী আবাস প্রকল্পকেই সব থেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন মমতা। এই প্রকল্পে স্বচ্ছতা রক্ষার বিষয়টিকে বিশেষ প্রাধান্য দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। একই সঙ্গে সরকারের ভাঁড়ার থেকে এই খাতে যে বড় বরাদ্দ হয়েছে, ভোটের বাক্সে তার লাভ তুলতে চান তাঁরা। ফলে এ নিয়ে কী ভাবে দল ও প্রশাসন কাজ করবে, তাও তাঁদের ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।