Ration Distribution Case

টাকা তোলার সিন্ডিকেটে ছিলেন হিসাবরক্ষকেরাও

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, টাকা বাকিবুরদের কাছে পৌঁছনোর পরে আসরে নামতেন হিসাবরক্ষকেরা। তাঁরা বাকিবুরদের কাছ থেকে টাকা তুলে পৌঁছে দিতেন মন্ত্রীর কাছে।

Advertisement
শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৩
Jyotipriya Mallick

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং এক ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। তল্লাশি চলেছে মন্ত্রীর আপ্ত সহায়কের বাড়ি, হিসাবরক্ষকের বাড়ি, চালকল, আটাকলে। ইডি জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত হদিস পাওয়া গিয়েছে ১৮ কোটি ২৯ লক্ষ টাকার। তবে প্রাথমিক তদন্তে যা ইঙ্গিত, তাতে অনেকেরই মত, শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির থেকেও বড় অঙ্কের টাকা মিলবে রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে। সেই খোঁজে নেমে আপাতত তদন্তকারীরা দেখতে চাইছেন, দুর্নীতির টাকা কোথা থেকে কোথায়(প্রসিডস অব ক্রাইম) পৌঁছত।

Advertisement

ইডি সূত্রের খবর, এই হিসাব মেলাতে গিয়ে তদন্তকারীরা দেখতে পাচ্ছেন, এই খাদ্য দুর্নীতিতে সক্রিয় ছিল রেশন ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর ও রেশন দোকানে মালিকদের একাংশকে নিয়ে তৈরি সিন্ডিকেট। যাতে নাম জড়াচ্ছে বেশ কিছু পেশাদার হিসাবরক্ষকেরও। তদন্তকারীদের দাবি, বাকিবুর, তাঁর শ্যালক, অভিজিৎ দাস ও অমিত দে নামে মন্ত্রীর দুই আপ্ত সহায়ককে জিজ্ঞাসাবাদের পর জ্যোতিপ্রিয়ের বিশ্বস্ত ওই হিসাবরক্ষকদের নাম উঠে আসে। ইতিমধ্যে নেতাজিনগরের বাসিন্দা এক হিসাবরক্ষকের বাড়িতে ও অফিসে তল্লাশি চালিয়ে কিছু নথিও উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি ইডি সূত্রের।

ইডির দাবি, তিন ধরনের প্রকল্পের (দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের রেশন, অন্নপূর্ণা অন্ত্যোদয় যোজনা, রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা) রেশন সামগ্রী খোলা বাজারে বিক্রি করে টাকা তুলতেন রেশন ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর ও রেশন দোকানের মালিকদের একাংশ। তাঁদের এলাকা ভাগ করে দেওয়া হত। সারা সপ্তাহ ধরে রেশন সামগ্রী বেআইনি ভাবে বাজারে বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করতেন তাঁরা। আর তাঁদের কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে সেই কালো টাকা সংগ্রহ করতেন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ চালকল ব্যবসায়ী বাকিবুর। এ রকম ‘একাধিক বাকিবুর’ ছিলেন বলেও ইডিসূত্রের দাবি।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, টাকা বাকিবুরদের কাছে পৌঁছনোর পরে আসরে নামতেন হিসাবরক্ষকেরা। তাঁরা বাকিবুরদের কাছ থেকে টাকা তুলে পৌঁছে দিতেন মন্ত্রীর কাছে। মূলত জ্যোতিপ্রিয়ই এই সমস্ত হিসাবরক্ষককে এই কাজে নিযুক্ত করেছিলেন বলেও ইডি সূত্রের দাবি। তদন্তকারীদের দাবি অনুযায়ী, কোথা থেকে কত টাকা উঠছে, এত খুঁটিনাটি হিসাব মন্ত্রীর পক্ষে রাখা সম্ভব হত না। হিসাবরক্ষকেরা তো বটেই, এই হিসাব রাখতেন বাকিবুরও।

ইডি সূত্রের দাবি অনুযায়ী, কয়েকটি ক্ষেত্রে নগদ টাকা না দিয়ে সরাসরি মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠদের নামে সম্পত্তিও কিনে দিয়েছিলেন সিন্ডিকেটের সদস্যেরা। তাঁদের হাতে তেমন একাধিক সম্পত্তির নথিও এসেছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, এখনও পর্যন্ত বাকিবুরের প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সম্পত্তির হদিস পাওয়া গিয়েছে। মন্ত্রীর লভ্যাংশের টাকা বাকিবুরের সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বাকিবুরকে সংশোধনাগারে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।

ইডি সূত্রের দাবি, দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করতে খোলা হয়েছিল বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থা এবং সেই কাজেও জ্যোতিপ্রিয়কে সাহায্য করেছেন তাঁর বিশ্বস্ত কয়েক জন হিসাবরক্ষক। দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার করার পিছনেও তাঁদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে বলে তদন্তকারীরা দাবি করছেন। তদন্তকারীদের দাবি, বাঁকুড়ায় বেনামে থাকা জ্যোতিপ্রিয়ের দু’টি সংস্থা থেকে প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং জ্যোতিপ্রিয়ের নির্দেশে এক হিসাবরক্ষকই কয়েক জন ডিরেক্টর নিয়োগ করে ওই দু’টি সংস্থা খুলেছিলেন।

তবে সমস্ত দিক থেকে ওঠাটাকা কি সরাসরি বাকিবুরের কাছেই আসত? হিসাবরক্ষকেরা সাপ্তাহিক হারে টাকা সংগ্রহ করার পরেও কিছু টাকা কি থেকে যেত বাকিবুরের কাছে? এই সব প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

এ দিকে, তদন্তকারীদের সূত্রেএ-ও অভিযোগ, জ্যোতিপ্রিয়ের স্ত্রী ও মেয়ের অ্যাকাউন্টে ২০১৬-১৭ আর্থিক বর্ষে ন’কোটির বেশি টাকা জমা পড়েছে। নোটবন্দির সময়ে কালো টাকা সাদা করার জন্য জ্যোতিপ্রিয় তাঁদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছিলেন বলেও ইডি সূত্রে দাবি। তদন্তকারীদের দাবি অনুযায়ী, ওই অ্যাকাউন্ট দু’টি নিয়ন্ত্রণ করতেন জ্যোতিপ্রিয়ের বিশ্বস্ত এক হিসাবরক্ষক। প্রসঙ্গত, জ্যোতিপ্রিয়ের স্ত্রী এবং কন্যাকে আগেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইডির তদন্তকারীরা। এবং কন্যা প্রিয়দর্শিনী বলেছেন, তিনি আগেও ইডিকে সহযোগিতা করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন।

আরও পড়ুন
Advertisement